বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলা সংবাদদাতা : এশিয়ার এক মাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মৃগেল, রুই, কাতলা, কালিকবাইশের মা-মাছ ডিম ছেড়েছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে ২১ এপ্রিল রাত ১০টা থেকে হালদা নদীর রাউজান ও হাটহাজারীর বিভিন্ন পয়েন্টে মা-মাছ ডিম ছাড়ে। প্রতিবারের মতো আমাবশ্যায় প্রকৃতির স্বাভাবিক অবস্থায় ডিম ছাড়লেও ডিমের আশায় দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষামান মৎস্যজীবীরা সকাল থেকেই ডিম সংগ্রহ করার প্রস্তুতি শুরু করেন। গত শুক্রবার সকালে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে থেকে ডিম সংগ্রহকাররীরা জানান, দিনের বেলায় পেতে রাখা জালে সামান্য কয়টি করে নমুনা ডিম পাওয়া যায়। তবে সকালে প্রচন্ড মেঘের গর্জন থাকা অবস্থায় মা মাছ ডিম না ছাড়ায় সকলেই ডিমের আশা ছেড়ে দিলেও রাতে মা-মাছ ডিম ছাড়ে। এতে অপেক্ষমান মৎস্যজীবীরা কিছু ডিম পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ওই সময় প্রাকৃতিক বজ্রপাত ঝড়ো হাওয়া না হলেও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছিল। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তারা মৎস্যজীবী জানান, নদীর আজিমার ঘাট, অঙ্কুুরি ঘোনা, হাটহাজারীর মদুনাঘাট, বাড়িঘোনা, মাছুয়াঘোনা হাট, সিপাহীরঘাট এলাকার জেলে ও মৎস্যজীবীরা চার-পাঁচ নৌকা মিলে ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এর মধ্যে কেউ এক, দেড় কেজি কিংবা কেউ দুই বালতি পর্যন্ত মা-মাছের ডিম সংগ্রহ করেছেন।
এদিকে রাউজানের কয়েক পয়েন্টের মধ্যে খলিফার ঘোনা এলাকায় তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায় মা-মাছের ডিম। হাটহাজারী উপজেলার বাড়িঘোনার মান্নান, মদুনাঘাটের সুজন মাছুয়াঘোনার আবদুল মজিদ বলেন ‘আড়াই শ’ গ্রাম থেকে আধা কেজি পর্যন্ত মাছের ডিম সংগ্রহ করেছেন তারা। আমাবশ্যার শুরুতেই বৈশাখ মাসের উপযুক্ত পরিবেশে হালদা নদীতে মা-মাছ পূর্ণাঙ্গভাবে ডিম ছাড়ল। দীর্ঘদিন ধরে হালদা নদীতে মা-মাছের দেখা পাওয়ার কথা জানিয়ে ছিলেন ডিমসংগ্রকারীরা। তাই অনেকেই হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। গতকাল রাতে ১০টার সময় জালে ডিম পাওয়ায় দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটল। প্রাকৃতিক পরিবেশ হালদায় মা-মাছ ডিম ছাড়ে। এ সময় হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার এলাকার সাধারণ মৎস্যজীবীদের শত শত সংগ্রহকারী ডিম সংগ্রহ করতে ব্যস্ত ছিল। চিরাচরিত নিয়ম হিসেবে যুগ যুগ ধরে হালদা নদীতে চৈত্র-বৈশাখ মাসে আমাবশ্যায় অথবা পূর্ণীমাতে ব্যাপক বজ্রসহ ঝড়ো বাতাস আর বৃষ্টিপাতের সময় মা-মাছ ডিম ছাড়ে। তবে গত কয়েক বছর আগে খরতাপ গরমে এবং দিনের ধবধবে আলোর মধ্যেও মা-মাছ ডিম ছেড়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল।
এ ব্যাপারে রাউজান উপজেলা সহকারী (ভারপ্রাপ্ত উপজেলা মৎস্য অফিসার) আমিনুল ইসলাম বলেন, হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহকারীরা প্রতি নৌকায় এক-দেড় বালতি করে ডিম পেয়েছে। তিন শতাধিক ডিম সংগ্রকারী নৌকায় প্রায় তিন হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছে।
সংগ্রহকারীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ
এদিকে শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে ডিম আহরণকারীদের দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর গত শুক্রবার রাতে নদীতে ভাটার টানে পানির স্রোতে অংকুরীঘোনা,কান্তার আলী হাট, নতুনহাট, সিপাইর ঘাট, রামদাশ মুন্সীরহাট, বাড়ীয়াঘোনা, মাদারী খালের মুখ, পাথাইজ্জার টেক, আমতোয়া, কাগতিয়ার চর, পোড়া কপালীর মুখ, মাছুয়াঘোনা, কাসেম নগর, মোবারক খীল, আজিমের ঘাট, দক্ষিণ গহিরা, পশ্চিম গহিরা, আবুর খীল, খলিফার ঘোনা, পশ্চিম বিনাজুরী, উরকির চর, নাপিতের ঘাট, গড়দুয়ারা ও মার্দাশা এলাকায় মৎসজীবী ও ডিম সংগ্রহকারীরা প্রথমে কিছু কিছু ডিমের নমুনা রাত ৯টায় নদীতে দেখতে পান। এ সময় ডিম আহরণকারীরা বুঝতে পারেন, মাছ ডিম ছাড়বে। জোয়ার শেষে রাতে ভাটার টানে প্রচন্ড বৃষ্টি ও নদীর ঢলের স্রোতের পানিতে মৎসজীবী ও ডিম সংগ্রহকারীরা হালদা নদীতে নৌকাসহ ডিম আহরণের সরঞ্জাম নিয়ে মা-মাছের ডিম সংগ্রহ করেন। ভাটার সময়ে রাত সাড়ে ১০টায় হালদা নদীতে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালি বাইশ ও কার্পজাতীয় মা-মাছ ব্যাপক হারে ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার আলামত দেখে আহরণকারীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ শুরু হয়। শুক্রবার সর্ত্তারঘাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ কিলোমিটার জুড়ে ডিম আহরণের উৎসব চলে। রাউজানের আজিমের ঘাট, কাসেম নগর, হাটহাজারীর আমতোয়া, নাপিতের ঘাট এলাকায় অর্ধ সহস্রাধিক নৌকা ও ডিম আহরণের মশারি জাল দিয়ে তিন হাজার কেজি সমপরিমাণ মা-মাছের ডিম সংগ্রহ করেন বলে হাটহাজারী মৎস্য অফিসার আজহারুল আলম জানান। হাটহাজারী ডিম সংগ্রহকারীরা আনুমানিক দেড় থেকে দুই হাজার কে.জি ডিম সংগ্রহ করেছেন। হাটহাজারীর মাদারীকুল এলাকার ডিম সংগ্রহকারী শাহাজান জানান, তিনি চারটি নৌকা নিয়ে ৩০ কে.জি ডিম সংগ্রহ করেছেন। মা-মাছের ডিম সংগ্রহের পর মৎসজীবী ও ডিম সংগ্রহকারীরা অধিকাংশ সনাতন পদ্ধতিতে নদীর তীরে মাটির কুয়ায় কেউ কেউ মৎস্য অধিদপ্তরের স্থাপিত হ্যাচারিতে সংগ্রহ করা ডিম থেকে রেণু ফুটানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে গত ২০১২ সালের এপ্রিল ও জুন মাসে পরপর দুইবার মা-মাছ ডিম ছেড়েছিল। গত ২০১২ সালে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে হাটহাজারী এলাকায় ছয় হাজার ৮৮ কে.জি ডিম সংগ্রহ করা হয়, রাউজানে তিনশত দুই কে.জি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল বলে মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে। উপজেলা মৎস্য অফিসার আজহারুল আলম জানান হালদা নদীতে মা-মাছের ডিম সংগ্রহ করার পর ডিম ফুটানোর জন্য সরকারি হ্যাচারিগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নদীতে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা থাকলে ডিম ছাড়ার পরিমাণ আরো বৃদ্ধি হতে পারে। ডিম আহরণকারীরা এখন নদীতে ডিম সংগ্রহ করতে সীমাহীন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। হালদা নদীর দুই তীরে ডিম আহরণের দৃশ্য দেখতে শত শত লোক ভিড় করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।