Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে

করুনা মহামারীর মধ্যেও ঝুকি নিয়ে ডিম সংগ্রহ

আসলাম পারভেজ, হাটহাজারী থেকে | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০২০, ৪:৪০ পিএম

এশিয়ার বিখ্যাত মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে গতকাল শুক্রবার (২২ মে) মা মাছেরা ডিম দিয়েছে। গত বৃহসপতি অমবশ্যা ছেড়ে দিলে শুক্রবার সকালে হাটহাজারী, রাউজান দুই উপজেলার সীমানা নির্ধারনকারী হালদা নদীর তীরবর্তী এলাকার মৎসজীবি ও ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা ও ডিম আহরনের সরঞ্জাম নিয়ে হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহের জন্য নেমে পড়ে । শুক্রবার সকার ৯ টা থেকে মা মাছ ডিম ছাড়লেও বহু ডিম সংগ্রহকারী তাহা জানে না। ডিম আহরনকারীদের দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর গত শুক্রবার সকার ৯টায় নদীতে ভাটা শেষে জোয়ারের শুরুতে নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। তিন দিন ধরে ডিম সংগ্রহকারীরা হালদার পাড়ে এই মহামারীর মধ্যেও রাত দিন অপেক্ষায় ছিল, আজকের এই দিনের আশায়। পানির ¯্রােতে অংকুরীঘোনা,কান্তার আলী হাট, নতুনহাট, সিপাইর ঘাট, রামদাশ মুন্সীরহাট,বাড়ীয়াঘোনা,মাদারী খালের মুখ,পাথাইজ্জার টেক,আমতোয়া,কাগতিয়ার চর, পোড়া কপালীর মুখ,মাছুয়াঘোনা,কাসেম নগর, মোবারক খীল, আজিমের ঘাট, দক্ষিন গহিরা পশ্চিম গহিরা, আবুর খীল, খলিফার ঘোনা, পশ্চিম বিনাজুরী, উরকির চর, নাপিতের ঘাট, গড়দুয়ারা, মার্দাশা এলাকায় মৎসজীবি ও ডিম সংগ্রহকারীরা বৃহস্পতিবার মাছের ডিমের নমুনা দেখতে পায়। এ সময় ডিম আহরনকারীরা বুঝতে পারে মাছে ডিম ছাড়বে। ভাটার শেষে জোয়ারের শুরুতে বৃষ্টি পানি ও পাহাড়ী ঢলের ¯্রােত এসে নদীর গোলা হলে ডিম সংগ্রহকারীরা হালদা নদীতে নৌকাসহ ডিম আহরনের সরঞ্জাম নিয়ে মা মাছের ডিম সংগ্রহ করেন। হালদা নদীতে রুই,কাতলা,মৃগেল,কালি বাইশ ও কার্প জাতীয় মা মাছ ব্যাপক হারে ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার আলামত দেখে আহরনকারীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ শুরু হয়। শুক্রবার সর্ত্তারঘাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ কিলোমিটার জুড়ে ডিম আহরনের উৎসব চলে। এই মৌসমে সবচেয়ে বেশি ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছে, ডিম সংগ্রহকারীরা। রাউজানের আজিমের ঘাট, কাসেম নগর, হাটহাজারীর আমতোয়া. নাপিতের ঘাট এলাকায় অর্ধ সহস্রাধিক নৌকা ও ডিম আহরনের মশারী জাল দিয়ে তিন হাজার কেজি সমপরিমাণ মা মাছের ডিম সংগ্রহ করেন বলে হাটহাজারী মৎস্য অফিসার নাজমুল হক জানান। হাটহাজারী ডিম সংগ্রহকারীরা আনুমানিক দেড় থেকে দুই হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করেছে। হাটহাজারীর মাদারী কুল এলাকার ডিম সংগ্রহকারী শাহ আব্দুল্লাহ জানান, সে একটি নৌকা নিয়ে বিশ কেজী ডিম সংগ্রহ করেছে । মা মাছের ডিম সংগ্রহের পর ডিম সংগ্রহকারীরা অধিকাংশ সনাতন পদ্বতিতে নদীর তীরে মাটির কুয়ায় কেউ কেউ মৎস্য অধিদপ্তরের স্থাপিত হ্যাচারীতে সংগ্রহ করা ডিম থেকে রেনু ফুটানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে এবার ডিমের পরিমাণ অতিতের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। উপজেলা মৎস্য অফিসার নাজমুল হক জানান হালদা নদীতে মা মাছের ডিম সংগ্রহ করার পর ডিম ফুটানোর জন্য সরকারী হ্যাচারীগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নদীতে পাহাড়ী ঢলের তীব্রতা থাকলে ডিম ছাড়ার পরিমাণ আরো বৃদ্ধি হতে পারে। ডিম আহরণকারীরা এখন নদীতে ডিম সংগ্রহ করতে সীমাহীন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। হালদা নদীর দুই তীরে ডিম আহরণের দৃশ্য দেখতে শত শত লোক ভীড় করছে। ডিম ছাড়ার সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারও নিরাপদে ডিম আহরণকারী নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করেছে। বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিকে এ ডিমের পোনা দ্রুত বর্ধনশীল বলে বর্তমানে ডিমের চাহিদা বেশী হবে। কৃত্রিম রেনু পোনার ব্যাপারে সজাগ থাকার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিজ্ঞ মহল। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নদীতে ¯্রােতের তীব্রতা অব্যাহত ছিল। নদীতে যা মা মাছের ডিম ছাড়ার জন্য উপযোগী বলে মনে করছেন মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা। ডিম সংগ্রহকারীদের নিরপত্তার জন্য প্রতিটি হ্যাচারীতে আনসার মোতায়েন করা হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ