Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভারতের উপর নির্ভরশীলতা

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বাংলাদেশের ভারত-নির্ভরশীলতা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতও বাংলাদেশের এ খাতকে তার বাণিজ্যের অন্যতম লক্ষ্য করেছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভারতের উপর এই নির্ভরশীলতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভয়, এতে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত হুমকির মুখে পড়বে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে এ খাত যেমন মুখ থুবড়ে পড়বে, তেমনি এর উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। গত এক বছরে ভারতের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যে হারে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের এ খাতটি অকার্যকর হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। এই হার দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের শতকরা ৪২ ভাগ। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শতকরা ২৫ ভাগ প্রাকৃতিক গ্যাস ও ১৮ ভাগ ডিজেল ভারত থেকে আমদানি করা হবে। এ পরিসংখ্যান থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বাংলাদেশের জ্বালানি খাতটি ধীরে ধীরে ভারতের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বেশিরভাগ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়াই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এতে তারা তাদের ইচ্ছা মতো উচ্চমূল্য নির্ধারণ করতে পারবে। অর্থাৎ ভারতের খেয়াল-খুশির উপর দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত পরিচালিত হবে। এ ধরনের নির্ভরশীলতা আত্মঘাতী বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।
ভারতের স্বার্থে বাংলাদেশ সরকার হেন কোনো কাজ নেই যা করেনি। সে যেভাবে যা চেয়েছে, সবকিছুই দেয়া হয়েছে। বিনিময়ে বাংলাদেশের ন্যূনতম চাহিদাটুকু ভারত পূরণ করেনি। আমরা যদি শুধু দুই দেশের বাণিজ্যের খাতটি পর্যালোচনা করি, দেখা যাবে সেখানে বিরাট ঘাটতি এবং ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। ভারত একচেটিয়াভাবে তার পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি করতে পারলেও বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে সে উচ্চ হারে শুল্ক নির্ধারণ করে বাধা সৃষ্টি করে রেখেছে। এ ছাড়া অশুল্ক বাধাও আছে। এখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতটি দখল করার জন্য যত ধরনের পন্থা অবলম্বন করার তা করে চলেছে। বলা বাহুল্য, ভারতের প্রতি সরকারের অতি উদারতা এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উৎপাদন ও সক্ষমতার বিষয়টি অস্বীকার করা যাবে না। তাই বলে আমদানির নামে নির্দিষ্ট কোনো একটি দেশের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হওয়া কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশ নেপাল ও ভুটান থেকে ২ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করলেও ভারত তাতে বাদ সেধেছে। সে তার ভূমির উপর দিয়ে এ বিদ্যুৎ আনতে দেবে না। আনতে হলে তার দেশের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আনতে হবে। ভারতের এ আচরণ থেকেই স্পষ্ট হয়, সে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে তার উপর নির্ভরশীল করে তুলতে চায়। তার অন্যতম প্রধান একটি বাজারে পরিণত করতে চায়। এ খাতটিকে সে তার হাতের মুঠোয় রাখতে চায়। তাকে এ সুযোগ আমাদের সরকারই করে দিচ্ছে। অথচ সরকার দাবী করছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছে। চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে। বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য রেন্টাল-কুইক রেন্টালের মতো ব্যয়বহুল বহু প্রকল্প রয়েছে। এর প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতির কথা ইতোমধ্যে সকলেরই জানা। সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ডের দাবিও করছে। তাহলে বিদ্যুৎ আমদানির প্রয়োজনীয়তা কেন দেখা দিল? তাও একচেটিয়াভাবে ভারত থেকে আমদানির মাধ্যমে? তার অর্থ কি এই, সরকারের তরফ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে রেকর্ডের কথা বলা হচ্ছে, তা কেবল কথার কথা? এর মধ্যে শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে?  
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে একটি দেশের ওপর নির্ভরশীলতা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এতে ঐ দেশটির হাতে জিম্মি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ, কূটনৈতিকভাবেই হোক আর প্রভাব খাটানোর জন্যই হোক, দেশটি যদি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তবে অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়া ছাড়া কোনো গতি থাকবে না। আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, ভারত নেপালে খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় দেশটি কী ভয়াবহ সংকটের মধ্যে পড়েছিল। নেপালের এ দশা হয়েছিল একতরফাভাবে খাদ্যে ও জ্বালানিতে ভারতের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায়। ভারতের সাথে আমাদের যে বন্ধুত্বের কথা বলা হয়, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই মনে করে তা একতরফা। এ ধরনের সম্পর্কের কারণে ভারত যদি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সাথে নেপালের মতো আচরণ করে, তবে কী উপায় হবে! সরকারকে এ বিষয়টি ভাবতে হবে। ভাবতে হবে, ভারত যদি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধও করে দেয়, তা যেন আমরা সামাল দিতে পারি। এজন্য আমাদের সরকারি ও বেসরকারি যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোকে সবসময় সচল ও সক্ষম রাখতে হবে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আরও বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিদেশের ওপর নির্ভরশীলতা শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। দুঃখের বিষয়, স্বয়ং পিডিবি বলছে গ্যাস সংকটের কারণে গ্যাসভিত্তিক অনেকগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। অনেকগুলো থেকে সক্ষমতার চেয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বুঝতে বাকি থাকে না, এসব জটিলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টিকে জায়েজ করার জন্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন