Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হালদা নিয়ে ইতিবাচক উদ্যোগ

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অবশেষে হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন অঞ্চলকে পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা বা ইসিএ (ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া) ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। গতকাল একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, হালদা অঞ্চলের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সুরক্ষায় বিশেষত: মাছের স্বাভাবিক, নিরাপদ ও অবাধ বিচরণ বিঘিœত হয় এমন সব ধরনের কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর। দেশের মৎস্য সম্পদ ও জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা হালদা নদীর পরিবেশগত সুরক্ষায় সরকারের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। গত কয়েক বছর ধরে হালদা নদী এলাকার নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র থেকে স্বাভাবিক বা প্রত্যাশিত পরিমাণ মাছের ডিম ও রেণুপোনা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। দেশের এবং এশিয়ার অন্যতম বড় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজণন ক্ষেত্র এটি। সাম্প্রতিক কয়েক দশকে হালদার উজানে নানাবিধ শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠা এবং অধিক সংখ্যক বাণিজ্যিক নৌযান চলাচলের কারণে বৈচিত্র্যময় এই প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্রের অনুকূল পরিবেশ বিঘিœত হওয়া এবং পানির স্বাভাবিক গুণাগুণ বিনষ্ট হওয়ায় হালদা থেকে রেণুপোনা আহরণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
দেশের সব নদ-নদী, খাল, হাওর-বাঁওড় ও জলাভূমির উপর একশ্রেণীর দখলবাজের দস্যুতা ও অপরিকল্পিত- অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়ন ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিরূপ প্রভাব ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এদিকে উজানে ভারতে বাঁধ নির্মাণ ও পানি প্রত্যাহারের খড়গ নেমে এসেছে বাংলাদেশের নদ-নদীতে, অন্যদিকে দেশের ভূমিদস্যুতা এবং অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও উন্নয়ন কর্মকান্ড সামগ্রিক পরিবেশগত নিরাপত্তার উপর আত্মঘাতী হয়ে উঠেছে। সরকার, নাগরিক সমাজসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনেক অবহেলা ও নির্লিপ্ততা প্রদর্শন করেছে। এমনিতেই ভারতের পানি আগ্রাসনে দেশের সবগুলো বড় নদী নাব্যতা সংকটে পড়েছে এবং শত শত শাখানদী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গাসহ রাজধানী শহরের চারপাশের সবগুলো নদী, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীসহ দেশের সবগুলো শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী মারাত্মক দূষণের করাল গ্রাসে পতিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী হালদার মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রটিও নির্বিচার মৎস্য নিধন, শিল্প-কারখানার রাসায়নিক দূষণ, যান্ত্রিক নৌ পরিবহন, নদী থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালি ও পাথর উত্তোলনের কারণে তার বিরল ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। হালদার প্রাকৃতিক প্রাচুর্য পরিবেশগত ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারকে সম্ভাব্য সব উপায় অবলম্বন করতে হবে।
শুধু হালদা নয়, বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলি বা সুন্দরবন এখন পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন নয়। মূলতও সারাদেশের সব নদনদী, হাওর, জলাভূমি, পাহাড় এবং সংরক্ষিত বনভূমি এখন পরিবেশগত হুমকি ও অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। উজানের পানি প্রত্যাহারের কারণে সুজলা-সুফলা নদী অববাহিকা অঞ্চল এখন মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। আবার অসময়ে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ফসল তলিয়ে গিয়ে লাখ লাখ কৃষক পরিবারকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে চরমভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। অনেক কষ্টে, অনেক খরচে ফসল ফলিয়ে বাম্পার উৎপাদনের কাছাকাছি এসে ফসল ঘরে তোলার আগে উজানের অকস্মাৎ বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার এই বাস্তবতা মেনে নেয়া যায় না। সুরমা-কুশিয়ারা উপত্যকায় সাংবাৎসরিক পাহাড়ি ঢলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির সাথে আমরা পরিচিত। তবে এবারই প্রথম এ অঞ্চলের হাওরগুলোতে মাছের মড়ক দেখা গেল। শুধু মাছই নয়, কাছিম, কাঁকড়াসহ অনেক জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদও উজানের দূষিত পানিতে বিষাক্ত হয়ে গেছে। এমনকি হাওরের হাঁসসহ নানাজাতের পাখিও মরে ভাসতে দেখা যাচ্ছে এখন। হাওরের মাছ, জলজ প্রাণীসম্পদ ও পাখির মড়কের জন্য কেউ কেউ তলিয়ে যাওয়া ধানের পচন থেকে সৃষ্ট গ্যাসকে দায়ী করলেও অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে তাদের এই দাবি ধোপে টেকে না। তবে গতকাল ঢাকার একটি ইংরেজী দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে টাঙ্গুয়ার হাওরের উজানে সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় ভারতের মেঘালয়ে একটি উন্মুক্ত ইউরেনিয়াম খনির কারণে এই দূষণ ঘটে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এত বড় প্রাকৃতিক ডিজঅ্যাস্টার ঘটে যাওয়ার পরও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও দফতরগুলো হাওরের দূষণের কারণ উৎঘাটনে এখনো কোন তথ্য দেশের মানুষকে জানাতে পারেনি। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধানগাছের গ্যাস বা মেঘালয়ের উন্মুক্ত ইউরেনিয়াম খনি থেকে নেমে আসা ইউরেনিয়াম দূষণসহ সম্ভাব্য সব কারণ খুঁজে বের করা দরকার। নদনদী ও পরিবেশগত সংকটকে শুধুমাত্র হালদা নদী বা সুন্দরবনে সীমাবদ্ধ রাখার সুযোগ নেই। সীমান্তবর্তী এবং উজান থেকে আসা সব নদীর পানিপ্রবাহ এখন দেশের ১৬ কোটি মানুষকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিতে শুরু করেছে। এ বিষয়ে সামগ্রিক ও সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন