পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : সিটিং সার্ভিস বন্ধের জেরে অঘোষিত ধর্মঘট পালন করছে বাস মালিক-শ্রমিকরা। এতে করে পরিবহন যান সঙ্কটে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। সিটিং সার্ভিস বন্ধের দ্বিতীয় দিনে গতকাল সোমবার নগরীতে বাস চলাচল করেছে খুবই কম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও যাত্রীরা বাসের দেখা পায়নি। বিকল্প ব্যবস্থায় গুনতে হয়েছে মোটা অঙ্ক। হাতেগোনা যেসব বাস চলেছে সেগুলোতেও ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সাথে পরিবহন শ্রমিকদের বাগি¦তÐা হয়েছে।
কোথাও কোথাও মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। যাত্রীদের চরম ভোগান্তি ও নৈরাজ্যের জন্য কয়েকজন বাস মালিক সরকার সমর্থক মালিক সমিতির নেতাদের দায়ী করেছেন। নেতাদের দূরদর্শিতার অভাবেই এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে কয়েকজন বাস মালিক অভিযোগ করেছেন। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধের জন্য আমরা শুদ্ধি অভিযানে নেমেছি। এটাকে আর কোনোভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, প্রয়োজনে সিটিং সার্ভিসের রুট পারমিট নিয়ে নতুন করে বাস রাজধানীতে নামার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু এখন যেগুলো চলছে সেগুলোতে তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নিতে হবে। বাস মালিকরা জানান, তাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ধর্মঘট ডাকা হয়নি। চালকরা গাড়ি না চালানোর কারণে পরিবহন যান সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিআরটিএর অভিযানের কারণেও বেশিরভাগ বাস রাস্তায় নামেনি বলে স্বীকার করেছেন মালিক সমিতির এক নেতা।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধে চলা অভিযানের সময় বাস বন্ধ রাখলে রুট পারমিট বাতিল করে দেয়া হবে। সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে বিআরটিএর অভিযান পরিদর্শনে এসে তিনি আরো বলেন, অভিযানের সময় যেসব মালিক রাস্তায় বাস নামাচ্ছেন না, তাদের তালিকা হচ্ছে। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিটিং সার্ভিস বন্ধের দ্বিতীয় দিনে গতকাল গণপরিবহনের অভাবে লোকাল সার্ভিসের সুফল পাওয়ার পরিবর্তে নাকাল হচ্ছেন নগরবাসী। সকাল থেকেই যেন অঘোষিত ধর্মঘটে নেমেছিলেন মালিক-শ্রমিকরা। রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কগুলোতে গণপরিবহনের দেখা মেলেনি। অফিসগামী যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও থেকেও গণপরিবহনের দেখা পাননি। বাধ্য হয়ে অনেকে বিকল্প উপায়ে যাত্রা করেছেন। তাতে গুনতে হয়েছে মোটা অঙ্ক। যাদের সেই সামর্থ্য নেই তারা প্রখর রৌদ্রের মধ্যে হেঁটে রওনা করেছেন। ফার্মগেট থেকে শাহবাগ, শাহবাগ থেকে মতিঝিল, মতিঝিল থেকে যাত্রাবাড়ী, সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে মোহাম্মদপুরের পথে এরকম হাঁটা বহু যাত্রী চোখে পড়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, আগের মতো অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য যাত্রীদের জিম্মি করতেই বাস বন্ধ রাখা হয়েছে।
বাস মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সকালে মিরপুর চিড়িয়াখানা রুটের বিভিন্ন পরিবহনের শতাধিক বাস বন্ধ রেখে দাঁড় করিয়ে রাখা ছিল। মিরপুর রুটেরও জাবালে নূর, জাবালে তুর, আকিক, তেঁতুলিয়া, রব রব, অ্যাকটিভ, অছিম, বসুমতি, নূরে মক্কা, প্রজাপতিসহ অধিকাংশ পরিবহনের অসংখ্য বাস বিভিন্ন স্থানে বন্ধ করে রাখা ছিল। এসব বাসের চালক-সহকারীরা আয়েশি সময় কাটিয়েছে। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আব্দুল্লাহপুর যাওয়ার জন্য ৩৫ মিনিট ধরে বাসের অপেক্ষায় থাকা এক শিক্ষার্থী বলেন, অনেকক্ষণ পরপর দুই-একটা বাস এলে উঠতে পারিনি। সিটিং থাকার সময় মিরপুর ১০ নম্বর থেকে এয়ারপোর্টে যেতে ২০ টাকা ভাড়া দিতে হতো। এখন ভাড়া একটু কম লাগে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারছে না বলেই বাস বন্ধ করা হয়েছে। এসব চালককে আইনের আওতায় আনা দরকার।
গতকালও বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, সিটিং সার্ভিস লোকাল হলেও বাসে ভাড়া নেয়া হচ্ছে আগের মতোই। বেশিরভাগ বাসে ভাড়ার তালিকা নেই। এসব নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাস শ্রমিকদের চলছে তীব্র বাগি¦তÐা। এতে রাজধানীকে সিটিং সার্ভিসমুক্ত করতে সরকার ও মালিক সমিতির চেষ্টার প্রথম দিনের মতো গতকাল দ্বিতীয় দিনেও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ আর ভোগান্তির সীমা ছিল না। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সকাল ৯টার দিকে যাত্রীদের প্রচÐ চাপ থাকলেও পরিবহন ছিল অনেক কম। অফিসগামীদের অনেকটা যুদ্ধ করেই গাড়িতে উঠতে হয়েছে। অনেকেই আবার গাড়িতে উঠতে না পারায় যাত্রীদের অধিকাংশই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হেঁটে রওনা করতে বাধ্য হন। কারওয়ান বাজার মোড়, আগারগাঁও, ফার্মগেট, শাহবাগ ও রমনা এলাকায় বাসে থাকা এবং অপেক্ষমাণ বিভিন্ন যাত্রীদের অভিযোগ, সিটিং সার্ভিস বন্ধ হলেও ‘চিটিং’ বন্ধ হয়নি। বাসগুলো নতুন নিয়মের তোয়াক্কা না করে আগের মতোই ভাড়া আদায় করছে যাত্রীদের কাছ থেকে। যাত্রীদের মতে, সিটিং সার্ভিস বন্ধ হলেও বাসগুলোর ভাড়া কমেনি। বরং লোকাল বাসের মতো যেখানে সেখানে যাত্রী তুলছে। এসব বাসে দাঁড়ানোরও তিল পরিমাণ জায়গা ছিল না। আর সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা থাকলেও বাসের কর্মচারীরা অনেক ক্ষেত্রেই এর চেয়ে বেশি আদায় করে। ওয়েলকাম পরিবহনের গাড়ির এক সুপারভাইজারকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমাকে বলে লাভ নেই, মালিকের কাছে বলেন। কোম্পানি যেভাবে বলেছে, সেভাবেই আমরা ভাড়া আদায় করছি। সাভার থেকে যাত্রাবাড়ী রোডে চলাচলকারী স্বজন, আজিমপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর চলাচলকারী অগ্রযাত্রা, যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুর চলাচলকারী লাব্বাইক, খাজাবাবাসহ অন্যান্য গাড়িতেও একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে।
অন্যদিকে, বাসপ্রতি জমা দেয়া নিয়ে লিজে দেয়া বাসের চালক ও মালিকপক্ষের দ্ব›দ্ব দেখা দিয়েছে বলেও সূত্রগুলো জানায়। পরিবহন চালকদের দাবি, বাস লোকাল হওয়ায় আয় কমলেও মালিকপক্ষকে আগের হারেই প্রতিদিন টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। দিশারী পরিবহনের একটি বাসের চালক কবির বলেন, সিটিং থাকার সময় কোম্পানিকে প্রতিদিন যে টাকা দেয়া লাগত, এখনও তাই দিতে হচ্ছে। কোম্পানি টাকা কম নেয় না। অথচ যাত্রীরা যে ভাড়া দিচ্ছেন, তাতে জমার টাকা উঠছে না। বাস চালকদের এ অভিযোগ নাকচ করছেন পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা। দিশারী পরিবহনের পরিচালক আজমুল হুদা মাসুদ বলেন, এসব কথা যেসব চালক বলছেন, তারা মিথ্যা কথা বলছেন। বাস লোকাল হওয়ার পর থেকে চালকদের আমরা অনেক ছাড় দিচ্ছি। আগের চেয়ে দৈনিক সাতশ’ থেকে আটশ’ টাকা করে কম নেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, সিটিং সার্ভিসে হাজার হাজার মানুষ মাঝপথে বাসে উঠতে পারত না। একই সাথে সিটিংয়ের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হতো। এই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধের জন্যই আমরা সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছি। এটাকে অনেকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি হয়তো। সে জন্য নানা কথা বলছে। তবে এটা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকবে। আশা করছি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে। তিনি দাবি করেন, প্রথম দিনের তুলনায় গতকাল দ্বিতীয় দিনে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।