Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহৎ উদ্যোগে সমন্বয়হীনতা

নগর পরিবহন ১ সেপ্টেম্বর থেকে আরো তিন রুটে চলাচল যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় হলেও বিআরটিসি’র আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ বেসরকারি গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকরা নানা প্রতিবন্ধকতার অপচেষ্টায়

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ইতোমধ্যে নগর পরিবহন চালু করা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের নেতৃত্বে এই পরিবহনটি নগরবাসীর আস্থা অর্জন করেছে। পরিবহণ শ্রমিক, মালিক এবং পুলিশের চাঁদাবাজি নেই। ফলে কম ভাড়ায় যাত্রীরা যাতায়াত করছেন। এই সার্ভিসটি টিকিয়ে রাখার জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তাদের এই প্রচেষ্টাকে সফল করতে সরকারি পরিবহন সংস্থা বাংলাদশে সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। সম্ভাবনাময় নগর পরিবহণকে সহায়তা করছে না। ফলে বেসরকারি গণপরিবহন মালিক সংগঠনের পক্ষগুলো এই পরিবহণে নানান বাঁধার সৃষ্টি করছে।

সরকারি সংস্থা বিআরটিসি শুধু ঢাকা নগর পরিবহনের পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ৩০টি বাস দিয়েই দায় সেরেছে। সরকারি সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে এই পরিবহনটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করলে নগরবাসীর যানজট ও পরিবহন নিয়ে নানা নৈরাজ্য থেকে অনেকটা মুক্তি পেতে পারতো বলে মনে করেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়াও ঢাকা নগর পরিবহন চলাচলকারী রুট শুধু এই সার্ভিসটি চলাচলর করছে না। এই রুটে কাঁচপুর থেকে ঘাটারচর পর্যন্ত বেসরকারি আরও অন্য সার্ভিস চালু রয়েছে। বিভিন্ন নামে এই রুটে অনেক বাস সার্ভিস চালু থাকার কারণে নগর পরিবহন চলাচলে সমস্যা হয়। এই রুটে অন্য বাসের বেপরোয়া চলাচল ও নগর পরিবহনের কাউন্টারের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থেকে এই পরিবহনের বাসে যাত্রী উঠতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণেও সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ যাত্রীদের।

জানা যায়, বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির প্রধান উদ্দেশ্য রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা নগর পরিবহন চালু হয় কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত। সবুজ রঙের ৫০টি বাস পরীক্ষামূলকভাবে ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর-মতিঝিল হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত নিয়মিত চলাচল করছে। উদ্বোধনের পর থেকে ঢাকা নগর পরিবহনটিকে আগ্রহের সাথে গ্রহণ করেছেন রাজধানীবাসী। এ পরিবহনটি নিয়মিত চালু থাকলে ঢাকা শহরের যাত্রীদের বাস চলাচলের দুর্ভোগ অনেকটা কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ২৬ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা নগর পরিবহনের এ বাস রুট পাইলটিং-এর উদ্বোধন করেন। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ঢাকার দুই মেয়র বাসে চড়ে যাত্রার মাধ্যমে ঢাকা নগর পরিবহন চলাচলের উদ্বোধন করেন।

ঢাকা নগর পরিবহন চালুর প্রথম দিন থেকেই ই-টিকিটিং সিস্টেম চালু করা হয়। ই-টিকিটিং সিস্টেমেই যাত্রীরা বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে টিকিট কিনছেন। টিকিট নিয়ে কোন ধরনের হয়রানি নেই। কিলোমিটারপ্রতি দুই টাকা ২০ পয়সা ভাড়া দিয়েই বাসে উঠছেন যাত্রীরা। ইতোমধ্যে ট্রান্সসিলভার কিছু বাস যান্ত্রিক ত্রুটির কারণ দেখিয়ে এই সার্ভিস থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এতে বাস কমে যাওয়ার কারণে এই সার্ভিসে চলাচলকারী যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। তারা শীঘ্রই বাস বৃদ্ধির দাবিও জানিয়েছেন।
ঢাকা নগর পরিবহন সেবা ব্যর্থ করতে একটি মহল তৎপর। অভিযোগ করলেন, ঢাকার দুই মেয়র। কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। সকল অপতৎপরতা ব্যর্থ করে দিয়ে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আরও তিনটি নতুন রুটে এই সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, নতুন করে চালু হতে যাওয়া ২২ নম্বর রুটটি হলো ঘাটারচর থেকে বছিলা, মোহাম্মদপুর টাউন হল, আসাদগেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, কাকরাইল, ফকিরাপুল, মতিঝিল, টিকাটুলি, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কোনাপাড়া হয়ে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত।

অন্যদিকে, ২৩ নম্বর রুট হচ্ছে ঘাটারচর থেকে বছিলা, মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ, শ্যামলী, কলেজ গেট, আসাদগেট, কলাবাগান, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা, কমলাপুর, ধলপুর, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড হয়ে চিটাগাং রোড পর্যন্ত। পাশাপাশি ২৬ নম্বর রুট হলো ঘাটারচর থেকে বছিলা, মোহাম্মদপুর টাউন হল, আসাদগেট, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাব, নিউমার্কেট, আজিমপুর, পলাশী মোড়, চাঁনখারপুল, পোস্তগোলা হয়ে কদমতলী পর্যন্ত।

বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় আগামী ১ সেপ্টেম্বর হতে নগরীর ২২, ২৩ ও ২৬ নম্বর যাত্রাপথে ঢাকা নগর পরিবহনের আওতায় ২০০ নতুন বাস চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। গতকাল মঙ্গলবার নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২৩তম সভা শেষে সাংবাদিকদেরকে সাথে তিনি এই ঘোষণা দেন।

মেয়র তাপস বলেন, ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ, বিআরটিএ এবং ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে আমরা আগামী ১৭ জুলাই হতে ২৮ জুলাই পর্যন্ত যৌথ অভিযান করব। এই অবৈধ ১৬৪৬টি বাস, যারা বিভিন্নভাবে লুকিয়ে বিভিন্ন যাত্রাপথে চলে, এদেরকে ঢাকা শহরের যেখানে পাই সেখানেই ব্যবস্থা নেবো। শুধু দিনের বেলায়ই নয়, প্রয়োজনে রাতেও অভিযান পরিচালনা করব। তারা টার্মিনালে রাখলে টার্মিনালে থেকে খুঁজে বের করব, রাস্তায় রাখলে রাস্তার মধ্যে খুঁজে বের করবো। কাউন্টার এর পাশে রাখলে কাউন্টারের পাশ থেকে আমরা খুঁজে বের করবো। আমরা চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে এই ১৬৪৬টি বাস জব্দ করব, ধ্বংস করব।

তিনি বলেন, ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটে এখন থেকে নগর পরিবহন ছাড়া অন্য কোনো পরিবহন চলতে দেয়া হবে না। তাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন আরও তিনটি রুটে নগর পরিবহন চালু হচ্ছে। ২২, ২৩ এবং ২৬ নম্বর। এই রুটগুলোতে নতুন বাস দিয়ে যাত্রা শুরু হবে। এই সময়ের মধ্যে বাস-বে, যাত্রী ছাউনিসহ সব অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। নগর পরিবহনের আওতায় যেসব বাস চলবে তারা আবেদন করেছে। এসব রুটে বাসগুলো চলাচলের জন্য ২২ নম্বর রুটে ৫০টি এবং ২৩ নম্বর রুটে ১০০ আবেদন পড়েছে। অন্যদিকে ২৬ নম্বর রুটে বিআরটিসির নতুন ৫০টি ডাবল ডেকার বাস পরিচালনা করা হবে। সব মিলিয়ে নতুন এই তিন রুটে সব নতুন বাস দিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ঢাকা নগর পরিবহন ঢাকাবাসীর কাছে সমাদৃত হয়েছে। একটি দুটি বাস কমলো বা বাড়লো সেটা কিন্তু সাফল্যের নির্ণায়ক নয়। সফলতার বিষয় হচ্ছে এই যাত্রাপথটি এখনো চালু রয়েছে। তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ট্রান্স সিলভা তাদের বাসগুলো সরিয়ে নিয়েছে। তারা নতুন আরও ২০টি বাস চালু করার আবেদন করেছিল কিন্তু আমরা তাদেরকে নতুন করে আর অনুমোদন দিব না। এছাড়া জাহান এন্টারপ্রাইজ ২০টি বাস চালুর আবেদন করেছিল এবং সেগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। সুতারাং সেই বাসগুলো এই যাত্রাপথে আমরা চালু করব।
উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ২১ নম্বর যাত্রাপথ-ঘাটারচর হতে কাঁচপুরে-ঢাকা নগর পরিবহন ছাড়া অন্য কোনো বাস চলবে না। এই যাত্রাপথে শুধু ঢাকা নগর পরিবহনই চলবে।
বাস যাত্রী খোরশেদ আলম বলেন, ঢাকা নগর পরিবহন চালু হওয়ার প্রথম দিকে ভালো সার্ভিস পেয়েছি। কিন্তু এখন বাস কমে যাওয়ার কারণে সমস্যা হচ্ছে। ঠিক সময়ে বাস আসছে না। আর বাস অনেক দেড়ি করে আসার কারণে ভিড় হচ্ছে। বিআরটিসি বাসগুলো ডাবল ডেকার হওয়ার কারণে উপরে ও নিচে যাত্রীরা উঠেন। এই বাসগুলোতে হেলপার নাথাকার কারণেও উঠা-নামার সময় সমস্যা হয়।

শাম্মী অখতার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বাসে চলাচল করতে আমাদের সবচেয়ে বড় যে সমস্যা তা হলো ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডা। কিন্তু এই পরিবহনে ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডা নেই। স্টুডেন্ট পরিচয় দেখাতেই হাফ ভাড়ার টিকিট দেয়। এভাবে যদি তাদের সার্ভিস সবসময় এমন থাকে তাহলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হবে। সব শিক্ষার্থীরাই নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবে।
ঢাকা নগর পরিবহনের একটি বাসের চালক জানান, যাত্রীদের সাথে চালক ও হেলপারের কোন ধরনের ঝগড়া নেই। ভাড়া নিয়েও কোন কথা নেই। আবার সিট নিয়েও কোন কথা নেই। তবে বেতন ও খাওয়ার টাকা নিয়ে এখনো পুরোপুরি সমস্যার সমাধান হয়নি।

অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান মিয়া, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার, ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আজমল উদ্দিন আহমেদসহ কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নগর পরিবহন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ