Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কোরিয়া উপদ্বীপে বিমানবাহী মার্কিন রণতরী মোতায়েনের মার্কিন ঘোষণা এবং উত্তর কোরিয়ার ষষ্ঠ পারমাণবিক পরীক্ষার প্রস্তুতির প্রেক্ষিতে যে কোনো মুহূর্তে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠতে পারে বলে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিলে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরপর মার্কিন বিমানবাহী রণতরী মোতায়েনের ঘোষণা এবং কোরিয়া উপদ্বীপ অভিমুখে ভিনসন স্ট্রাইক গ্রুপের যাত্রার ঘটনায় উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে। উত্তর কোরিয়াকে ষষ্ঠ পারমাণবিক পরীক্ষা থেকে নিরস্ত করা না গেলে সে যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করে ফেলতে পারে, এই আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। এই উদ্বেগ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে এবং কোরিয়া উপদ্বীপে বিমানবাহী রণতরী মোতায়েনের পদক্ষেপ নিয়েছে। ওদিকে উত্তর কোরিয়ার তরফে বলা হয়েছে, মার্কিন হুমকি মোকাবিলায় দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে দ্বিধা করবে না। উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান সং রিয়ল বলেছেন, আমাদের শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা রয়েছে। আর মার্কিন হামলার মুখে আমরা নিশ্চিতভাবেই সে অস্ত্র হাতে নিয়ে বসে থাকব না। মার্কিন বাহিনী যেভাবে আক্রমণ করবে আমরা তার সমুচিত জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত। উত্তর কোরিয়া মানসম্পন্ন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে সরে আসবে না।
উত্তর কোরিয়ার এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, দেশটি মার্কিন আক্রমণের মুখে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পিছপা হবে না, সে ক্ষেত্রে আশঙ্কিত যুদ্ধ পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত হবে। বলা বাহুল্য, পারমাণবিক যুদ্ধের যদি সূচনা হয় তাহলে সেটা হবে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও ধ্বংসাত্মক। আর এ ধরনের যুদ্ধে দেশ দু’টিই ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে না, গোটা বিশ্বও এই ক্ষতির শিকার হবে। বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ ও শঙ্কা বিস্তৃত হওয়ার এটাই মূল কারণ। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পরিণতি কি হতে পারে, জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার ঘটনা থেকেই তা সম্যক উপলব্ধি করা যায়। জাপানের ওই দুই জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে তার ক্ষমতার চেয়ে এখনকার পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষমতা অনেক গুণ বেশি। এখন কোথাও পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হলে তা আরো ব্যাপক এলাকা ধ্বংস করে দেবে এবং আরো অধিক সংখ্যক মানুষ স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে হতাহত ও ক্ষতির শিকার হবে। এই আশঙ্কার প্রেক্ষিতে বিশ্ব পারমাণবিক যুদ্ধের কবলে পতিত হোক তা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কোনো মানুষই কামনা করে না। পরিণতি কী হতে পারে তা ধারণার মধ্যে থাকার পরও যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া কেন এই বিপজ্জনক পথে এগিয়ে যাচ্ছে সেটাই প্রশ্ন। উত্তর কোরিয়ার প্রতিবেশী ও মিত্র চীন দু’দেশের এই যুদ্ধংদেহী তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং দু’দেশকেই সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। যুদ্ধের ফলে আঞ্চলিক পরিস্থিতি অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে চীন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, আমরা সব পক্ষকেই মৌখিক ও প্রায়োগিক সব ধরনের উসকানি ও হুমকি দেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়। তিনি সতর্ক করে দিয়ে আরো বলেছেন, যুদ্ধ শুরু হলে সব পক্ষই হারবে, কোনো পক্ষই জয়ী হবে না।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ও বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই। যে কোনো মুহূর্তে সংঘাত বা যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই চীন তার উত্তর কোরিয়া সীমান্তে বিপুল সংখ্যক  সৈন্য মোতায়েন করেছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিলে কিংবা উত্তর কোরিয়া ষষ্ঠ পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালালে আশঙ্কিত যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠতে পারে। আর এই যুদ্ধ যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেবে না এমন কথাও জোর দিয়ে বলা যায় না। পারমাণবিক অস্ত্র বিশ্ব সভ্যতা ও মানবমন্ডলীর অস্তিত্বের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে আছে দীর্ঘদিন। পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার একটা অঙ্গীকার পুনঃ পুনঃ উচ্চারিত হলেও বিস্ময়কর বাস্তবতা হলো, পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকার অর্জনের জন্য বিভিন্ন দেশ লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর দু’টি দেশ। আজন্ম বৈরী এ দু’টি দেশের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে যেতে পারে, এ আশঙ্কা সব সময়ই বিদ্যমান। কিছুদিন আগেও এমন একটা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। যাহোক, শেষ পর্যন্ত উভয় দেশই সংযম ও দূরদর্শিতার পরিচয় দেয়। উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ এড়াতে এখন এই সংযম ও দূরদর্শিতার পরিচয়ই দিতে হবে। সন্দেহ-সংশয়, অবিশ্বাস ও অনাস্থার অবসানে ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করতে হবে। কূটনৈতিক পথে  সমস্যার সমাধানে ব্রতী হতে হবে। আমরা আশা করি, উভয় দেশ মাথা ঠান্ডা রাখবে এবং সংযমশীলতার পরিচয় দেবে। ধ্বংসকর পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি থেকে বিশ্বকে কিভাবে মুক্ত রাখা যায়, বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে আজ সে কথা গভীরভাবে ভাবতে হবে।



 

Show all comments
  • জামাল ১৭ এপ্রিল, ২০১৭, ৪:২৩ এএম says : 0
    এটা সারা বিশ্বের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে।
    Total Reply(0) Reply
  • MD ABDUL HOQUE ১৭ এপ্রিল, ২০১৭, ৫:৩১ পিএম says : 0
    North Korea is one of the few nations that can engage in a total war with the United States. The US war planners recognize this fact. North Korea, which can and is willing to face up to the sole military superpower of the world, cannot be called a weak nation. Nevertheless, Western press and analysts distort the truth and depict North Korea as an "impoverished" nation, starving and on the brink of imminent collapse. An impoverished, starving nation cannot face down a military superpower. Today few nations have military assets strong enough to challenge the US military. Russia, though weakened by the collapse of the Soviet Union, has enough assets to face up to the US. China, somewhat weaker than Russia, too, has strong military that can challenge the US. However, both Russia and China lack the political will to face down the US. North Korea's Massive Retaliation Strategy: North Korea's war plan in case of an US attack is total war, not the 'low-intensity limited warfare' or 'regional conflict' talked about among the Western analysts. North Korea will mount a total war if attacked by the US. There are three aspects to this war plan. First, total war is North Korea's avowed strategy in case of US preemptive attacks. The US war on Iraq shows that the US can and will mount preemptive strikes in clear violation of international laws, and the United Nations is powerless to stop the US. Any nation that is weak militarily may be attacked by the US at will. It is reasonable for North Korea to deter US attacks with threats of total war. Second, North Korea expects no help from China, Russia, or other nations in case of war with the US. It knows that it will be fighting the superpower alone. Nominally, China and Russia are North Korea's allies but neither ally is expected to provide any assistance to North Korea in case of war. Neither nation can or is willing to protect North Korea from attacks by the US, and North Korea alone can and will protect itself from US attacks. This principle of self-defense applies to all nations. Third, North Korea's total war plan has two components: massive conventional warfare and weapons of mass destruction. If the US mounts a preemptive strike on North Korea's Yongbyon nuclear plants, North Korea will retaliate with weapons of mass destruction: North Korea will mount strategic nuclear attacks on the US targets. The US war planners know this and have drawn up their own nuclear war plan. In a nuclear exchange, there is no front or rear areas, no defensive positions or attack formations as in conventional warfare. Nuclear weapons are offensive weapons and there is no defense against nuclear attacks except retaliatory nuclear attacks. For this reason, North Korea's war plan is offensive in nature: North Korea's war plan goes beyond repulsing US attackers and calls for destruction of the United States. The US war plan '5027' calls for military occupation of North Korea; it goes beyond the elimination of North Korea's weapons of mass destruction. The US military regards North Korea its main enemy and likewise North Korea regards the US its main enemy. South Korea, too, regards North Korea its main enemy but North Korea does not regard South Korea its main enemy because South Korea is a client state of the United States and has no ability or power to act independent of the US. North Korea's war plan is not for invading South Korea but for destroying the US. • North Korea makes its own weapons. • North Korean soldiers are well indoctrinated • North Koreans are combat ready Americans should not play with North Korea. Thanks Md. Abdul Hoque HBI Group 00974 77996022
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন