Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন করতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

| প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার নগরবাসীকে বাংলা নতুন বছরের উপহার স্বরূপ রাজধানীর হাতিরঝিলের গ্র্যান্ড মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফাউন্টেন ও অ্যাম্ফিথিয়েটার উদ্বোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ড্যান্সিং ফাউন্টেন ও অ্যাম্ফিথিয়েটার উদ্বোধন করেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ঢাকা ওয়াসার সহযোগিতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন এই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছে। লেকের পানির উপর নির্মিত এই নান্দনিক স্থাপত্যকর্ম নগরবাসীর জন্য বিনোদনের নতুন সংযোজন। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ বলে নির্মাতারা উল্লেখ করেছেন। অ্যাম্ফিথিয়েটারের আসন সংখ্যা দুই হাজার। উদ্বোধনকালে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রধানমন্ত্রী নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজধানী ঢাকা ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের জরিপে বেশ কয়েক বসবাসের অনুপযুক্ত, অযোগ্য এবং অসভ্য নগরী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সংস্থাটির জরিপ ছাড়াও আমরা যারা বসবাস করি, তারা প্রত্যক্ষভাবেই জানি ঢাকায় বসবাসের সুস্থ পরিবেশ নেই। অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ, সমন্বয়হীন উন্নয়ন কর্মযজ্ঞসহ নাগরিক অসচেতনতা ঢাকাকে দিন দিন অবাসযোগ্য করে তুলছে। আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার হিসাবে এটিই এখন পৃথিবীর সবচেয়ে জনঘন শহর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, এর লোকসংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ। প্রতিদিন গড়ে আরও ১৭০০ মানুষ যুক্ত হচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর তালিকায় এটি ১১তম। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাস করে ৪৩ হাজার ৫০০ মানুষ। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, কতটা সমস্যায় রাজধানী জর্জরিত। এই বিপুল সমস্যার মধ্যে মানুষ যে বসবাস করছে, এটা বিস্ময়কর ব্যাপার। তারপরও এর মাঝেই সৃষ্টিশীল ও নান্দনিক কিছু স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। হাতিরঝিল লেক এবং এর পানির উপর নির্মিত অত্যাধুনিক ড্যান্সিং ফাউন্টেন ও অ্যাম্ফিথিয়েটার তার অন্যতম। আমরা সিডনী হারবারের কথা জানি। কী অপূর্ব সৌন্দর্য আকর হিসেবে তা গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করে। আমরা মনে করি, হাতিরঝিলে স্থাপিত ড্যান্সিং ফাউন্টেন ও অ্যাম্ফিথিয়েটারও রাজধানীবাসীকে তো বটেই, বিদেশি পর্যটকদেরও মুগ্ধ করবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এজন্য ধন্যবাদ যে, তারা বিশ্বমানের এমন একটি স্থাপত্যকর্ম তৈরি করেছে। এ কথাও বলা প্রয়োজন, শুধু তৈরি করলেই হয় না, অবিকল সৌন্দর্য বজায় রাখা এবং রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেও এ কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি নগরবাসীকে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এ কথা অস্বীকার করা যাবে না, আমাদের নাগরিকদের মধ্যে শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে যথেষ্ট উদাসীনতা রয়েছে। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা অবলীলায় ফেলা অনেকটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ফলে দেখা যায়, এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে আবর্জনার স্তূপ জমা হয় না। প্রতিদিন কয়েকশ’ টন আবর্জনা রাজধানীতে সৃষ্টি হয়। নাগরিক এই অসচেতনতার পাশাপাশি দুই সিটি করপোরেশনেরও যথেষ্ট উদাসীনতা রয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তাদের যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। সময়মতো আবর্জনা পরিষ্কারের ক্ষেত্রে এক ধরনের শৈথিল্য দেখা যায়। দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রদ্বয় ‘ক্লিন সিটি, গ্রিণ সিটি’র যে শ্লোগান দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নে অত্যন্ত ধীরগতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা-ঘাট খোঁড়াখুঁড়ির কারণে নগরবাসীকে প্রতিনিয়ত যে দুঃসহ পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে, তা কবে সমন্বয়ের মধ্যে আসবে, তা কেউ বলতে পারে না। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বৃষ্টি-বাদলার মৌসুমে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে গর্তে জমে থাকা পানিতে পড়ে অনেকে আহত-নিহত পর্যন্ত হয়েছে। তাতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যে টনক নড়েছে, তা প্রতীয়মান হচ্ছে না। নগরবাসীর নির্মল বিনোদনের জন্য যে কয়টি পার্ক রয়েছে সেগুলোও যথাযথ পরিবেশে নেই। অপরিচ্ছন্ন ও অবাঞ্ছিত লোকজনের উৎপাতে কোনো ভদ্রলোক পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে নির্বিঘেœ সময় কাটাতে পারে না। রাজধানীর এ চিত্র আর কতকাল চলবে, তা বোধ করি কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারবে না।
রাজধানীর পরিবেশগত দুর্গতির মধ্যেও হাতিরঝিলের মতো স্থাপত্যশৈলী সমৃদ্ধ একটি নান্দনিক স্পট গড়ে তোলা নিঃসন্দেহে অভিনন্দনযোগ্য। বলা যায়, এটি রাজধানীর সৌন্দর্য তিলক হয়ে উঠেছে। এক দশক আগেও যে স্থান ও লেক দখল এবং দূষণে ময়লা আবর্জনার ভাগাড় হয়ে ছিল, তা আজ দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়ে উঠেছে। এটা যেমন গৌরবের বিষয়, তেমনি এর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাও জরুরি। প্রধানমন্ত্রী এ তাকিদই দিয়েছেন। তিনি নগরীর সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নগরবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন। আমরাও এই আহ্বান জানাতে চাই। আমরা যারা রাজধানীতে বসবাস করি, নিজেদের স্বার্থেই স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বসবাসের জন্য নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে ভূমিকা রাখতে হবে। যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে নগর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব রয়েছে। তাদের কর্মকান্ডে সমন্বয় ও পরিকল্পনা থাকতে হবে। নিজেদের উদ্যোগের পাশাপাশি নগরবাসীকে সচেতন করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সচেতনতা সৃষ্টিকারী প্রচারণা চালাতে হবে। এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে জনসচেতনতায় তাদের কাজে লাগাতে হবে। তাহলে একটি পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তুলতে খুব বেশি সময় লাগবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন