Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহ অস্ত্রের ব্যবহার

| প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


আফগানিস্তান থেকে শুরু করে ইরাক ও লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশে বিরোধ-সংঘাত ও যুদ্ধ ছড়িয়ে দিয়েছে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ, যার নেতৃত্বে আছে যুক্তরাষ্ট্র। আগ্রাসন ও হামলার মধ্য দিয়ে যে দেশগুলোতে যুদ্ধ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, সেই দেশগুলো মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত। এই যুদ্ধ ক্ষেত্রগুলো তৈরি করা হয়েছে নিকট ও সুদূরপ্রসারী বিভিন্ন লক্ষ্যকে সামনে রেখে। প্রথমত, সরকার পরিবর্তন করে পশ্চিমা বশংবদ সরকার প্রতিষ্ঠা করা। দ্বিতীয়ত, মুসলিম এই দেশগুলোর ভৌগোলিক অখন্ডতা বিনষ্ট করে বিভক্ত ও হীনবল করা। তৃতীয়ত, তাদের অনৈক্য ও অস্থিতিশীলতার সুযোগে তেল ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ লুণ্ঠন করা। চতুর্থত, অস্ত্র ব্যবসা চাঙ্গা রাখা। পঞ্চমত, এ যাবৎ উদ্ভাবিত বিভিন্ন মারণাস্ত্র পরীক্ষা করে তাদের সক্ষমতা যাচাই করা। এই শেষোক্ত লক্ষ্য অর্জনে তারা শুরু থেকেই তৎপর। বস্তুত, হানাদার ও আগ্রাসী পশ্চিমা শক্তিচক্র মুসলিম দেশগুলোকে তাদের অস্ত্র পরীক্ষার নিরাপদ ক্ষেত্রে পরিণত করেছে। এর সর্বশেষ নজির হলো, আফগানিস্তানে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এমন একটি বোমা ব্যবহার করেছে যাকে ‘মাদার অব অল বোম্বস’ হিসেবে মনে করা হয়। বোমাটির নাম জিবিইউ-৪৩। বলা হয়, পারমাণবিক বোমা বাইরে এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী বোমা। জানা গেছে, একেকটি বোমার ওজন ১০ হাজার কিলোগ্রাম এবং প্রতিটিতে থাকে ৮ হাজার ১৬৪ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক। এটার বিস্ফোরণ ক্ষমতা ১১ টন টিএনটির সমান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমায় নিক্ষিপ্ত ‘লিটল বয়’ নামক পারমাণবিক বোমাটির বিস্ফোরণ ক্ষমতা ছিল ১৫ টন।
এই মাদার অব অল বোম্বসটির পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হয় ২০০৩ সালে। কোথাও এ বোমাটি ব্যবহার করা হয়নি। প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে আফগানিস্তানে। এর ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়ে দেড় মাইল এলাকাজুড়ে। এই দেড় মাইল এলাকার সবকিছুই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এ সময় আফগানিস্তানে এই ধ্বংসাত্মক ও ক্ষতিকর বোমা নিক্ষেপের ব্যাপারে ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিমত্ততার প্রদর্শন হয়েছে অন্যদিকে বোমাটির কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করাও সম্ভব হয়েছে। বোমাটি পাকিস্তান সীমান্তবর্তী নানগাহর প্রদেশে আইএসের কথিত টানেল কমপ্লেক্সে নিক্ষেপ করা হয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে জানানো হয়েছে, এই বোমা হামলায় ৯০ জন নিহত হয়েছে এবং কথিত আইএস ঘাঁটি ধ্বংস হয়ে গেছে। আফগানিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের তরফে জানানো হয়েছে, এতে বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়নি। হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ নিরপেক্ষ কোনো সূত্র থেকে এখনো পাওয়া যায়নি। আইএসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই হামলায় তাদের কোনো যোদ্ধা হতাহত হয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলার ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু না জানালেও একে আরেকটি সফল অভিযান বলে অভিহিত করেন। আফগান সরকার হামলার প্রতি সমর্থন এবং আফগান সরকারের সমন্বয়েই হামলাটি চালানো হয়েছে বলে দাবি করলেও আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এ হামলার নিন্দা জানিয়ে টুইটারে বলেছেন, এটি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়। বরং এর মাধ্যমে নতুন এবং বিপজ্জনক একটি অস্ত্র পরীক্ষার জন্য আফগানিস্তানকে খুবই অমানবিক এবং নির্মমভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
মার্কিন সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ হামলা হিসাব কষে নেয়া পরিকল্পিত একটি পদক্ষেপ। বলা বাহুল্য, এ বক্তব্যের যথার্থতা প্রশ্নাতীত। অত্যন্ত হিসাব- নিকাষ করেই পরিকল্পিতভাবে হামলাটি করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু আফগানিস্তান নয়, সংঘাত ও যুদ্ধকবলিত মুসলিম দেশগুলোসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্যও একটি বার্তা দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজনে এ ধরনের মারণাস্ত্রের ব্যবহার যে কোনো স্থানে যে কোনো সময় যুক্তরাষ্ট্র চালাতে পারে, এমন একটা হুমকি এর মধ্যে রয়েছে। শক্তিমত্ততার এমন ভয়াবহ প্রকাশ, এমন নিষ্ঠুর ও নৃশংস পদক্ষেপ শুধু নিন্দনীয় নয়, অত্যন্ত উদ্বেগজনকও। আমরা আফগানিস্তানের ভূমি ও মানুষের ওপর এই অমানবিক বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানাই। গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আমরা বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রাসী মনোভাব এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্প্রদায় যদি যথাযথ প্রতিক্রিয়া জানাতে ও পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এ ধরনের মারণাস্ত্রের ব্যবহার অন্যত্রও হতে পারে। জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায় এই ঘৃণ্য হামলা, হত্যাকান্ড ও ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে, এটাই আমরা আশা করি। এ ব্যাপারে অবিলম্বে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়া দরকার।



 

Show all comments
  • belal ১৮ এপ্রিল, ২০১৭, ২:১৫ পিএম says : 0
    আমি এ ধরনের হামলার নিন্দা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • mostafizur rahman ১৮ এপ্রিল, ২০১৭, ৫:৫৬ পিএম says : 0
    All leaders of world should raise their voice against used the G.B.U 43 (Mother of all bombs)Bomb into NANAGA province in Afghanistan. We should protect the innocence people around the world.We are human and protect each other. The bomb contain eight thousand and 166 kilogram explosives material and destroyed power expand to one and half mile.American tested the bomb in 2003 and the bomb has used into NANAGA province in Afghanistan 2017. .
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন