পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষকে বিস্মিত ও হতচকিত করে গত বুধবার পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ঘোষণা করেছেন যে, রাজবাড়ীর পাংশায় নির্মিতব্য গঙ্গাবাঁধ প্রকল্প পরিত্যাগ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই বাঁধটির নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছিলো ৪শ’ কোটি ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। কেন অকস্মাৎ এই প্রকল্প পরিত্যাগ করা হলো এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বর্ণনা করা হয়নি। একটি ইংরেজি পত্রিকায় গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ ইন্ডিয়ার সম্মতির অপেক্ষায় ছিলো। বাংলাদেশে গঙ্গার পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার কিভাবে করা যায় সরকার এখন সেই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছে। একই ঘোষণায় পানিসম্পদমন্ত্রী আরো বলেছেন, ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের ওপর কতখানি ফেলেছে সেটিও পরীক্ষা করে দেখছে সরকার। ১৯৯৬ সালে সম্পাদিত গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি মোতাবেক শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ যতটুকু পানি পায়, সেই পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার কিভাবে করা যায় সেটি পরীক্ষা করে দেখছে বাংলাদেশ। এই ঘোষণার একদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তা প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য যেমন ত্রæটিযুক্ত তেমনি গঙ্গার বাঁধ প্রকল্পের নকশাও বাংলাদেশের জন্য ত্রæটিযুক্ত এবং আত্মঘাতী। উল্লেখ করা যেতে পারে, চীন ইতিপূর্বে গঙ্গাবাঁধ প্রকল্প নির্মাণে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলো। বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে গঙ্গাবাঁধ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা রিপোর্ট প্রণয়ন শুরু করে। রিপোর্টটি শেষ করতে ৪ বছর সময় লাগে এবং ২০১৩ সালে ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে রিপোর্ট প্রণয়ন শেষ হয়। এখন এই প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার কারণে নতুন স্থান নির্ধারণের জন্য আবার সম্ভাব্যতা রিপোর্ট প্রস্তুত করতে হবে। পানিসম্পদমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশে গঙ্গা নদীর ওপর যৌথভাবে বাঁধ নির্মাণের জন্য ভারতকে অনুরোধ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা রিপোর্ট তৈরি হওয়ার পর ২০১৪ সালে এটির নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিলো এবং ২০২০ সালে এটি সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিলো। ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে এসে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সম্মেলনে ঘোষণা করেন, ভারতের সাথে যৌথভাবে গঙ্গাবাঁধ নির্মিত হবে। ঐ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন যে, গঙ্গার পানি কোথায় সংরক্ষণ করা যায় তার স্থান নির্ধারণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গেও গঙ্গাবাঁধ নির্মাণের স্থান নির্বাচনের জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে অনুরোধ করেছেন।
ঢাকার আলোচ্য পত্রিকাটির রিপোর্ট মোতাবেক, প্রধানমন্ত্রী দিল্লী সফরকালে আশা করেছিলেন, গঙ্গাবাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে তিনি ভারতের সম্মতি পাবেন। গঙ্গাবাঁধ নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিলো বহুবিধ। যেমন সমুদ্রের লোনা পানির অনুবেশ রোধ, সেচ কাজের জন্য পানি সংরক্ষণ, মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি এবং সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ। গঙ্গাবাঁধ প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভারতকে অনেক আগেই সম্ভাব্যতা রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তারা দীর্ঘ দিন ধরে ভারতের সম্মতি এবং ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা করেছেন। ওই সূত্র আরো জানায়, সম্মতি দেওয়া তো দূরের কথা, ভারত আরো ১৯টি প্রশ্ন পাঠিয়েছে যেগুলোর জবাব দেওয়ার পর তারা তাদের অবস্থান জানাবে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী একটি যৌথ ঘোষণায় বলেন যে, উভয় দেশ পানির ভাগাভাগির ব্যাপারে পরস্পরের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধানে না পৌঁছা পর্যন্ত ফারাক্কা বাঁধ চালু করা হবে না। কিন্তু এই ঘোষণাকে উপেক্ষা করে ভারত একতরফাভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালু করে। আর তখন থেকেই বাংলাদেশ চিন্তা করে গঙ্গাবাঁধ প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা। ফারাক্কা বাঁধ চালু হওয়ার ফলে বাংলাদেশে পানির প্রবাহ কমে যায়। ফলে কৃষি, মৎস্য সম্পদ, বন, নৌ-চলাচল এবং শিল্পোন্নয়ন ব্যাহত হয়। সমুদ্রের লোনা পানি প্রবেশ করার ফলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে। ভারত বাংলাদেশের নিকট থেকে আশ্বাস চেয়েছিলো, গঙ্গাবাঁধ নির্মিত হলে ভারতের ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়বে না। বাংলাদেশও ভারতকে এই মর্মে আশ্বস্ত করে যে, বাঁধটির নির্মাণ এমনভাবে হবে যাতে করে ভারতের কোনো ক্ষতি না হয়।
রাজবাড়ী জেলার পাংশায় এই ব্যারাজ নির্মাণ করার কথা ছিলো। নীলফামারীর ডালিয়ায় নির্মিত তিস্তা ব্যারাজের আদলে। ব্যারাজ থেকে উজানে চাঁপাই নবাবগঞ্জের পাংখা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকতো বিশাল রিজার্ভার, যার পানি ধারণক্ষমতা হতো ২৯শ’ মিলিয়ন মিটার কিউব। এই পরিমাণ পানি থেকে ব্যারাজের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে ২ হাজার মিলিয়ন কিউসেক মিটার পানি সরবরাহ করা হতো। প্রকল্পের ডিপিপি থেকে জানা যায়, ব্যারাজের দুই পাশের আটটি সংযোগ খালের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে এই পানি ছাড়া হতো। এর ফলে গঙ্গানির্ভর ১৬টি নদী শুষ্ক মৌসুমে ফিরে পেতো নাব্যতা। সেই সাথে গঙ্গা অববাহিকার ৫১ লাখ হেক্টর জমির মধ্যে ১৯ লাখ হেক্টর জমি সরাসরি সেচের আওতায় চলে আসতো। আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই ব্যারাজ নির্মাণ করার কথা ডিপিপি’তে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যারাজের দৈর্ঘ্য ধরা হয় ২১শ’ মিটার। এর গেট থাকতো ৯৬টি। ফিস পাস থাকতো ২টি এবং নেভিগেশন লক থাকতো ১টি। এছাড়াও থাকতো একটি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখান থেকে ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ (চীনের প্রস্তাবনায় ১২০ মে.ও.) উৎপাদন হতো। এই ব্যারাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিলো এর মাধ্যমে ১২ মাসই পানির প্রবাহ কন্ট্রোল করা যা দেশের আর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে বড় ধরনের বিপ্লব নিয়ে আসতো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।