হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
কামরুল হাসান দর্পণ
বিগত কয়েক বছর ধরে জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক বিশ্বের কোন দেশের মানুষ কত বেশি সুখী তার একটি তালিকা প্রকাশ করে আসছে। গত ২০ মার্চ সংস্থাটি তার সর্বশেষ তালিকা প্রকাশ করে। তালিকায় ১৫৫টি দেশ ঠাঁই পায়। এই তালিকার ১১০তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। শীর্ষ সুখী দেশ হিসেবে রয়েছে নরওয়ে। তালিকার তলানিতে অর্থাৎ ১৫৫তম স্থানে আছে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, যে পাকিস্তানকে বলা হয় একটি অকার্যকর রাষ্ট্র সে কিনা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে সুখী! তার অবস্থান ৮৮তম। আর ভারত ১২২ এবং নেপাল ৯৯তম। সবচেয়ে অসুখী আফগানিস্তান। তার অবস্থান ১৪১তম। সুখী দেশের তালিকা করা হয়েছে তালিকাভুক্ত দেশগুলোর এক হাজারের বেশি মানুষের মতামত নিয়ে। এসব মানুষকে একটি ১০ ধাপওয়ালা মই কল্পনা করতে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি উপরের ১০ নম্বর ধাপে দাঁড়িয়েছেন, তাকে সবচেয়ে বেশি সুখী ধরা হয়েছে। তারপর যারা ক্রমাগত নিচের ধাপগুলোতে দাঁড়িয়েছেন তাদের কম সুখী এবং অসুখী ধরা হয়েছে। সুখ নির্ণয়ের এই পদ্ধতি পাঠকদের কাছে নিশ্চয়ই কৌতুককর মনে হতে পারে। হওয়ারই কথা। আমি যদি অসুখীও হই, তবে কল্পনায় মইয়ের সবচেয়ে উঁচু স্থান ১০ নম্বর ধাপেই দাঁড়াতে চাইব, এটাই স্বাভাবিক। আর দাঁড়িয়ে গেলেই কী আমি সুখী হয়ে গেলাম! তদ্রƒপ, যিনি সুখী তিনি তো মইয়ের একেবারে নিচের ধাপেও দাঁড়াতে পারেন। কাজেই এ ধরনের সুখী দেশের তালিকা কতটা গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। প্রতিবেদনে সুখে থাকার জন্য কাজ থাকা জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যাদের চাকরির নিরাপত্তা আছে তারা ভাল থাকেন। সেই সঙ্গে ভালো বস, ভালো সহকর্মী, কাজের স্বাধীনতা থাকলে বাড়তি সুখ পাওয়া যায়। কাজে ঝুঁকি থাকলে বা অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকলে মানুষ কাজ করে সুখ পায় না। খুবই সরল এবং সহজ একটি ব্যাখ্যা। এ কথা কে না জানে! প্রতিবেদনে সুখের একটি সংজ্ঞাও দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যেসব দেশে সমৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য আছে অর্থাৎ যেসব দেশে সমাজের চূড়ান্ত পর্যায়ের আস্থা আছে, অসমতা কম ও সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা পূর্ণ আছেÑ সেসব দেশ সাধারণ মাপকাঠিতে সুখী দেশ। এ সংজ্ঞাটা বাস্তবতার সাথে কিছুটা সাজুয্যপূর্ণ। তবে সত্যিকার অর্থে কে যে কিসে সুখী হয় তা বলা মুশকিল। সুখের মাপকাঠি সহজ কোনো বিষয় নয়। একেক জনের কাছে সুখ একেকভাবে ধরা দেয়। এটি একটি আপেক্ষিক বিষয়। বিড়াল যখন ইঁদুর নিয়ে খেলে, তখন এ খেলা বিড়ালের জন্য সুখের হলেও, ইঁদুরের কিন্তু জীবনমরণ সমস্যা। স্বাভাবিকভাবে হাঁটা-চলার সময় যখন দেখা যায়, কেউ পা হড়কে পড়ে গেছে, তার পতন দৃশ্য দেখেও অনেকে হাসে। কেউ হয়তো দৌড়ে তাকে তুলতে যান। কেউ হেসে সুখ পান। তবে যিনি পড়েছেন তার কোমরের হাড়ে চিঁর ধরলেও দর্শকদের অনেকের জন্য তা হাসির খোরাক হয়ে উঠে। এখানে পতিত ব্যক্তিরও দোষ নেই, আবার যারা হেসেছেন তাদেরও দোষ নেই। যারা হাসেন, পতন দৃশ্য তাদের মনের মধ্যে অবচেতনভাবেই দ্রæত হাসির উদ্রেক করে। তবে নৈতিকভাবে পতিত ব্যক্তিকে দেখে হেসে আনন্দ পাওয়া কখনোই উচিত নয়। বরং সহমর্মী হয়ে মানবিকতা প্রদর্শনই কাম্য।
দুই.
আমাদের দেশ সুখী না অসুখী তা আমাদের চেয়ে বেশি কেউ বলতে পারবে না। এমনকি যারা সরকার চালায় তারাও বলতে পারবে না সাধারণ মানুষ সুখী না অসুখী। কারণ তারা তাদের সুখ দিয়ে অন্যের সুখ উপলব্দি করে। তবে সরকারে যারাই থাকুক না কেন সাধারণ মানুষ যতই অসুখে থাকুক তারা কখনোই তা স্বীকার করে না। তারা কেবল সাধারণ মানুষের উন্নতিই দেখে। দেশ তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে এ কথা ফড়ফড় করে বলে যায়। এর কারণ হচ্ছে, সত্যি কথা বললেই যেন তাদের ব্যর্থতা প্রকাশ হয়ে পড়বে। বাংলাদেশের মানুষ আজ কতটা সুখী তা যদি জাতিসংঘের মই তত্তে¡র অবস্থানও ধরে নেয়া হয়, তবে বাংলাদেশ যে সুখী নয় তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আমরা যারা সাধারণ মানুষ, দিন আনি দিন খাই বা সীমিত আয়ের তারা ভাল করেই জানি জীবনযাপন করতে আমাদের কত কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। তিন বেলা খাওয়ার জন্য বাজার-সদাই করতে গেলে মাথা গরম হয়ে যায়। জিনিসপত্রের দাম আজ একরকম থাকলে কাল আরেক রকম। বাড়ে বৈ কমে না। এই বাড়তি অর্থ জোগান দিতে গিয়ে নিজেদের খরচ ও বাজেট যে কতবার পুনর্নির্ধারণ করতে হয় তার কোনো ইয়ত্তা থাকে না। প্রতিনিয়ত কেবল খরচ কমানোর অ্যাডজাস্ট করতে হচ্ছে। শহরাঞ্চলে বিশেষ করে যারা রাজধানীতে বসবাস করেন এবং সীমিত আয়ের তাদের যে কী দুর্দশা তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সরকার বলতে পারে, শহরাঞ্চলে আর কত মানুষ বসবাস করে? এ প্রশ্নের উত্তরে এ কথাও বলা যায়, সরকারের আয়ের অন্যতম মূল উৎসই তো জোগান দেয় এই মানুষগুলো। চলতে-ফিরতে, খাইতে-নাইতে-শুইতে সরকার তো তাদের কাছ থেকেই ট্যাক্স আদায় করে চলছে। বিনিময়ে সরকার কী দিচ্ছে? জিনিসপত্রের দাম কি কমাতে পারছে? অন্যান্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা তা কি যথাযথভাবে দিতে পারছে? অথচ প্রতি মুহূর্তে এসব মানুষকে একটু স্বস্তির জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এই যে আগামী জুলাই থেকে প্রায় সর্বত্র ভ্যাট আদায় কার্যকর করা হবে, তখন সাধারণ মানুষের অবস্থা কি হবে সরকার কি একবার ভেবে দেখেছে? সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কথা বাদ দিলে যারা সাধারণ চাকরিজীবী ও সীমিত আয়ের মানুষ তাদের পকেট থেকে যে বাড়তি পয়সা বের হয়ে যাবে এ পয়সা তারা কোথা থেকে দেবে? যারা ভাড়া বাসায় থাকে তাদের অবস্থা কি হবে? এমনিতেই তাদের আয়ের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বাসা ভাড়া বাবদ চলে যায়। তার উপর যদি একের পর এক ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করা হয় তবে তাদের কি উপায় হবে? যারা শিল্পপতি তারাই উৎসে কর বা ট্যাক্স আরোপ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। শত কোটি টাকার মালিক হয়েও তারা যদি উদ্বিগ্ন হন তবে সাধারণ মানুষকে কী কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে তা বোধকরি ব্যাখ্যা করার অবকাশ নেই। আমরা লক্ষ্য করছি, সরকারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই একটা ব্যবসায়িক মনোভাব কাজ করছে। কোথা থেকে কীভাবে বাণিজ্য করা যায় এ তালে রয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির দাম দফায় দফায় বাড়িয়ে আয়ের বড় একটি উৎস সৃষ্টি করেছে। তেলের দাম বিশ্ববাজারে সবচেয়ে নিচে থাকলেও তা কমাচ্ছে না। ব্যবসা করে যাচ্ছে। সরকারের এসব আচরণ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সরকার সাধারণ মানুষের জন্য নয়Ñ সরকার তার নিজের জন্য। সাধারণ মানুষ গোল্লায় গেলেও তাতে তার কিছু আসে যায় না। এ যেন সামন্ত যুগীয় শাসন ব্যবস্থা। প্রজা কোত্থেকে খাজনা দিবে তা শাসকের দেখার বিষয় নয়, খাজনা তাকে দিতেই হবে। রাজা-বাদশার ভোগ-বিলাসের জন্য খাজনা প্রয়োজন কাজেই যে কোনো উপায়েই হোক তা আদায় করতে হবে। সরকারের মধ্যে এমন একটি মনোভাব এখন খুবই প্রবল। আধুনিক ও গণতান্ত্রিক যুগে এসে যে এ ধরনের শাসন ব্যবস্থার মধ্যে সাধারণ মানুষকে পড়তে হবে তা কল্পনাও করা যায় না। একে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মোড়কে সামন্ততান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে! সরকার যেন কোনোভাবেই সাধারণ মানুষকে একটু স্বস্তিতে জীবনযাপন বা থিতু হতে দিতে চাচ্ছে না। একটি ঘা শুকাতে না শুকাতেই আরেকটি ঘা দিয়ে দিচ্ছে। এ ধরনের সরকারকে কী করে জনবান্ধব সরকার বলা যায়!
তিন.
সরকার মুখে মুখে উন্নয়নের অনেক কথা বলে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন সূচকের উন্নতির কথা বলছে। সরকারের এসব কথা শুনে সাধারণ মানুষ না পারছে সইতে না পারছে কইতে। মানুষের এ পরিস্থিতিকে সবচেয়ে কষ্টকর ও অসুখী বলা ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে! সরকার ও বিদেশি যেসব সংস্থা বিভিন্ন সূচক বৃদ্ধির কথা বলছে তারা সুখ পরিমাপের জন্য মই-এর মতোই তত্ত¡ ব্যবহার করছে। সরকার ব্যবহার করছে তার বিভিন্ন সংস্থা আর বিদেশি সংস্থাগুলোও সেসব সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী তথ্য তুলে ধরছে। এটা কে না জানে, বিদেশিদের পক্ষে আমাদের দেশের মানুষের সুখ-দুঃখ বোঝা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাদের পক্ষে সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে বা সাধারণ মানুষের ভিড়ে গিয়ে ‘আপনি কেমন আছেন, আপনার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কি, ঠিক মতো সংসার চালাতে পারছেন কিনা?’ এসব কথা জিজ্ঞেস করে তথ্য নেয়া সম্ভব নয়। আর সরকার কি কখনো তাদের অর্থনীতির নেতিবাচক চিত্র দেবে? কখনোই নয়, কস্মিনকালেও না। কারণ সরকার মানেই উন্নয়ন এবং তার জোয়ার। সরকার কখনোই স্বীকার করে না, তার কোনো ব্যর্থতা আছে। বরং সাফল্যের তিলকে তাল করে উপস্থাপন করাই তার বৈশিষ্ট্য। এই যেমন দেশে শিক্ষিত-অশিক্ষিত মিলিয়ে কয়েক কোটি বেকার রয়েছে। সরকার তা স্বীকার করতে চাইবে না। সাধারণ মানুষ অতি কষ্টে জীবনযাপন করলেও তা স্বীকার করবে না। বলবে মানুষ অতি ভাল আছে। দুধে-ভাতে বসবাস করছে। সরকারের এ ধরনের আচরণ মানুষকে ক্রমেই অসুখী করে তুলছে। অসুখী থেকে ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ হলেও সরকারের তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ সরকার ভাল করেই জানে জনগণ তার কিছুই করতে পারবে না। এই মানসিকতার বলেই একের পর এক উন্নয়নের সূচক তুলে ধরছে। বলছে মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। অথচ এটা সবারই জানা এর মধ্যে বিরাট শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। কারণ কোটি কোটি বেকার, যারা কাজই করে না তাদের আয় বাড়ে কীভাবে। আবার সরকার এ কথাও বলছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এ কথা বলে না, যতটুকু বেড়েছে, জিনিসপত্রের দামও তার তিন গুণ বেড়ে গেছে। এই আয় বৃদ্ধি দিয়ে সাধারণ মানুষ তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছে না। তাহলে এই বৃদ্ধি হলেই কী আর না হলেই কী! সাধারণ মানুষ তো আয়ের এই বৃদ্ধি চায় না। তারা চায় আয় কম হলেও জিনিসপত্রের দাম নাগালের মধ্যে থাকুক। অল্প টাকায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারুক। মানুষ কি তা কিনতে পারছে? এখন এক বস্তা টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে যদি আধা বস্তা জিনিসপত্র পাওয়া যায়, তবে এ আয় বৃদ্ধির দরকার কী! আসলে সরকার মানুষের টাকার অংকটাকে অনেক বড় করে দেখিয়ে সাফল্য নিতে চাচ্ছে। যারা সচেতন, তারা বুঝতে পারেন দেশের অর্থনীতি এবং উন্নয়নের পরিসংখ্যানের মধ্যে বিরাট একটা ফাঁক রয়েছে। এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে রয়েছে সাধারণ মানুষ। যেখানে মানুষকে শুধু বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হয়, সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন শনৈশনৈ হচ্ছে, এমন কথা বলা প্রহসন ছাড়া কিছু নয়। পরিসংখ্যানই বলছে, বিগত দশ বছরে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ৪০ শতাংশ। কর্মসংস্থান কমেছে ২ শতাংশ। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন শতভাগ বা তার উপর বৃদ্ধি পেলেও বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন এক টাকাও বাড়েনি। চাকরিজীবীদের মধ্যে এই বিরাট বৈষম্য মানুষকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সরকার মনে করছে, তার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন বাড়ানোই একমাত্র দায়িত্ব। বাকি সবার কি হলো তার হিসাব না রাখলেও চলবে। কোনো দেশের সরকার শুধু সরকারের হবে সাধারণ মানুষের হবে না, তা কল্পনাও করা যায় না। আমাদের সরকারের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সবকিছু বাড়িয়ে বলা বা দেখানো। জিডিপির কথা যদি ধরা হয়, তবে বলতে হবে সরকার বহুবার লাফ দিয়ে বাড়াতে চেয়েছে। ৬ থেকে ৭ পর্যন্ত গিয়েছে। এখন ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। সরকারের এ হিসাবের পক্ষে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এডিবি একমত নয়। প্রতিষ্ঠানটি বলছে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৯। অর্থাৎ ৭-এর নিচে। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, সরকার যেন উন্নয়নের সবকিছুতেই লাফিয়ে চলতে চাইছে। যদিও এসব জিডিপির হিসাব সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয় এবং তারা বুঝতেও চায় না। সাধারণ মানুষ চায় তার সংসারটি ঠিকমতো চলছে কিনা, টানাপড়েন ছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী তিন বেলা খেতে পারছে কিনা। এ প্রয়োজন মিটলেই তার আর তেমন কিছু লাগে না। দুঃখের বিষয় সাধারণ মানুষ এই মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। এর উপর সরকার যখন উন্নয়নের ফিরিস্তি ও পরিসংখ্যান তুলে ধরে, তখন তা তার কাছে কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো মনে হওয়াই স্বাভাবিক।
চার.
এটা এখন স্পষ্ট সরকার যেসব উন্নয়ন কাজ করছে, বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছেÑ এগুলোর খরচ জোগান দেয়া হচ্ছে মানুষের পকেট থেকে। সরকারের প্রবণতা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কোন খাতে ভ্যাট-ট্যাক্স বসালে তার এই উন্নয়ন খরচের জোগান আসবে তা খুঁজে বের করা। এ জন্য প্রতিনিয়ত খাত খুঁজছে। একেকটি খাত খুঁজে বের করে আর তাতে ভ্যাট-ট্যাক্স বসিয়ে দেয়। অর্থাৎ সরকার জনগণকে তার ক্রেতা এবং তার আয়ের মূল উৎস হিসেবে গণ্য করছে। ক্রেতাদের যেসব কিনতেই হবে বা ভোগ করতে হবে, তার সব খাতেই সরকার তার অর্থ সংগ্রহে হাত দিচ্ছে। এমনকি ঘোষণা ছাড়া গোপনে তা কেটেও নিচ্ছে। সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হলেও তাতে তার কিছু যায় আসছে না। সাধারণ মানুষের সুখ যেন সরকারের সয় না। এ ধরনের সরকারকে কী করে জনবান্ধব বা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ বলা যায়! যে দেশে এ ধরনের সরকার থাকে, সে দেশের মানুষের সুখী হওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকারের কাজ হচ্ছে, জনগণের সুবিধা-অসুবিধা এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করা। জনগণের উপর যত কম চাপ সৃষ্টি করা যায়, সে ব্যবস্থা করা। অর্থনীতিকে চাঙ্গা ও গতিশীল করার উদ্যোগ নেয়া। সাধারণ মানুষ দেখছে, সরকার এসব উদ্যোগ না নিয়ে কেবল তাদের উপর চেপে বসছে। তাদের পকেটের টাকা বিভিন্ন উপায়ে বের করে নিচ্ছে। দেশের অর্থনীতিকে যে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেবে, তার কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ দীর্ঘদিন ধরে তলানিতে পড়ে থাকলেও তা গতিশীল করার কোনো উদ্যোগ নেই। স্বাভাবিকভাবেই বিনিয়োগ না হলে অর্থনীতি চাঙ্গা হয় না। অর্থনৈতিক প্রাণচাঞ্চল্য ও মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় না। যেখানে অর্থনীতির গতি স্থবির হয়ে পড়ে, সেখানে সাধারণ মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যেও ঘাটতি দেখা দেয়। মানুষ ক্রমেই অসুখী জীবনের দিকে ধাবিত হয়।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।