Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্রিক দেবীমূর্তি সরাতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস

| প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুপ্রিমকোর্টের মূল ভবনের সামনে স্থাপিত গ্রিক দেবী থেমিসের মূর্তি সরানোর আলেম-ওলামার দাবির প্রতি সহমত পোষণ করে বলেছেন, ‘আমাদের সুপ্রিমকোর্টের সামনে গ্রিক দেবী থেমিসের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। সত্যি বলতে কি, আমি নিজেও এটা পছন্দ করি না। কারণ, গ্রিক দেবী থেমিসের মূর্তি আমাদের এখানে আসবে কেন। এটা তো আমাদের দেশে আসার কথা নয়। আর গ্রিকদের পোশাক ছিল একরকম, সেখানে মূর্তি বানিয়ে আবার শাড়িও পরিয়ে দেয়া হয়েছে।’ এটাও একটা হাস্যকর ব্যাপার হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে কওমী মাদ্রাসার আলেমদের সঙ্গে এক সাক্ষাতে তার এই অভিমত জানানোর পাশাপাশি তিনি এ-ও জানিয়েছেন, ‘এটা কেন করা হলো, কারা করল, কিভাবে আমি জানি না।’ তিনি আলেমদের আশ্বস্ত করে অতঃপর বলেছেন, ‘ইতোমধ্যেই আমাদের প্রধান বিচারপতিকে আমি এই খবরটা দিয়েছি এবং শিগগিরই আমি তার সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে বসব। আলোচনা করব এবং আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা এখানে থাকা উচিত নয়। আমি আপনাদের বলব, আপনারা ধৈর্য ধরেন। কারণ এটা নিয়ে কোনো হৈ চৈ নয়। একটা কিছু যখন করে ফেলেছে সেটা আমাদের সরাতে হবে। আপনারা এতটুকু ভরসা অন্তত রাখবেন যে, এ বিষয়ে যা যা করার তা আমি করব’। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ও আশ্বাসের জন্য দেশের আলেম-ওলামা ও জনগণের পক্ষ থেকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ তার প্রাপ্য। আমরাও তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলতে চাই, তিনি যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন, তাতে আলেম-ওলামা এবং জনগণের দাবি ও অভিমতেরই প্রতিফলন রয়েছে। তারা আশা করে, প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে ওই মূর্তি সরিয়ে দিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক-বিভ্রান্তির অবসান ঘটাবেন।
এটা বড় আশ্চর্যের কথা, সুপ্রিমকোর্টের মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সামনে গ্রিক দেবী থেমিসের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে অথচ তা দেশের প্রধানমন্ত্রী জানেন না। মূর্তি কারা স্থাপন করেছে, কেন করেছে, কখন করেছে, সেটাও তার অজানা। প্রধানমন্ত্রীর যা অজানা, সাধারণ মানুষের তা জানার কথা নয়। কিন্তু এ তো ঠিক, মূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছে এবং কেউ না কেউ বা কোনো পক্ষ এটি করেছে। যে বা যারাই এটা করে থাকুক, তারা সরকারকে, প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করার বা অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা বা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ ব্যাপারে যে বক্তব্য রাখেন, তা বিভ্রান্তি নিরসন নয় বরং বাড়িয়ে দেয়। তিনি একদিকে গ্রিক দেবী মূর্তিকে ভাস্কর্য বলে চালানোর চেষ্টা করেন অন্যদিকে গ্রিক দেবীর মহিমা কীর্তন করে জানান, দেবীর দুই চোখ কাপড় দিয়ে বাঁধা থাকায় মনে হচ্ছে, বিচারের বেলায় ন্যায়বিচারের কোনো পক্ষপাতিত্ব না করার সংকল্প। কোন মহলের দাবি বা পরামর্শে মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে, কারা, কোন উদ্দেশ্যে এটা করেছে, বিস্ময়করভাবে তার মুখ থেকে এ সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। পত্রপত্রিকার খবরে গত বছর ডিসেম্বর মাসে দেশের মানুষ জানতে পারে, সুপ্রিমকোর্টের মূল ভবনের সামনে স্থাপন ফোয়ারায় একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। এ-ও জানতে পারে, মূর্তিটি গ্রিক দেবী থেমিসের। দÐায়মান মূর্তিটির ডান হাতে তলোয়ার। বাম হাতে দাঁড়িপাল্লা। তলোয়ারটি নিচের দিকে নামানো এবং দাঁড়িপাল্লা উপরের দিকে। মূর্তিটির দু’চোখ বাঁধা। পরনে শাড়ি, সম্ভবত বাঙালি রূপ দেয়ার জন্য। গ্রিক পুরাণে দেবী থেমিস আইনশৃঙ্খলার দেবী হিসেবে পরিচিত। বলা হয়, তিনি মানব জাতিকে ন্যায়বিচার ও নৈতিকতা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। তার মুখ নিঃসৃত বাণী স্বর্গীয় আইন হিসেবে বিবেচিত। গ্রিক ভাষায় থেমিস শব্দের অর্থও স্বর্গীয় আইন। প্রশ্ন হলো, গ্রিক পুরাণে যাই থাক, থেমিস বাংলাদেশে বিচারের প্রতীক হবে কেন? তার মূর্তি আমাদের সুপ্রিমকোর্টে শোভা পাবে কেন? কেউ যদি ভাস্কর্য বানাতে চায়, নিজের ঘরে বা অধিকারভুক্ত স্থানে তা স্থাপন করতে চায়, তাতে কেউ আপত্তি করবে না। কিন্তু তা সুপ্রিমকোর্টের সামনে কেন? বিচারের প্রতীক হিসেবেই বা কেন? ন্যায়বিচারে অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য? ন্যায়বিচারে গ্রিক দেবীর সহায়তা লাভের জন্য? তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এত দিন কি সুপ্রিমকোর্টে ন্যায়বিচার হয়নি। আমরা জানি, সুপ্রিম কোর্টে সেই ১৯৪৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ন্যায়বিচারের সর্বস্বীকৃত প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা শোভা পাচ্ছে। এত দিনে দাঁড়িপাল্লাকে সরিয়ে দেয়ার জন্যই কি তবে এই গ্রিক দেবীমূর্তি স্থাপন?
দেশের ৯২ শতাংশ মুসলমানের বিশ্বাস, চিন্তা ও ঐতিহ্যে মূর্তির কোনো স্থান নেই। তাদের দৃঢ় প্রত্যয় এই যে, কল্পিত কোনো দেবী বা দেবী মূর্তি মানুষের ভালো বা মন্দ কিছুই করতে পারে না। সুপ্রিমকোর্টে গ্রিক দেবীমূর্তি স্থাপন এই ৯২ শতাংশ মুসলমানের বিশ্বাস, চিন্তা ও ঐতিহ্যের খেলাপ। কোনো বিবেচনাতেই এটা তারা মেনে নিতে পারে না। এ কারণেই আলেম-ওলামাসহ সর্বস্তরের মুসলমান এর প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছে লাগাতার। তারা অবিলম্বে মূর্তির অপসারণ চায়। দুঃখের বিষয়, সরকারের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কিছু তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও নাস্তিক বরাবরই ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিরোধ, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাদের হাত, প্ররোচনা বা উসকানি থাকা অসম্ভব নয়। শান্তি, স্থিতি, সহাবস্থান ইত্যাদির স্বার্থে সরকারকে তাদের ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে। দেরিতে হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। আমরা আশা করি, এমন কিছু কোথাও তিনি হতে দেবেন না, যাতে মুসলমানদের ঈমান-আকিদা, বিশ্বাস, চিন্তা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আহত বা ক্ষুণœ হয়। যত দ্রæত সম্ভব সুপ্রিমকোর্টের অঙ্গন থেকে গ্রিক দেবীমূর্তি অপসারণ করা হবে, এটাই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন