পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অন্য রকম উচ্চতায় দাবি করা হচ্ছে। কিছু ব্যক্তি এবং মিডিয়া এ প্রচারণা করছে। আমি বলি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সবচেয়ে নিম্নে। আমরা দিয়েই যাচ্ছি; ভারত শুধু নিয়েই যাচ্ছে। আমাদের কিছুই দিচ্ছে না। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দেখতে হবে তিস্তা নদীর চশমায়। কয়েক দশক আলোচনার পর একটা নদীর পানি পাচ্ছি না। অথচ যে পানির ওপর আমাদের ন্যায্য অধিকার। আমার ন্যায্য দাবি ৫৪ নদীর পানি। সেখানে মাত্র একটা নদীর পানি নিয়ে চুক্তি করেছে সে চুক্তি অনুযায়ী পানি পাচ্ছি না। বাকি ৫৩ অভিন্ন নদীর পানির মধ্যে তিস্তার পানি চুক্তি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এ বাস্তবতার পরও বাংলাদেশ আর ভারতের বন্ধুত্ব সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে? স্বাধীন দেশ হিসেবে তিস্তার পানির জন্য ভারতের কাছে মিনতি করছি কেন? মিনতি করে অধিকার আদায় হয়? তিস্তার পানির জন্য একটা প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে এত তোয়াজ করছি কেন? এটা কি আমাদের নেতৃত্বের দুর্বলতা? গতকাল চ্যানেল আই-এর তৃতীয় মাত্রা নামের টকশোতে তিনি এসব প্রশ্ন উত্থাপন করেন। জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় ওই টকশোতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমানও উপস্থিত ছিলেন। তারেক শামসুর রেহমান বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে সবচয়ে বড় ইস্যু হবে তিস্তার পানি। আর বাংলাদেশের নির্বাচনের যতই ফ্যাক্টর বলা হোক ২০১৯ সালের নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে ভারত কোনো ফ্যাক্টর হতে পারবে না বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে জঙ্গি হামলা হচ্ছে তার ট্রেনিং নাকি ভারতে হয়। জঙ্গিদের কাছে পাওয়া অস্ত্রও ভারতের। জঙ্গিদের অর্থ কারা দেন সে প্রশ্ন তুলে তিনি কার্যত পশ্চিমবঙ্গের দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলেন।
দেশের বেসরকারি টিভিগুলো টকশো এক সময় ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল। হালে টাকশোর প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেছে। কর্পোরেট হাউজ পরিচালিত টিভিগুলো গণমাধ্যমের ভ‚মিকার নামে সরকারে প্রচারমাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে বেশি উৎসাহী হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। টিভির টকশোতে যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় তাদের প্রায় সবাই সোজা পথে বাঁকা পথে ইনিয়ে-বিনিয়ে সরকারের তোয়াজে ব্যস্ত থাকেন, উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। যার কারণে একই মুখকে প্রতি রাতে বিভিন্ন টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়। শুধু তাই নয়; কোন আলোচনা কোন ইস্যুতে কি বক্তব্য দেবেন দর্শকরা আগেই তা বলে দিতে পারেন। টিভির টকশোর এমন যখন অবস্থা তখন টিভির টকশোতে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনার জন্য দর্শকরা উদগ্রীব থাকেন। কারণ ওই সব ব্যক্তি ভোটের অধিকার হারিয়েছেন; মত প্রকাশের সুযোগ পান না। সেই মানুষের হৃদয়ের কথা বলতে অভ্যস্ত কয়েক বিশিষ্টজন। আমজনতার মানুষের হৃদয়ের কথা বলায় বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মূল্যায়ন জানার প্রবল আগ্রহ মানুষের। তাদের মধ্যে একজন হলেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল। এক সময় সাংবাদিকতা করেছেন এবং তিনি কোদালকে কোদাল বলতে অভ্যস্ত। তিনি চ্যানেল আইতে তৃতীয় মাত্রায় হাজির হয়েছিলেন।
টকশোতে সঞ্চালক প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর, দুই দেশের মধ্যকার চুক্তি ও সমঝোতা স্বারক, তিস্তার পানি, জঙ্গি ইস্যু ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের বুঝতে হবে একটা জিনিস; ভারতের সঙ্গে আমরা তিস্তা চুক্তি চাচ্ছি নাকি তিস্তার পানি চাচ্ছি? চুক্তি আর পানি এক জিনিস নয়। আমরা গঙ্গা চুক্তি করেছি কিন্তু পানি পাইনি। কেন চুক্তি আর পানি এক নয় তা বুঝতে হবে। তিস্তার কথাই যদি ধরেন তিস্তার উৎপত্তি হয়েছে সিকিমের হিমালয়ে। সিকিমে প্রায় একশ’ কিলোমিটার পথ প্রবাহিত হয়েছে। সিকিম পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে ঢুকেছে। কাজেই তিস্তার মূল নদী এক-চতুর্থাংশ বাংলাদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাকি অংশ ভারতের প্রবাহিত। এই ইন্ডিয়া সিকিমে অসংখ্য প্রজেক্ট করে সমস্ত পানি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। এ জন্য সিকিমের সাধারণ মানুষ এবং আদিবাসীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ রয়েছে পরিবেশগত কারণে। এটা নিয়ে আন্দোলনও রয়েছে। এত কিছুর পরও ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ৯ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে তিস্তা হাইড্রোলিক প্রজেক্ট নামে একটি প্রজেক্টের কাজ সিকিম অঞ্চলে শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিস্তার পানি তুলে অন্যত্র নেয়া হবে। এছাড়া তিস্তার লো-ড্যাম্প নামে একটি প্রজেক্ট রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং ও কালিম্পং এলাকায়। সেটা পশ্চিমবঙ্গের অববাহিকায় ইরি ধানে সেচকার্য করার জন্য। আমি আপনাদের এতসব কথা ডিটেইলস বলছি এ কারণে যে, তিস্তার পানি উপরের অংশের অববাহিকা থেকে ইন্ডিয়া প্রায় নদীর চার ভাগের তিন ভাগ পানি সরিয়ে ফেলছে। চার ভাগের এক ভাগ পানি গজলডোবায় আসছে। গজলডোবা থেকে সেটাও প্রত্যাহার করে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সেচকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন আমরা যদি ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করি তাহলে কি চুক্তি করব? আমি এখন পর্যন্ত যত আলোচনা দেখেছি বা শুনেছি তা হলো গজলডোবা তথা বাংলাদেশের বর্ডারের কাছে পশ্চিমবঙ্গের যে ইরিগেশন প্রজেক্ট রয়েছে, সেই জায়গায় যে পানি প্রবাহ সেই পানি ভাগাভাগি হবে সে আশা করছি। অর্থাৎ তিস্তা নদীর গজলডোবায় যে পানিটুকু থাকে সেটা ভাগাভাগির জন্য দেনদরবার করে আসছি। সেটাও পশ্চিমবঙ্গ আমাদের দিতে রাজি নয়। তিস্তার ব্যাপারে যদি ঐতিহাসিকভাবে দেখেন, বাংলাদেশের বর্ডারের কাছে ১৪ হাজার কিউসেক পানি আসত। তারপর গত ১০-১৫-২০ বছরে পানি কমতে কমতে ১০ হাজার কিউসেকে এসে ঠেকেছে। এখন বাংলাদেশে কখনো কখনো ৫শ’ কিউসেক পানিও পাওয়া যায় না। যদি আপনি চুক্তি করেন বাংলাদেশে যে পানি আসে; সিকিম ও নদীর উত্তরের অববাহিকায় অসংখ্য প্রজেক্টের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ার পর যে অবশিষ্ট পানি গজলডোবায় থাকবে; সেটাই পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে ভাগাভাগি হবে। গজলডোবার এই অবশিষ্ট পানির যদি পঞ্চাশ শতাংশও পাই সেটা ২০ কিউসেক হতে পারে ৩০ কিউসেকও হতে পারে। চুক্তি হয়তো আপনি করলেন। কিন্তু পানি পেলেন না। তাহলে আপনি কি চাচ্ছেন? পানি না চুক্তি? আমাদের মধ্যে প্রথম থেকেই দেখা যাচ্ছে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে তিস্তা চুক্তি। অথচ হওয়া উচিত আলোচনা তিস্তার পানি নিয়ে। দু’দেশের আলোচনাও হবে তিস্তার পানি নিয়ে। দ্বিতীয় কথা হলো আমরা যখন পানির কথা বলি তখন আমাদের মধ্যে মিনতিপূর্ণ কণ্ঠ থাকে। পশ্চিমবঙ্গের একজন মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বলেন, এখানে পানি দেয়া যাবে না। তিস্তা ইস্যুর আলোচনায় একটা গোড়ায় গলদ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তো স্টেকহোল্ডার হওয়ার কথা নয়। কথা হবে বাংলাদেশের সরকার ও ভারতের সরকারের মধ্যে। এটা দু’টি স্বাধীন দেশের মধ্যে আলোচনা। বাংলাদেশ তো ভারতের কোনো প্রদেশ নয় যে, পূর্ববাংলা আর পশ্চিমবাংলার মধ্যে তিস্তার পানি ভাগাভাগি হচ্ছে। এখানে মমতা ব্যানার্জী ঢোকে কিভাবে? কথা হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আমরা তিস্তার পানির চুক্তি করতে চাই। এর আগে শেখ হাসিনার সরকারই গঙ্গা চুক্তি করেছে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের চুক্তি হবে না। আমাদের এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। মাঝে মাঝে বলি মমতা পানি দিচ্ছে না। প্রশ্ন হলো মমতা তিস্তার পানি দেয়া না দেয়ার কে? মমতার কথা বলা ভারতের আইওয়াশ। আপনি যদি ভারতের সংবিধান দেখেন সেখানে ইউনিয়ন লিস্ট রয়েছে, স্টেট লিস্ট রয়েছে। পানির ব্যাপারে স্টেটের একটা কর্তৃত্ব রয়েছে, ইউনিয়নের কর্র্তৃত্ব রয়েছে। ভারতের সংবিধানের আলোকেই ইচ্ছা করলে সরকার তিস্তার পানি চুক্তি করতে পারে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের অনেকগুলো রায় রয়েছে সেগুলো নিয়ে দৈনিক প্রথম আলোয় মিজানুর রহমান খান লিখেছেন প্রদেশের মতামত ছাড়াও কেন্দ্র অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কেন্দ্র প্রদেশের মতামত অগ্রাহ্য করে আন্তর্জাতিক চুক্তি করতে পারে। এটা আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে। আমার মতে, হয় এখানে স্থানীয় রাজনীতির খেলা রয়েছে। যেহেতু বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করার ব্যাপারে উচ্চাভিলাষী। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির প্রধান বলেছেন, আগামী বিধানসভায় বিজেপি জিততে চায়। তাছাড়া সামনের বছর পঞ্চায়েতের নির্বাচন রয়েছে। এখন তিস্তা ইস্যু পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে গেছে। বিজেপি চায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বোঝাতে মমতা রাজি হয়েছে বলেই তিস্তা চুক্তি করা হয়েছে। আর মমতা চায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বোঝাতে আমাকে অগ্রাহ্য করে বিজেপি তিস্তা চুক্তি করেছে। বিজেপির আর তৃণমূল কংগ্রেসের ঠেলাঠেলির মধ্যে বাংলাদেশকে ফেলে দেয়া হয়েছে। এটা বাংলাদেশের মতো স্বাধীন দেশের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর। যেটা আমাদের ন্যায্য প্রাপ্তি পানি। সেটা নিয়ে ১৯৮৩ সাল থেকে আলোচনা হচ্ছে। তারও আগে পাকিস্তান আমল থেকে আলোচনা শুরু করেছি। কয়েক দশক আলোচনার পর একটা নদীর পানি যে পানির ওপর আমাদের ন্যায্য অধিকার রয়েছে সে পানি পাচ্ছি না। দিনের পর দিন পানি কমে যাচ্ছে। আমি তিস্তা নদীর চশমা দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক দেখতে চাই। যেটা আমার ন্যায্য দাবি যেটা ৫৪ নদীর পানির দাবি। সেখানে মাত্র একটা নদীর পানি নিয়ে চুক্তি করেছেন সেখানে চুক্তি অনুযায়ী পানি পাচ্ছি না। বাকি ৫৩ নদীর পানির ব্যাপারে দ্বিতীয় যে চুক্তি তা তিস্তার পানি চুক্তি সেটার জন্য বাংলাদেশ আর ভারতের বন্ধুত্ব সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে? সবচেয়ে ভালো বন্ধুর কাছে ৭-৮ বছরে ধরে মিনতি করছি তিস্তার পানি, সে পানি আমাদের দিচ্ছে না; তাদের একটি প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তির কারণে। এটা তাদের কথা অনুযায়ী। তাহলে এটা কিসের বন্ধুত্ব? কিসের লেনদেনের সম্পর্ক? এই চোখ দিয়ে যদি আপনি ভারত- বাংলাদেশ সম্পর্ক দেখেন তাহলে দেখবেন কত ভারসাম্যহীন সম্পর্ক। বাংলাদেশের প্রাপ্তির জায়গা কত শূন্য এখান থেকেই বুঝতে পারবেন। আমি এই চোখ দিয়েই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক দেখতে চাই। তিস্তার পানি এটাই যদি না পাই তাহলে কিসের সম্পর্ক? ভারতের পানি আলোচনা হচ্ছে আদিম আলোচনা সবচেয়ে পুরনো আলোচনা। পানি চুক্তি নিয়ে আলোচনার ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভারতের অনীহার কারণে সেগুলো অবশ্য কাজ করছে না। কিন্তু অন্যান্য বিষয় সীমান্ত নিয়ে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা প্রতিষ্ঠান নেই। দু’দেশের জয়েন্ট রিভার কমিশন ১৯৭২ সালে হয়েছে। এখানে আলোচনার সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে। সবকিছু মিলে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দুই দেশ নদীর পানি ভাগাভাগি করবে। এত কিছুর পরও ন্যায্য পানি পাই না। ১০ হাজার কিউসেকের বদলে কয়েকশ’ কিউসেক পানি চলে আসে সেখানে ভারত আমাদের অন্য ক্ষেত্রে দিচ্ছে তো আমি বিশ্বাস করি না। সাদা চোখে দেখলে বলতে হয় ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চরম ভারসাম্যহীন।
প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর থেকে সাফল্য কি দাঁড়াল এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশের মানুষকে যা ইচ্ছা বোঝানো সুবিধা হয়। সে সুবিধা ভারত করে দিয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধু আমাদের একটা ইমোশন নাম। তিনি বাংলাদেশ জন্ম দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের প্রতিটি মানুষ তার কাছে কৃতজ্ঞ। অনেকেই আবেগের বশবর্তী হয়ে বলল ভারত আমাদের দেয়নি মানে? দিল্লিতে বঙ্গবন্ধুর নামে রাস্তা হয়েছে। ভারত কিছু ইমোশনাল জিনিস দিয়েছে। সেগুলোর বস্তুগত কোনো মূল্য নেই। যেমন মোদি বিমানবন্দরে গেছেন। সেগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের কোনো সম্পর্ক নেই। আপনি যদি বঙ্গবন্ধুর নামে একটি রাস্তা না করে বঙ্গবন্ধুর দেশের মানুষের পানির ন্যায্য হিস্যা দেন তাহলে বঙ্গবন্ধুকে অনেক সম্মান করা হয়। মোদি যদি বিমানবন্দরে না গিয়ে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা তিস্তার পানি চুক্তি করে দেন সেটা শেখ হাসিনাকে অনেক বেশি সম্মান করা হয়। ইন্ডিয়া বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ সব সময় উপেক্ষা করে। বাংলাদেশে যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের ব্যক্তিগত সুবিধা দেয়া, তাদের নামে রাস্তা করে দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি যেন ইন্ডিয়ার কাজ। বেগম জিয়ার সময়ও বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্যের বাজার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া যদি ক্ষমতায় এসে এখন এমন করেন তাকেও আমরা ছাড়ব না। এখন যে সরকার আছে আপনি যদি বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের সঙ্গে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের তুলনা করেন।
প্রতিরক্ষা চুক্তি প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, পৃথিবীতে প্রতিটি দেশে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে স্বার্থের সংঘাত বেশি থাকে। যেমন সীমান্ত। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সংঘাতময় সীমান্ত রয়েছে। সে জন্য বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে কমন স্বার্থ অনেক বড়। কমন স্বার্থ বেশি হলে সবকিছুই বেশি হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের পানি নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। পাকিস্তান হাজার হাজার মাইল দূরে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার পানি নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। বাংলাদেশের সঙ্গে পানি নিয়ে বিরোধ একমাত্র হতে পারে ভারত, কিছুটা নেপালের। রিমোর্টলি গেলে চীনের হতে পারে। বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে ভারত ও মিয়ানমার ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের সংঘাতের জায়গা নেই। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রানজিট নেয়ার প্রয়োজন ভারত ছাড়া অন্য কারো নেই। প্রতিবেশী হওয়ায় দুই দেশ যেভাবে একে অপরের ক্ষতি করতে পারে যেমন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দিয়ে। অন্য কোনো দেশ সেটা করতে পারবে না। কাজেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সবচেয়ে বেশি গন্ডগোল হওয়ার সম্ভাবনা। বন্ধুত্বও হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এখন আপনি যখন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি করবেন, আপনি পোটেনশিয়াল একটি দেশ থেকে আক্রান্ত হতে পারেন এমন একটি দেশ থেকে রক্ষা পেতে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে পারেন। কাজেই প্রথমেই এটা বুঝে আসে না বাংলাদেশ যে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করছে কোন দেশ থেকে আক্রমণ হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে। সউদী আরব, মিয়ানমার, মেক্সিকো কার প্রতি আশঙ্কা থেকে? আপনি যদি ভারতের দিক থেকে দেখেন তাহলে প্রতিরক্ষা চুক্তি ভারতের জন্য অনেক প্রয়োজন। কারণ ভারত সামরিকভাবে অত্যন্ত উচ্চাকাক্সক্ষী। ভারত পরাশক্তি হতে চায়। তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হতে চায়। ভারতের পারমাণু বোমা রয়েছে। তারা বিশাল সা¤্রাজ্যবাদের স্বপ্ন দেখে। বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ। আমাদের দেশের যে প্রতিরক্ষা নীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নীতি সেটার সঙ্গে ভারতের নীতি এক রকম হতে পারে না। ফলে একটা অসম শক্তি এবং দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে হলো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সেটা বুঝে আসছে না। আরেকটি কথা। ভারতের একটা অভ্যাস রয়েছে প্রতিবেশী ছোট ছোট দেশের প্রতি আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করা। যদি ভুটান বা নেপালের সঙ্গে ভারতে চুক্তিগুলো দেখেন সেখানে অপমানজনক অনেক শর্ত রয়েছে। তাদের তৃতীয় কোনো দেশের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে হলে ভারতে সম্মতি লাগে। বাংলাদেশের সঙ্গে সেটা তো সম্ভব নয়। ভারতের একটা মাইনসেট রয়েছে প্রতিবেশী যে দেশের সরকার দুর্বল সরকারের ওপর জনগণের আস্থা নেই সে দেশের সঙ্গে চুক্তি করা যায় চাপ দিয়ে।
বঙ্গোপসাগরে শক্তির ভারসাম্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে আসিফ নজরুল বলেন, এই ভারমাস্য রক্ষা এখন আরো কঠিন হবে। আমরা সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর যে চিত্র দেখেছি সেখান থেকে পুতিন নতুন করে রাশিয়াকে তুলে এনেছেন। আমরা ধরে নিচ্ছি ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর আমেরিকার হয়তো পরাশক্তি গুটিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ায় তারা কি করছে তা প্রমাণ দেয়।
প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক নদীর উৎপত্তি পাহাড়ে। বাংলাদেশ সমতল। কমন হিসাব বর্ষার পানি ধরে রাখার জায়গা বাংলাদেশের নেই। নদীর উৎসমূলে বড় বড় পাহাড় আছে। ওরা (ভারত-নেপাল) পাহাড়ের মাঝখানে বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে পারে। সেখানে প্রচন্ড কারেন্ট থাকে। সেখানে বাংলাদেশ-ভারত- নেপাল যৌথভাবে কাজ করলে সুবিধা হয়। বাংলাদেশ সে প্রস্তাব ভারতে দিয়েছিল। কিন্তু ভারত সেটা করতে চায় না। যদি হতো তাহলে তিন দেশই শুষ্ক মৌসুমে রিজার্ভ পানির ব্যবহার করতে পারত। ইন্ডিয়ার পলিসি হচ্ছে তিন দেশ মিলে একসঙ্গে কিছু করা যাবে না। আলাদা আলাদাভাবে করতে হবে। ভারত একাই সব সুবিধা নিতে চায়। তাহলে প্রশ্ন আসে ভারত আমাদের কেমন বন্ধু? আপনি যদি বন্ধু হন তাহলে সেটা করেন না কেন? তারপরও দেখেন ভারত কত বন্ধু! নেপাল-ভুটানে যেতে সামান্য ট্রানজিট দিচ্ছে না বাংলাদেশকে। দীর্ঘদিন থেকে ট্রানজিট চাইলেও বাহানা করা হচ্ছে। অথচ আমি বাংলাদেশ নিজেদের নিরাপত্তার হুমকির মুখেও ট্রানজিট দিয়েছি। ট্রানজিট ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি যে এত বড় ট্রানজিট দিলাম আর আপনি তৃতীয় দেশ নেপাল আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে চান সে ট্রানজিটটা দিচ্ছেন না। সামান্য টেরিটরি ব্যবহার করতে দিচ্ছেন না। তাহলে বন্ধুত্বের সম্পর্ক কেমন করে উচ্চাতায় হলো? এককথায় বলব, ভারত আমাদের দেয় আশ্বাস আর আমরা ভারতকে দেই ডেলিভারি। এ রকম সম্পর্কই চলছে যুগের পর যুগ ধরে।
আসিফ নজরুল বলেন, জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে মানুষ যাতে প্রশ্ন করতে না পারে সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এগ্রেসিভ প্রচারণা চালানো হয়। কিছু বললেই বলা হয় ওরা জঙ্গি সহযোগী। জঙ্গি নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। আমার কথা হলো কেউ কোনো বিষয়ে স্বচ্ছতা জানতে চাইলে সরকার যদি প্রশ্ন করতে না দেয় সে হচ্ছে সবচেয়ে বড় জঙ্গি অথবা ফ্যাসিস্ট। কাজেই জঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন করতে দিতে হবে। কারণ আপনি স্যোসাল মিডিয়া তো বন্ধ করতে পারবেন না। সোস্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে বিস্তর তর্কবিতর্ক হচ্ছে। তারেক ভাই (অধ্যাপক তারেক সামসুর রেহমান) জঙ্গির ট্রেনিং হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে। বাংলাদেশে কয়েকটি এলাকায় যে জঙ্গি ধরা পড়েছে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র ভারতের। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে হঠাৎ করে অনেকগুলো জঙ্গি আস্তানা আবিষ্কার হলো। প্রধানমন্ত্রী দিল্লি সফরে গেলেন আর সেই জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ হয়ে গেল। এটা খুব বিশ্বাসযোগ্য না। হয়তো এগুলো প্রকৃত অর্থে জঙ্গিরা ঘটাচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য না। এখানে মানুষের সন্দেহ করার প্রশ্ন করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। আমি একটি জিনিস বিশ্বাস করি হলি আর্টিজানের ঘটনার পর আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেই বাংলাদেশে জঙ্গি নেই। আমি মনে করি জঙ্গিবাদ কোনোভাবেই বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে না। এ জঙ্গি দমনে সরকারের কিছু তৎপরতা রয়েছে। সেটা বিশ্বাস করি। কিন্তু জঙ্গিদের সমূলে উৎপাটন করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকার যুক্তভাবে এবং পৃথক পৃথকভাবে আন্তরিক কি না সে নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন রয়েছে। অথচ আন্তরিকতা থাকলে জঙ্গিদের সমূলে উৎপাটন সম্ভব। আমি চিরদিনের জন্য উৎপাটনের কথা বলছি না। আপনি যদি দেখেন বিএনপির শাসনামলে জঙ্গিবাদকে আস্কারা দেয়া হয়েছিল। সে সময় শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইয়ের উত্থান ঘটেছিল। সে সময় বিএনপি যখন জঙ্গি দমনে অভিযান চালায় বিচার করে। বিএনপির আমলেই ২০০৬ সালে জঙ্গিবাদ দমনের আইন হয়েছিল। তারপর অনেক দিন দেশে জঙ্গিবাদ দেখিনি। ৪ থেকে ৫ বছরের গ্যাপে আবার জঙ্গিবাদ এসেছে। প্রশ্ন হলো জঙ্গিবাদের বেনিফিশিয়ারি কারা? প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশে যদি স্বল্প মাত্রায় জঙ্গিবাদ থাকে তাহলে সেটার বেনিফিট বর্তমান সরকারের পক্ষে যায়। সরকার বেনিফিশিয়ারি হয় রাজনৈতিকভাবে। এ ধরনের কথা বাজারে রয়েছে। প্রশ্ন হলো কিভাবে বেনিফিশিয়ারি হয় সরকার! তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচার করতে পারে এবং দেশের এ ধরনের মানুষের কাছে প্রচার করতে পারে বাংলাদেশে জঙ্গি রয়েছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কেবল আমরা (আওয়ামী লীগ) থাকলে জঙ্গি দমন করতে পারব। আমরা ক্ষমতায় না থাকলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের মহোৎসব ঘটবে। যেহেতু দেশের মিডিয়া সরকারের পক্ষে প্রচারণা করে সেটা বিদেশীদের বিশ্বাস করানো সম্ভব। বাংলাদেশে যদি স্বল্প মাত্রায় জঙ্গি তৎপরতা থাকে তাহলে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের পক্ষেও প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা দরকার, অন্যান্যভাবে নিরাপত্তা দরকার এসব অজুহাতে বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ববাদী সম্পর্ক চাপিয়ে দিতে সুবিধা হয়। এ ধরনের বিশ্বাস বাংলাদেশের কিছু কিছু মানুষের মধ্যে কিছু কিছু মহলের মধ্যে রয়েছে। আপনি যদি ভালোভাবে লক্ষ্য করেন জঙ্গিবাদের বেনিফিশিয়ারি কে? স্বল্প মাত্রায় জঙ্গিবাদের বেনিফিশিয়ারি বিএনপি হতে পারে না। কারণ জঙ্গিবাদরা কোন আদর্শে বিশ্বাস করে! আল্লাহ না করুন জঙ্গিরা যদি বিজয়ী হয় তাহলে কি বিএনপিকে ক্ষমতায় রাখবে? বিএনপিকেও মারবে। কারণ বিএনপির শাসনামলে সুইসাইড বোমা হামলা হয়নি। আমি বিশ্বাস করি যদি সরকার জঙ্গিবাদ দমনে প্রচন্ডভাবে আন্তরিক থাকে তাহলে সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরের যাওয়ার আগে একাধিক সমাবেশে বলেছেন, ২০০১ সালে আমেরিকা বিএনপিকে ক্ষমতায় এনেছে। আপনি আগামী নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা কেমন হতে পারে মনে করেন? আমরা জানি ২০১৪ সালে ভারতের অবস্থান ছিল আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়া দরকার। সে জন্য তাদের তৎপরতা আমরা জানি। এ প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, আপনি যে দু-তিনটি তথ্য দিলেন তাতে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। আগামী নির্বাচনেও যেন ভারত আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকে সে জন্যই চুক্তি। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন বাংলাদেশের নির্বাচন ‘র’ অপারেট করে। নির্বাচনে কারা জিতবে না জিতবে তা ‘র’ ঠিক করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথাও বলেছেন। ভারত বেশি ক্ষমতাবান এ কারণে যে, তারা প্রতিবেশী। ‘র’ যদি ২০০১ সালে সক্রিয় থাকে তাহলে এখন তো নির্জীব হয়ে যাওয়ার কারণ নেই। এখনো ওনার (প্রধানমন্ত্রী) কথা অনুযায়ী ‘র’ বাংলাদেশে সক্রিয় থাকার কথা। ২০০১ সালে বিএনপি কিছু দিতে রাজি হয়েছিল বলে ক্ষমতায় এসেছিল। শেখ হাসিনা কিছু দিতে রাজি হননি বলে আওয়ামী লীগ তখন ক্ষমতায় যেতে পারেনি। তাহলে এখন ওনি (প্রধানমন্ত্রী) কিছু দিতে রাজি হয়েছেন দিয়ে যাচ্ছেন বলেই ওনাকে ক্ষমতায় রেখেছে। এটা ওনার কথা অনুযায়ী। আমি যেটা বিশ্বাস করি, আমি যদি ভারতের সরকারপ্রধান হতাম তাহলে কি করতাম? আমিও চাইতাম এমন একটি সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসুক যে সরকার আমার (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) কথায় উঠবে-বসবে। কারণ আমার দেশের স্বার্থ আমার কাছে বড়। পৃথিবীর সব দেশই নিজ দেশের স্বার্থ আগে দেখে। এখন কোন পদ্ধতিতে ক্ষমতায় আনবে সেটা কথা। আমার কাছে মনে হয় আওয়ামী লীগ থাকলে আমার (ভারত) স্বার্থ অনুক‚লে থাকে। আমি চাইতাম আওয়ামী লীগ যাতে নির্বাচনে জেতে। বুদ্ধিমান ভারতীয় যদি হতাম তাহলে চাইতাম আওয়ামী লীগ যেন বাংলাদেশের ফেয়ার নির্বাচন করে বিজয়ী হয়ে আসে। ভারত সরকার আওয়ামী লীগকে অনেক হেল্প করতে পারত। ভারত সরকার যদি সত্যিই চায় আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসুক; তাহলে ভারত যদি আওয়ামী লীগের আমলে সবগুলো নদীর পানি দেয়ার জন্য চুক্তি করে ফেলত তাহলে বাংলাদেশে ফসলের বন্যা বয়ে যেত। তখন আওয়ামী লীগ বলতে পারত দেখ আমি ক্ষমতায় থাকলে ভারত থেকে সব নদীর পানি আনতে পারি। যদি ভারত সরকার আওয়ামী লীগের বন্ধু হতো তাহলে ট্রানজিট ফি বহুগুণে বেশি দিয়ে বাংলাদেশকে চরম উন্নতির দেশে পরিণত করতে পারত। তখন জনগণকে আওয়ামী লীগ বলতে পারত আমি ক্ষমতায় থাকলে ট্রানজিট ফি বেশি পাই, আমি ক্ষমতায় থাকলে নদীর পানি পাই, আমি ক্ষমতায় থাকলে সীমান্ত হত্যা হয় না, আমি ক্ষমতায় থাকলে ভারতে রফতানি বেড়ে যায় কাজেই ভারতের কথা শুনতে পারি। ভারত তো সে পথে যায় না। সেটাই দুর্ভাগ্যজনক। এসব সুবিধা দিয়ে আওয়ামী লীগ যদি অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকে তাহলে আমার মনে হয় না দেশের বেশিরভাগ মানুষ তার আপত্তি করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।