Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চালের মূল্য বৃদ্ধি রুখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

লাগামহীন হয়ে পড়ছে চালের বাজার। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। সাধারণত মার্চ-এপ্রিলে মোটা চালে দাম এলাকাভেদে প্রতিকেজি ২৬ থেকে ৩৩ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে অথচ চলতি বছরের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারী বাজারে প্রতিকেজি গড়ে ৩৮ থেকে ৩৯ এবং খুচরা বাজারে ৪০ থেকে ৪১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের দেয়া এই তথ্যের সাথে সকলেই একমত নন। বাস্তবে চালের দাম এর চেয়েও বেশি। একই অবস্থা মাঝারি চালের বেলাতেও। প্রতিকেজি মাঝারি চালের দাম এই সময়ে ৩১ টাকা থেকে ৩৭ টাকার মধ্যে থাকলেও এবছর এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে ৪৫ টাকা থেকে ৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিক্রেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, মোকামে দাম বেশি তাই পাইকারি এবং খুচরাবাজারে সে প্রভাব পড়ছে। অনেকে বলছেন, এবছর বোরো মৌসুমে ধানের আবাদ কম হয়েছে। এ হিসাব বড়বড় মিল মালিকদের কাছে চলে আসায় তারা আগে থেকেই দাম বাড়িয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। তারা আরো মনে করছেন, চাল আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করাতে একটি চক্র একাজ করছে। এদিকে চালের বর্তমান মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে একটি ইংরেজি দৈনিকে বলা হয়েছে, সিলেটের হাওর অঞ্চলে ফসলডুবির বিরূপ প্রভাবেই চালের দাম বাড়ছে। বলা হয়েছে, বছরান্তে নতুন চালের জন্য জায়গা তৈরি করতে হয় বিধায় গুদাম সাধারণভাবেই খালি করা হয়। নিয়মানুযায়ী উত্তরাঞ্চলের নতুন ফসল আসার আগে হাওরের ধান বাজারে আসে। এবারে তা আসেনি।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য থেকে এটি পরিষ্কার যে, বছরের এই সময়ে চালের দামে কিছুটা ওঠানামা থাকে। একে স্বাভাবিক বলেই যারা বিবেচনা করতে চান তাদের যুক্তি হচ্ছে, একদিকে পুরাতন স্টক শেষ করে দেয়া হয় আবার নতুন ফসল উঠতে যে সময়টুকু লাগে তার মধ্যবর্তী সময়ের বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক মনে করার কোন কারণ নেই। তবে এবারের বৃদ্ধির ব্যাপারে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যথাযথভাবে কার্যকর নেই বলে সংশ্লিষ্টরা অভিমত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, একদিকে এবছর বোরো উৎপাদন কম হয়েছে, অন্যদিকে পাহাড়ি ঢল আর অতিবর্ষণে হাওরের ফসল বিনষ্ট হওয়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে চালের বাজারে। হাওর এলাকার মানুষের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে সে এলাকার আকাশ-বাতাস। সেখানে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে এবারে হাওরের ফসল বিনষ্ট হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে এর ফলে চালের বাজারেও মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশ অটো মেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেছেন, অতি মুনাফার কোন সুযোগ নেই। এদিকে মিলারদের চালের মজুদ শেষ হয়ে যাওয়া অন্যদিকে সরকারের চাল বিতরণমূলক কিছু কর্মসূচি বন্ধ থাকার কারণে চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ মিল বন্ধ রয়েছে। যেসব মিল চালু রয়েছে শুধু তাদের মাধ্যমেই চাল বিক্রি হচ্ছে। দেশে অব্যাহতভাবে চালের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলছেন, কিছু ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়িয়ে এই খাদ্যশস্যের উপর থেকে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই এই শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে না। তিনি মনে করেন, একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী পাইকারি বাজারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যভাবে চালের দাম বৃদ্ধি করছে। তবে এতে খুব একটা প্রতিক্রিয়া নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, টিসিবি’র হিসাব অনুযায়ী গত এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।
চালের মূল্য বৃদ্ধিকে মন্ত্রী স্বাভাবিক বলে মনে করলেও জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ কিন্তু কমছে না। সরকারের বিভিন্নমহল যাই বলুন না কেন, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা সুখকর নয়। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর অবস্থাতেই রয়েছে। কিছু ইট-বালু-সিমেন্টের কাজকে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি বলে মনে করার কোন কারণ নেই। দেশের প্রধান প্রধান শিল্প এখন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। গার্মেন্টের অবস্থা খুবটা ভাল নয়। চামড়া শিল্পেও চলছে নানা ধরনের সংকট। পাটের অবস্থা তো অনেকদিন থেকেই নাজুক। এই বাস্তবতায় চালের দাম বৃদ্ধিকে স্বাভাবিক মনে করার কোন কারণ নেই। এই সুযোগ যে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী নামধারীরা নিচ্ছে বা নিতে পারে তাতেও বিস্ময়ের কিছু নেই। সামনে পবিত্র রমযান। সে বিবেচনায় সংকট আরো ঘনীভূত হবার আশঙ্কাই যৌক্তিক। সে কারণে কালবিলম্ব না করে এদিকে নজর দেয়া জরুরি। মিল মালিক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার এবং চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা সকলে এব্যাপারে আন্তরিক হবেন, এটাই সকলে প্রত্যাশা করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন