Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তিস্তা নিয়ে চরম হতাশা

| প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আশা ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বহুল আলোচিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হবে। কিন্তু সফরের আগেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, চুক্তি হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত হয়ওনি। ভারতের তরফে ফের আশ্বাস ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি। গত শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক আলোচনায় শেখ হাসিনা একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির অনুরোধ জানান। শুধু তাই নয়, চুক্তি না হলে কবে নাগাদ হবে তার একটি সুনির্দিষ্ট সময় বাংলাদেশের তরফে চাওয়া হয়। বাস্তবে দেখা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির অনুরোধই উপেক্ষিত হয়নি, চুক্তির সময় নির্দিষ্ট করে দেয়ার বিষয়টিও কোনো গ্রাহ্যতা পায়নি। দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদি কেবল তার বিশ্বাসের কথা উচ্চারণ করেন। বলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, তার এবং শেখ হাসিনার সরকার তিস্তা চুক্তির বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে পারবেন। অথচ বিস্ময়কর ব্যাপার, যৌথ ঘোষণায় নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যটি আসেনি। খবরে জানা গেছে, নরেন্দ্র মোদি যেভাবে দুই সরকার চুক্তি করবে বলে আশ্বাস দেন সেভাবেই বক্তব্যটি যৌথ ঘোষণায় রাখার প্রস্তাব করে বাংলাদেশ। ভারত তাতে রাজি না হওয়ায় তা যৌথ ঘোষণায় সংযুক্ত হয়নি। যৌথ ঘোষণায় কেবল উল্লেখ করা হয়েছে, তিস্তা ছাড়া আরো সাতটি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের আলোচনা দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে। আরো জানা গেছে, তিস্তার মতো গঙ্গা ব্যারাজের ব্যাপারে সময়সীমা ধরে কাজ করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ সে ব্যাপারেও ভারতের দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা গড়তে বাংলাদেশ যে সহযোগিতা চায়, তাও ভারত আমলে নেয়নি। বলা যায়, তিস্তা চুক্তি, গঙ্গা ব্যারাজ ও অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে চরম হতাশা নিয়েই বাংলাদেশকে ফিরতে হয়েছে।
তিস্তা চুক্তিসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন ঝুলেই থাকল। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তিস্তার পানি না দেয়ার অজুহাত হিসেবে যে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন তাতে তিস্তা নিয়ে কোনো চুক্তি আদৌ হবে কি না তা নিয়ে ঘোর সংশয় দেখা দিয়েছে। মমতা ব্যানার্জি শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান, তিস্তায় কোনো পানি নেই। পানির অভাবে এনটিপিসির বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ। সেচের জন্য পানি পেতে সমস্যা হচ্ছে। বিকল্প হিসেব তিনি উল্লেখ করেন, উত্তরবঙ্গে তোর্সা, জলঢাকাসহ চারটি নদী আছে। সেখানে পানি আছে। তিস্তার বিকল্প হিসেবে এই চারটি নদীর পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। তিস্তার পানি না দেয়ার জন্যই যে মমতা ব্যানার্জির এই বিকল্প প্রস্তাব সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ-পর্যবেক্ষকরা একমত। তাদের মতে, বাংলাদেশ তিস্তার পানি চায়। ওই চারটি নদীর পানি তার বিকল্প হতে পারে না। প্রশ্ন উঠতে পারে, তিস্তায় পানি নেই, এই কথাটি কতদূর সত্য? সাম্প্রতিক বছরগুলোর বাস্তবতা এই যে, শুকনো মৌসুমে তিস্তায় পানিপ্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যায়। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, সিকিম থেকে পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা পর্যন্ত ১৪টি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে বৃহদাকার ৫টি বাঁধ। এছাড়া বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন আছে আরো ৫টি বাঁধ। আরো ৪টি প্রকল্প সরকারের হাতে রয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে গজলডোবা বাঁধ ছাড়াও রয়েছে তিস্তা-মহানন্দা সংযোগ খাল। তিস্তার উজানে নির্মিত এসব বাঁধ ও প্রকল্পের কারণে তিস্তার পানি আটকে আছে উজানেই। ফলে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত যেমন যথেষ্ট পরিমাণ পানি এসে পৌঁছায় না তেমনি পশ্চিমবঙ্গে যতটুকু পানি আসে তাও গজলডোবার মাধ্যমে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তিস্তায় পর্যাপ্ত পানি না থাকার জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়, দায়ী ভারত। এর খেসারত বাংলাদেশ দেবে কেন? কেন বাংলাদেশ ন্যায্য পানি থেকে বঞ্চিত হবে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের টালবাহানা, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অজুহাত, মমতা ব্যানার্জির বিকল্প প্রস্তাব ইত্যাদির একটাই মানে, বাংলাদেশকে তিস্তার পানি থেকে বঞ্চিত করা। চুক্তি হলে পানি দেয়ার একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। তেমন কোনো দায়বদ্ধতায়ও ভারত আবদ্ধ হতে চায় না- এটাই সারকথা। তিস্তা, বলা বাহুল্য, উত্তরবঙ্গের প্রধান নদী। এর পানির ওপর নানাভাবে নির্ভরশীল ওই অঞ্চল ও তার মানুষ। তিস্তায় পানি না থাকার কারণে কৃষি, শিল্প, নৌ চলাচল, প্রকৃতি-পরিবেশ, জীবন-বৈচিত্র্য এবং সার্বিকভাবে জনজীবন ও অর্থনীতি কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা নতুন করে উল্লেখ করার অপেক্ষা রাখে না। ভারত বাংলাদেশকে তার অকৃত্রিম বন্ধু বলে দাবি করে। বর্তমান সরকারের প্রশংসায় ভারতের দলমত নির্বিশেষে সবাই পঞ্চমুখ। অথচ ‘বন্ধুর’ এত বড় ক্ষতি তাদের মধ্যে কোনো সহানুভূতি জাগ্রত করে না। ভারত ও তার নেতৃবৃন্দ জাতে মাতাল নয়, তালেও ষোলো আনা ঠিক। আমরা শুধু আশ্বাস আর প্রশংসায় বিভোব। এর চেয়ে দুঃখজনক বাস্তবতা ও আমাদের রাষ্ট্র পরিচালকদের অরিণামদর্শিতা আর কিছু হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে এত যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলো তা কার স্বার্থে গেছে, সে প্রশ্ন উঠেছে এবং সঙ্গতকারণেই উঠবে। তিস্তার পানি পাওয়ার সামান্য সম্ভাবনাও বস্তুত অনিশ্চিত হয়ে গেল। এ হতাশার কোনো তুলনা নেই।



 

Show all comments
  • কামরুজ্জামান ১১ এপ্রিল, ২০১৭, ৩:২৮ এএম says : 5
    আমাদের সরকার সব দিয়ে তিস্তার আশ্বাস নিয়ে চলে এসেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • ফারজানা ১১ এপ্রিল, ২০১৭, ৩:২৯ এএম says : 2
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলছি, দয়া করে একটু তিস্তার পারের মানুষগুলো কাছে যান।
    Total Reply(0) Reply
  • Selina ১১ এপ্রিল, ২০১৭, ৬:৩২ এএম says : 0
    It shows bilaterally could not solved. the severe desert problem .54 river water flow naturally no obstacle, no barrier ,no embankment , damp, etc .
    Total Reply(0) Reply
  • sagar hy ১১ এপ্রিল, ২০১৭, ৭:১৩ এএম says : 0
    ka asa karsila tura ....................
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন