পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরে অবৈধ দখলদারচক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গাড়ী ব্যবসায়ী ও চোরাচালান সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। বলা হচ্ছে, কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও থেমে নেই এদের উৎপাত। বিমানবন্দরের সামনে ক্যানোপি এলাকা ভাড়ায় চালিত ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারচালকদের দখলে রয়েছে। যাত্রী ও তাদের স্বজনদের জন্য নির্ধারিত পার্কিংয়ের জায়গায় দিনভর এসব যানবাহন দখল করে রাখলেও তাদের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটি করে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অথচ যাত্রীদের গাড়ী রাখলে প্রতিঘণ্টায় টাকা গুনতে হয়। এনিয়ে পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা লোকজনের সাথে প্রতিদিনই দেনদরবার হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে অভিযোগকারীরা বলছেন, যাত্রী নিয়ে যেসব গাড়ী ভেতরে প্রবেশ করে তাদেরকে এক ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করতে না দিলেও ভাড়ায় চালিত পরিবহন সারাদিন দখল করে রাখছে। খবরে বলা হয়েছে, আলোচ্য বিমানবন্দরে নিরাপত্তার নামে প্রতিদিন শতশত মানুষ হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। বিমান বন্দরের প্রবেশপথ গোলচত্বর ও আশপাশ এলাকাসহ প্রধান সড়কের উভয় পাশে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বিদেশগামী ও বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের নিতে এসে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের এই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, ব্যাপারটি আমরা বুঝি। এর সাথে অবেগ-অনুভূতির সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের করার কিছু নেই। নিরাপত্তার স্বার্থেই আমাদের এ কঠোর অবস্থানে থাকতে হয়েছে।
বিমান বন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি জনস্বার্থের বিষয়টিও অস্বীকার করার উপায় নেই। যেকোন কারণেই হোক বর্তমান সময়ে দেশের নানা জায়গাতেই এমনকিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে যাতে চিন্তিত হবার মত কারণ রয়েছে। আমাদের বিমানবন্দরে পরিচিত মানুষ তথা স্বজনের ভিড় নতুন কিছু নয়। পরিবারের সদস্যদের বিদায় জানাতে অথবা বিদেশ থেকে আসা স্বজনকে স্বাগত জানাতে আত্মীয়-স্বজন, নিকটজনদের ভিড়ের সাথে আবেগ-অনুভূতি-ঐতিহ্যের সম্পর্ক রয়েছে। অনেক দিন থেকেই এটা চলে আসছে। আইন করে এই সম্পর্ক ছিন্ন করা অসম্ভব। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি অতীতে এমনটা ছিলনা। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তা জোরদার করা অসঙ্গত নয়। যারা বিদেশ যাচ্ছে তাদের শুভানুধ্যায়ী স্বজন আবার যারা বিদেশ থেকে আসছেন তাদের প্রিয়জনের তালিকা নির্দিষ্ট রাখা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। প্রকৃতই যারা সৎ ও সঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে বিমানবন্দরে যাচ্ছেন তাদের ভোগান্তি কমিয়ে আনা যেতে পারে। এক্ষেত্রে পরিকল্পিত প্রকৃত পেশাদারিত্ব সতর্কতা অবলম্বন করলে এটা সম্ভব। অন্যদিকে ইজারা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সেটা খুবই গুরুতর। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে সরকারি দলের প্রভাবশালীরাই ইজারা পেয়েছেন। শাহজালালে গাড়ীপার্কিং এলাকায় ইজারা প্রতিষ্ঠানের লাইনম্যানরাই পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা চাহিদামত বকশিস না পেলে গাড়ী পাঠিয়ে দেয় পেছনের সারিতে। একজন গাড়ীচালক জানিয়েছেন, বাড়তি টাকা দিলেই সারাদিনই গাড়ী রাখা যায়। তবে এই টাকার রসিদ দেয়া হয়না। বলা হচ্ছে, গাড়ী ব্যবসার সাথে জড়িত সিন্ডিকেটের সাথে গোপন লেনদেনের ও মাসোহারা পরিশোধের অলিখিত চুক্তি রয়েছে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দরে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সবসময় নির্ধারিত সময়ে ফ্লইট আসেনা। অথচ এজন্য অতিরিক্ত পার্কিং ফি দিতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিবহন দালালদের খপ্পরে পড়ে অনেক যাত্রী এবং তাদের স্বজনরা অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকারে পরিণত হচ্ছেন। এটি অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত।
যেকোন নিরাপত্তা ভাবনাই মূলত জনগণের স্বার্থ রক্ষার বিবেচনা থেকেই নেয়ার কথা। জনস্বার্থ নিশ্চিত করার পরিবর্তে যদি জনভোগান্তি বৃদ্ধি পায়, তাহলে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিমানবন্দর হচ্ছে একটি দেশের গেটওয়ে। এখানে দেশী নাগরিকদের পাশাপাশি বিদেশী মেহমানরাও আসা যাওয়া করেন। সে বিবেচনায় অবশ্যই বিমান বন্দরের নিñিদ্র নিরাপত্তা অপরিহার্য। এই নিরাপত্তা ভাবনার মানে এই নয় যে, জনগণকে দূরে ঠেলে দিতে হবে। অন্যদিকে ইজারা নিয়ে যে সব প্রশ্ন উঠেছে তা কাম্য হতে পারে না। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে সরকারের লোকজন জড়িত থাকার ফলে তারা কোন তোয়াক্কা করছেন না। গাড়ী পার্কিংয়ের বিষয়টিকে হালকা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। যে সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়েছে এটিও কার্যত পুরনো। সিন্ডিকেটের হাতে ইতোপূর্বে অনেক বিদেশীর নানা ধরনের হয়রানীর ঘটনাও ঘটেছে। বিমান বন্দরের ভাবমর্যাদা ও সুনাম ফিরিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া অপরিহার্য। কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।