পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কন্টেইনার ও খোলা কার্গো হ্যান্ডলিং করার উপযোগী বিভিন্ন ধরনের ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের তীব্র সঙ্কটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম ধীর হয়ে যাচ্ছে। চাহিদার বিপরীতে শতকরা ৪০ ভাগ ভারী যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। এর ফলে কমে গেছে বন্দরের যান্ত্রিক দক্ষতা ও সক্ষমতা। পণ্যসামগ্রী খালাস, জাহাজীকরণ, স্টেক-মজুদ করাসহ কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থের অপচয় যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি ব্যয়ও বেড়েছে। এই অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। এর প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের ওপর। কারণ বন্দরের কন্টেইনার বা যে কোনো ধরনের পণ্য হ্যান্ডলিং খরচের সাথে পণ্যের মূল্যের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বন্দরের যন্ত্রপাতির এই ঘাটতিকে পুঁজি করে একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারী ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে ঘুষ, কথিত বকশিস আদায় করে চলেছে। যারা তাদের এ অনৈতিক কাজে রাজি হয় না, তাদের পণ্য হ্যান্ডলিংও ধীর হয়ে পড়ে। বন্দরের এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। ৬১ ধরনের অত্যাধুনিক ভারী যন্ত্রপাতি কেনার প্রকল্প নেয়া হলেও তা নানা জটিলতায় ঝুলে আছে। কবে প্রকল্পের বাস্তবায়ন হবে, তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই।
বলার অপেক্ষা রাখে না, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের গেটওয়ে। এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৮০ ভাগ পণ্য আমদানি-রফতানি হয়। এ বিবেচনায় বন্দরটির গুরুত্ব অপরিসীম। দুঃখের বিষয়, এটিকে গতিশীল রেখে আরো উন্নত করার কোনো পরিকল্পনা পরিদৃষ্ট হচ্ছে না। বরং বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এর সার্ভিস ধীর হয়ে পড়ছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বন্দর উন্নয়নের ব্যাপারে যথেষ্ট উদাসীন। তা না হলে উন্নতির পরিবর্তে অবনতি হবে কেন? দেশের সবচেয়ে বেশি সচল ও ব্যস্ততম বন্দরের যদি এই দুরবস্থা হয়, তবে অন্য যে বন্দর রয়েছে, তার অবস্থা কি তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। চট্টগ্রাম বন্দরের সমস্যা নতুন কিছু নয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এসব সমস্যার কথা শুনে আসছি। এর ব্যবস্থাপনাগত ত্রæটি অনেকটা স্থায়ী রোগে পরিণত হয়েছিল। একবার শুধু দেখা গেছে, গত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে ব্যবস্থাপনা গতিশীল হতে। তারপর আবার সেই পুরনো ব্যবস্থাপনাগত ত্রæটিতে ফিরে গেছে। কন্টেইনার জট নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দিনের পর দিন পণ্য লোড ও আনলোড করার জন্য আমদানি-রফতানিকারকদের বসে থাকতে হয়। পণ্য বোঝাইকৃত বিদেশি জাহাজগুলোকেও গভীর সমুদ্রে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষমাণ থাকতে হয়। বন্দরের এ দুরবস্থার মধ্যেই আবার প্রতিবেশী ভারত এ বন্দর ব্যবহারের আবদার করে বসেছে। তারা আলাদা করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দু’টি ইয়ার্ড চাচ্ছে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এমনিতেই আমাদের দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ধীর হয়ে যাচ্ছে, তার ওপর যদি প্রতিবেশী দেশকে ব্যবহার করতে দেয়া হয়, তাহলে কী দুরবস্থার সৃষ্টি হবে, তা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। আমাদের প্রবণতাই হচ্ছে, প্রতিবেশী দেশটি কোনো আবদার করলে তা পূরণ করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যাই। নিজের ক্ষতি করে হলেও বন্ধুত্বের নামে তার চাহিদা পূরণে বদ্ধপরিকর হয়ে পড়ি। এতে আমাদের কী লাভ বা ক্ষতি হবে, তা চিন্তা করি না। প্রতিবেশী চাইছে, তাকে দিতে হবে, এমন গোঁ ধরে বসে থাকি। হয়তো দেখা যাবে, বন্দরের অসক্ষমতার মধ্যেই তাকে বন্দর ব্যবহারের সুবিধা দিয়ে দেয়া হবে। বিশ্বের আর কোনো দেশে এমন নজির আছে কি না, জানা নেই। ইতোমধ্যে ভারতকে বন্দর ব্যবহারের সুবিধা দেয়া নিয়ে আমাদের ব্যবসায়ী মহলও প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। তাদের কথা হচ্ছে, যেখানে আমাদের মালামালই আমদানি-রফতানি করতে সমস্যা হচ্ছে, সেখানে ভারতকে যদি এ বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হয়, তবে তা দেশের অর্থনীতির জন্য মহা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। অথচ আমাদের আমদানি-রফতানি সচল ও মসৃণ করার স্বার্থে আগে বন্দরের উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, বন্দরটিকে আধুনিক করার উদ্যোগ দূরে থাক, বিদ্যমান সুবিধাও ধরে রাখতে পারছি না।
দেশের প্রধানতম বন্দরের সার্বিক উন্নতি কবে হবে, তা বলা দুরুহ হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে তেমন কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। যেমন চলছে, তেমন চলুক- এমন একটা মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বন্দর নিয়ে এমন উন্নাসিকতা কোনো বিবেচনাতেই কাম্য হতে পারে না । আমাদের কথা স্পষ্ট, চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। বিশ্বের অন্যতম গতিশীল একটি বন্দরে পরিণত করতে হবে। এজন্য যেসব উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন, তা নিতে হবে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন, দক্ষ জনবল ও কাজের সুশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। বন্দরকে কেন্দ্র করে যেসব অনিয়ম রয়েছে তা দূর করতে হবে এবং এর পেছনে যারা রয়েছে, তাদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। বলা বাহুল্য, বন্দরের সমস্যা জিইয়ে রেখে বা সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করে অর্থনীতি গতিশীল করা সম্ভব নয়। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থেই বন্দরকে আরো গতিশীল করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।