Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আকস্মিক বন্যায় কৃষিতে বিপর্যয়

| প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এখন চৈত্র মাস। বর্ষাকাল শুরু হতে এখনো দুই মাস বাকি। দেশের অধিকাংশ নদ-নদী এখন পানিশূন্য। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকরা যখন সেচের পানির জন্য হাহাকার করছে তখন উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল এবং ভারী বৃষ্টিপাতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে আকস্মিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত এবং ভারতের আসাম-মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে লাখ লাখ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গিয়ে লাখ লাখ কৃষকের জন্য বড় ধরনের ভাগ্য বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। বর্ষার আগে এ ধরনের আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে হাওরের ফসলহানির ঘটনা বিরল না হলেও এবার সবচে বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। যে কৃষকরা আর কিছুদিন পরেই বোরো ধানের বাম্পার ফলন ঘরে তোলার আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল, তারা এখন তাদের পুঁজি হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছে।
যখন তখন বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ভরা ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে সর্বস্ব হারানোর এই দুর্বহ অভিশাপ থেকে কৃষকদেরকে মুক্ত করার কোন স্থায়ী পদেক্ষপ নেয়া হয় না। গত বছরও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওর, মইয়ার হাওরের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসলহানির শিকার হয়েছিল সেখানকার কৃষকরা। এবারের পরিস্থিতি ভয়াবহ, শুধু হাওরাঞ্চলেই নয়, আকস্মিক ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাতে সারাদেশেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে প্রান্তিক কৃষকরা। আকস্মি§ক বন্যায় হাওরাঞ্চলের কৃষকরা শুধু ক্ষেতের ফসল হারায়নি, সেই সাথে তাদের বাড়িঘরও তলিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করে তাদের জন্য জরুরী ত্রাণ সহায়তা এবং পুনর্বাসনের কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা। আমরা বলে থাকি, কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। লাখ লাখ কৃষকের এমন ভাগ্য বিপর্যয় আমাদের পুরো কৃষিঅর্থনীতির উপর কালো ছায়া ফেলবে। ফসলের এই ক্ষতি দেশের খাদ্য নিরাপত্তার উপর বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনে জরুরী ভিত্তিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। অকাল বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এবং আগামী বর্ষায় সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায়ও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখতে হবে।
আবহাওয়া পরিবর্তনের নিয়ামকগুলো মানবসৃষ্ট হলেও আবহাওয়ার আকস্মিক বিরূপ প্রভাবের উপর কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ফসলহানি ও জনদুর্ভোগ লাঘব করা অসাধ্য কোন বিষয় নয়। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের জন্য প্রতিবছর জাতীয় বাজেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন প্রকল্পের বেশীরভাগই দুর্নীতি লুটপাটের যোগসাজশ ও ভাগাভাগিতে চলে যাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হলেও প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কোন কার্যকর উদ্যোগ নেই। সে সব প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির চক্র ভেঙ্গে দেশের নদ-নদীর নাব্যতা সংরক্ষণ ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবী দীর্ঘদিনের। তবে এই মুহূর্তে অসময়ের আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে হাওরাঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য স্থানে যে সব প্রান্তিক কৃষক বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তাদেরকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ করে দিতে হবে। লাখ লাখ হেক্টর জমির ফসলহানি আগামী মাসগুলোতে দেশে খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। এমনিতেই আমাদের শিল্পবাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনীতি নেতিবাচক চ্যালেঞ্জর সম্মুখীন। এমতাবস্থায় লাখ লাখ টন খাদ্যঘাটতির ধকল জাতীয় অর্থনীতি ও জনজীবনের জন্য দুর্বহ হয়ে দেখা দিতে পারে। দুর্গত কৃষক পরিবারগুলোর পাশে জরুরী ত্রাণ সাহায্য এবং আগামী ফসলের জন্য বিনাশর্তে পুঁজির যোগান নিশ্চিত করা হলে হয়তো তারা এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। জাতীয় স্বার্থেই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষিঋণ মওকুফসহ আগামী ফসলের জন্য পুনরায় পুঁজির বন্দোবস্ত করতে হবে। যে কৃষকরা ক্রমহ্রাসমান কৃষিজমিতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হচ্ছে দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মুখে তাদের পাশে দাঁড়ানো রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার ভিত্তিক কর্তব্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন