Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কঠোর সমালোচনার মুখে রাশিয়া

| প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে রাসায়নিক হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় বুধবার অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে সমালোচনার মুখে পড়ে রাশিয়া। ওই হামলায় সিরিয়ার বিদ্রোহীদের দায়ী করেছে রাশিয়া। মস্কোর দাবি, বিদ্রোহীরা ওই রাসায়নিক গ্যাস মজুত করে রেখেছিল। সিরীয় বিমান হামলায় সেই গুদাম আক্রান্ত হলে বিস্ফোরণ ঘটে। তবে রাশিয়ার এমন দাবি জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করে নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্য দেশগুলো। তারা আসাদ’কে থামাতে রাশিয়ার প্রতি আহŸান জানিয়েছে। এ ঘটনায় রাশিয়ার কঠোর সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিক্কি হ্যালি। নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে তিনি বলেন, রাশিয়া জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা থেকে আসাদকে রক্ষা করেছে। সিরিয়ায় যদি রাশিয়ার প্রভাব থাকে; তাহলে আমরা চাই তারা এটা ব্যবহার করুক। আমরা এসব ভয়ঙ্কর কর্মকাÐের শেষ দেখতে চাই। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, সব তথ্যপ্রমাণ এটাই বলছে যে এ হামলার নেপথ্যে রয়েছেন রাশিয়ার মিত্র বাশার আল আসাদ। তিনি বারবার নিজ দেশের জনগণের ওপর অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করছেন। যে ভয়ঙ্কর রাসায়নিক হামলার ঘটনা ঘটেছে সেটা উপেক্ষা করা আমাদের জন্য অসম্ভব। বরিস জনসন-এর সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রায় একই ভাষায় কথা বলেছেন অন্তত একজন বিদ্রোহী কমান্ডার এবং একজন সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞ। তারা বলছেন, রাশিয়ার মিত্র সিরিয়া সরকারই এ হামলা চালিয়েছে। এর প্রমাণ রয়েছে। এ হামলা বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে সিরিয়া ইস্যুতে চলমান সম্মেলনকে ¤øান করে দিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে সহায়তা প্রদানে করণীয় নিয়ে আলোচনা করতে ৭০টি দাতা দেশ ওই সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী স্টিফেন ও’ব্রায়েন বলেন, এ সংক্রান্ত নতুন অঙ্গীকারের বিশদ বিবরণ প্রকাশ করা হবে। ভয়াবহ ওই রাসায়নিক গ্যাস হামলার পর ইদলিব প্রদেশের হাসপাতালগুলোতে উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, আহতদের বাঁচাতে প্রাণপন লড়ে যাচ্ছেন সিরীয় ডাক্তাররা। একজন স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাসের হামলার পর বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশের হাসপাতালগুলোতে জায়গা কুলোচ্ছে না আহত মানুষদের। ওই হামলার পর বুধবার ইদলিবের মুখ্য স্বাস্থ্য পরিচালক মুনজির খলিল বলেন, ক্রমাগত হাসপাতালে আহতদের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীরা। মুনজির খলিল জানান, আমরা এখনও পর্যন্ত ৭৪ জন নিহত মানুষের ব্যাপারে জানতে পেরেছি। কিন্তু হাসপাতালগুলোর তথ্যে ১০৭ জন নিহত হওয়ার কথা জানা গেছে। নিখোঁজরাও নিহত হয়েছেন বলে আমরা ধারণা করছি। সেইভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ১১টি শিশু শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে রাসায়নিক হামলার তদন্তে কমিটি গঠনের আহŸান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটা খুবই পরিষ্কার যে, স্থিতিশীল সিরিয়ায় আসাদের কোনও স্থান নেই। আমি সব তৃতীয় পক্ষকে আসাদের কাছ থেকে সরে আসার আহŸান জানাচ্ছি। আমরা এই অশান্তি আজীবন চলতে দিতে পারি না। জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি ম্যাথিউ রাইক্রফট জানিয়েছেন, এই ঘটনাটি সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভীষণ খারাপ সংবাদ। তিনি আরও বলেন, এর আগে যারা ভেটো দিয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে পদক্ষেপ নিতে দেননি, এখন আশা করি তারা সেই অবস্থান থেকে সরে আসবেন। এর আগে এ ঘটনাকে জঘণ্য বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, বিশ্বের সভ্য মানুষের সমাজে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তবে ওই বিবৃতিতে তিনি ওই হামলার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ওপর দায় চাপিয়ে বলেছেন, পূর্ববর্তী প্রশাসনের দুর্বলতা ও সমাধানহীনতারই প্রতিফলন হলো এই হামলা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে বোঝা যায়, বাশার আল-আসাদ কতোটা নৃশংসভাবে ক্ষমতা চর্চা করে থাকেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ বলেন, আবারও একবার সিরিয়ার সরকার গণহত্যায় তাদের অংশগ্রহণ অস্বীকার করছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহŸান করে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-মার্ক আয়রাল্ট বলেন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া এ ধরনের কর্মকাÐের মুখে দাঁড়িয়ে আমি সবাইকে আহŸান জানাব, তারা যেন দায়িত্ব থেকে সরে না আসে। এ কথাটি মাথায় রেখে আমি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি জরুরি বৈঠক আহŸান করছি। মেডিক্যাল সূত্রকে উদ্ধৃত করে সিরিয়ান অবজারভেটরি জানিয়েছে, হামলার কারণে অনেকের শ্বাসরুদ্ধ হয়, কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, কারও কারও আবার মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে আসে। ওই মেডিক্যাল সূত্র জানিয়েছে, এটি রাসায়নিক গ্যাস হামলা ছিল বলে আলামত মিলেছে। এর আগেও তিনবার জাতিসংঘের তদন্তে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠে এসেছে সিরীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। তবে তারা ধারাবাহিকভাবে ওই রাসায়নিক হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করেছে। এক বিবৃতিতে সিরিয়ায় জাতিসংঘ তদন্ত কমিশন বলছে, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার, বা চিকিৎসা ব্যবস্থায় হামলা চালানো যুদ্ধাপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টিকেই সামনে তুলে ধরে। ইউরৈপীয় ইউনিয়নের সিনিয়রকূটনীতিক ফেদেরিকা মোগেরিনি বলেন, অবশ্যই এই হামলার প্রাথমিক দায়-দায়িত্ব ক্ষমতাসীন সরকারের। বিবিসি, আল-জাজিরা, দ্য হিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ