নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিশেষ সংবাদদাতা : টিভি’র সুইচ অন করে, কিংবা রিমোট কন্ট্রোলে বাংলাদেশ-শ্রীলংকার প্রথম টি-২০ ম্যাচ সরাসরি দেখতে চোখ নিব্বিষ্ট যাদের, তা অন্য দিনগুলোর চেয়ে একটু বেশিই কৌতুহলী করে তুলেছে মাশরাফি ফ্যানদের। ফেসবুক পেজে অবসরের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে যখন টস করতে গেছেন, তখনো বিশ্বাস হয়নি কারো। অবসরের ঘোষণা কি আসলেই ঠিক,না গুজব ধারাভাষ্যকর ডিন জোন্স এমন প্রশ্ন করতেই কৌতুহলী দর্শকদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ। সিদ্ধান্তটি গুজব নয়, এটাই তার শেষ টি-২০ সিরিজ গত পরশু প্রেমাদাসায় পিচের উপর দাঁড়িয়ে ফেসবুক পেজে লেখা বক্তব্য পুনরাবৃত্তি করেন বাংলাদেশ টি-২০ অধিনায়কের দেয়া ঘোষণায় স্তম্ভিত হয়েছেন আর এক ধারাভাষ্যকর আতাহার আলীও। তবে সিদ্ধান্তটা নাকি হুট করে নেননি। ম্যাচের আগে মধ্যরাতে নিয়েছেন সিদ্ধান্তটি। গত পরশু ম্যাচ শেষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন তা মাশরাফি ‘রাত দুইটার দিকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে ভাবতে ভাবতে সজাগ থাকতে হয়েছে সেই ভোর পাঁচটা পর্যন্ত। দুপুরে ঘুম থেকে উঠে সবার আগে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছি মাকে। এরপর বাবা-স্ত্রী, মামা, ঘনিষ্ঠ বন্ধু-স্বজনদের জানিয়েছি।এর বাইরেও অনেকেই আছেন তাদের জানিয়েছি, পিচ কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু ভাইকে জানিয়েছি। মাঠে আসার আগেই জানিয়েছি, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে। সতীর্থদের জানিয়েছি দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে।’
যার হাত ধরে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবে লিখিয়েছেন নাম,কাছের মানুষ হিসেবে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকা সেই জাহিদ রেজা বাবু শ্রীলংকা থেকে মাশরাফির ফোন পেয়ে হয়েছিলেন অবাক ‘ও ফোন করেই বলেছে, আপনাকে একটা কথা জানানো দরকার। আমি টি-২০ থেকে অবসরে যাচ্ছি। সিদ্ধান্তটা আপনাকে বলে রাখলাম। টিভি’র সামনে থাকবেন। প্রায় আধ ঘণ্টার মতো কথা হয়েছে। এক সময়ে কথা বলতে বলতে ও আবেগি হয়ে পড়েছে, কণ্ঠ শুনে তা মনে হয়েছে।’
প্রেমাদাসায় সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি অবসরের কারন হিসেবে বলেছেন ‘ আমি কখনো এই ফরমেট উপভোগ করিনি। আমি পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলেছি কিন্তু কখনও উপভোগ করিনি। তারপরও আমি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কারণ বোর্ড চাচ্ছিল, আমি অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যাই। এই দলটাকে যতটা সম্ভব গড়ার জন্য কঠোর চেষ্টা করেছি। কতটা পেরেছি জানি না।’
সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজে মাশরাফি মাত্র ১টি উইকেট পেয়েছেন, দল হেরেছে ৩-০ ব্যবধানে। সিরিজের ওই পারফরমেন্সে মাশরাফিকে টি-২০ অধিনায়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার আভাস বিসিবি থেকে মিডিয়াকে হয়েছিল দেয়া। বর্তমানে ক্ষমতাধর হয়ে ওঠা টিম ম্যানেজমেন্টে কোচ হাতুরুসিংহের প্রভাব, বিসিবি’র শীর্ষস্থানীদের হস্তক্ষেপ এতোটাই প্রকাশ্য হয়েছে যে, মাশরাফির এই বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য মনে না হওয়ায়ই স্বাভাবিক। অবসরের নেপথ্য কারন এখন প্রকাশ্যে এনে মাশরাফি নিজেও চাননা বিতর্কের জন্ম দিতে ‘ আমার মনে হয়, এই সময় বিতর্ক তৈরি না করে আমাদের ক্রিকেটের উন্নতির জন্য কাজ করা উচিত। আমাদের ক্রিকেট এগিয়ে যাক। আমার কাছে মনে হয় না, এইসব নিয়ে আলোচনা করার কিছু আছে।’
নিউজিল্যান্ড সফরে ৩ ম্যাচের টি-২০ সিরিজে ৭ উইকেটে পেস বোলার রুবেল আস্থার প্রতিদান দিয়েও শ্রীলংকা সফরে বিবেচ্য হননি টেস্ট,ওয়ানডে কিংবা টি-২০তে। টি-২০ সিরিজকে সামনে রেখে ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানোর নায়ক রুবেল হোসেনকে দলে না রেখে ঢাকায় ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। রুবেলের ফিরে যাওয়ায় নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছে। টি-২০ থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে এটাও একটা কারন,ম্যাচ উত্তর সংবাদ সম্মেলনে এই কারনটি জানিয়েছেন মাশরাফি ‘ যখন দেখলাম ও দলে নেই, সেটা আমাকে খুব আহত করেছে। কেন যেনো মনে হচ্ছে, ও আমার জন্য খেলতে পারছে না। আমি বিশ্বাস করি, ওর প্রথম একাদশেই থাকা উচিত ছিল। যদি আমি অধিনায়ক না থাকতাম তাহলে ও খেলতে পারতো। আমার চেয়ে ওর পারফরম্যান্স যেহেতু ভালো আমি মনে করি ওর খেলা উচিত।’
২০০৯ সালে সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্টে ফলো থ্রুতে পা পিছলে পড়ে টেস্ট ক্যারিয়ার গেছে থমকে। তারপরও টেস্ট থেকে অবসরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারেননি। ঘোষণা দিয়ে টি-২০কে বিদায় জানাচ্ছেন আজ। তবে ওয়ানডে ফরমেটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে নিতে চান আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত। কারো দয়ায় নয়, ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত নিজেকে এক দিবসীয় ফরমেটে খেলতে চান মাশরাফি ‘ওয়ানডে আমি এখনও উপভোগ করছি। সামনে বিশ্বকাপ আছে, আড়াই বছর সময় পাব।’ মাশরাফির দেশাত্মবোধ সম্পর্কে অবগত সবাই। পাঁচ পাঁচবার হাঁটুর লিগামেন্টে অপারেশন করিয়ে,পায়ে বাইন্ডার লাগিয়ে যেভাবে বছরের পর বছর ধরে খেলছেন, তা সতীর্থদের করছে দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ। টি-২০ ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়কের আশা একটাই, জয়Ñ‘ একটা ম্যাচ জিতলে তা বাংলাদেশ জিতে। এখানে মাশরাফির চেয়ে দেশ অনেক বড়। আমার মনে হয়, এই ম্যাচ হেরেছি, বাংলাদেশ হেরেছে। দেশের চেয়ে বড় কিছুই আর নাই। আমরা শেষটা ভালো করতে চাই।’ টি-২০তে তার প্রয়োজন যায়নি ফুরিয়ে, শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে দলের হয়ে সেরা বোলিংয়ে (২/৩৮) জানিয়ে দিয়েছেন তা নেপথ্য কুশিলবদের। জয় দিয়ে টি-২০ ক্যারিয়ার শুরু করেছেন মাশরাফি। ২০০৬ সালে অভিষেক টি-২০ ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারে রচনা করেছেন ইতিহাস। টি-২০ ফেয়ারওয়েল ম্যাচে টিমমেটদের পক্ষ থেকে কি উপহার পান মাশরাফি,সে দিকেই এখন সবাই তাকিয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।