Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

তিস্তায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি

| প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তিস্তায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানিতে বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ক্ষেতের ফসল। উজানে বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল এবং ওপারে গজলডোবা বাঁধের সবক’টি গেইট ভারত খুলে দেয়ায় এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে বলে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত তিস্তা ব্যারাজ দোয়ানি পয়েন্টে নদীতে পানির পরিমাণ ছিল ৫২.১৫ সেন্টিমিটার। ডিমলা পয়েন্টে গত রোববার সন্ধ্যা থেকে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের সবক’টি গেইট খুলে পানি ছেড়ে দেয়ায় আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উজানে ঢলের কারণে ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চরখবাড়ি মৌজার আশপাশে কয়েক হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে ভুট্টা, বাদাম, মরিচ, পেঁয়াজ, রোপা আমন ধানের। এদিকে উজানের ঢলের কারণে তিস্তার ঘোলা পনির সাথে কচুরিপানা আসাতে এলাকাবাসী ধারণা করছে উজানে বন্যার কারণে পানির গতি তীব্র হয়েছে। টেপাখড়ি বাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান বলেছেন, উজানের ঢলে আকস্মিক বন্যার কারণে টেপাখড়িবাড়ী মৌজার চরখড়িবাড়ী গ্রামসহ আশপাশের ১০টি গ্রামে বন্যার পানিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
তিস্তার পানি সংকট নতুন কিছু নয়। পানির অভাবে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা পানিশূন্য হয়ে যাওয়ায় এই অববাহিকার আড়াই কোটি মানুষের মাঝে পানির জন্য হাহাকার দেখা দেয়। সেচ সঙ্কটে কৃষি কাজ ব্যাহত হয়। কৃষিনির্ভর জাতীয় অর্থনীতিতে দেখা দেয় বিরূপ প্রভাব। বাস্তবতা হচ্ছে, পানির সঙ্কটে তিস্তা সেচ প্রকল্পের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। পাউবো’র সূত্র অনুযায়ী, তিস্তা সেচ প্রকল্পে ৬০ হাজার হেক্টর জমি যেখানে বোরো চাষের আওতায় আনা হয়েছিল, সেখানে এই সেচযোগ্য জমির পরিমাণ কমিয়ে ১০ হাজার হেক্টর করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারত গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যৌথ নদী কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী, সেচ প্রকল্পের পানিসহ তিস্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে ন্যূনতম ৫ হাজার কিউসেক পানির প্রয়োজন। বাস্তবতা হচ্ছে, তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারতের সাথে ১৫ বছর মেয়াদী একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে এসেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি ভারতের একগুঁয়েমির কারণে। ওই চুক্তিতে তিস্তার নাব্যতা রক্ষায় ২০ ভাগ পানি রেখে বাকি ৮০ ভাগ পানি সমহিস্যার ভিত্তিতে ভাগাভাগি হবার কথা বলা হয়েছিল। দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে আলোচনা হওয়া এবং চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করার পরও শেষ পর্যন্ত চুক্তি না হওয়ায় আবার দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আগে দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল তিস্তার পানি ভাগাভাগির চুক্তিটি সম্পন্ন হতে পারে। প্রকাশিত খবরাদিতে স্পষ্টতঃই বলা হয়েছে তিস্তা চুক্তির কোন সম্ভাবনা নেই। বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে আলোচনার অনেক ইস্যু রয়েছে সেখানে তিস্তা চুক্তির মতো একটি বিষয় না হলেও কিছু যায় আসে না। ব্যাপারটি শুধু তিস্তÍারই নয় বরং বিষয়টিতে জড়িয়ে রয়েছে অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টনের মৌলিক প্রসঙ্গ। আমরা গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যার পানি পাচ্ছি না। ভারতের ‘পানি রাজনীতি’র কারণে দেশ মরুপ্রক্রিয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে। দেশে সুপেয় পানি সংকট দেখা দিয়েছে। ভারত বাংলাদেশের পানির ব্যাপারে কোন ধরনের আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করায় একদিকে শুষ্ক মৌসুমে দেশ পানি সংকটে ভুগছে, অন্যদিকে বর্ষা মওসুমে বন্যায় ভাসছে।
যে পানি তিস্তায় এসেছে সেটা যদি স্বাভাবিক হতো তাহলে অবশ্যই তাকে সৌভাগ্য বলা যেত। বাস্তবতা হচ্ছে যখন ভারতে বন্যার কারণে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি ঘটে,তখন তারা পানি ছেড়ে দেয়। আবার যখন আমাদের পানির প্রয়োজন হয় তখন নানা ছলছুঁতায় পানি প্রবাহ বন্ধ করে রাখে। ভারতের এ ধরনের বৈরী আচরণের শিকার হচ্ছি আমরা। বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্যই পানির নিশ্চয়তা প্রয়োজন। দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে হঠাৎ করে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে কিনা আমাদের জানা নেই। তবে এ বাস্তবতা মেনে নেয়া যায় না। আমরা চাই পানির ন্যায্য হিস্যা। পানি নিয়ে একটি সুষমচুক্তি সম্পাদিত হোক, এটাই প্রত্যাশিত।



 

Show all comments
  • billahhosen ৬ এপ্রিল, ২০১৭, ৯:০৪ এএম says : 0
    আমার মনে হয় দুই দেশে ভিতর একটি চুক্তিমত হক তা তে দুই দেশর শানতি হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন