Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাওর এলাকার কৃষকদের স্বপ্নভঙ্গ

| প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ক’দিন আগেও দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে কাঁচা-পাকা ধানের অনিবার্চ্য বিভায় হাওর এলাকায় কৃষকদের চোখে ছিল স্বপ্নের উড়াল, আজ সে স্বপ্ন ভেঙে খান খান। তারা ধারণাও করেনি, ভারী বর্ষণ ও সীমান্তের ওপার থেকে ধেয়ে আসা ঢল এভাবে তাদের স্বপ্ন মাটিতে নামিয়ে এনে ছত্রখান করে ডুবিয়ে দেবে। বাঁধভাঙা পানির আগ্রাসনে তাদের ভরা ক্ষেত অদৃশ্য হয়ে গেছে। চার দিকে শুধু পানি আর পানি। ২০ বছর আগে একবার চৈত্র মাসের প্রথম দিকে জলাবদ্ধতায় বেশিরভাগ হাওরের ফসল নষ্ট হয়েছিল। তারপর এই অপ্রতিরোধ্য সয়লাব। হাওরে ফসল এই একটাই। এরই অপেক্ষায় ও ভরসায় থাকে লাখ লাখ কৃষক, এবারও ছিল। খবরে প্রকাশ, ইতোমধ্যে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে চলে গেছে। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় কৃষকরা অতঃপর কি করবে, কোথায় যাবে, কি করে ঋণ ও ধারদেনা শোধ করবে, কিভাবে সংসারের প্রয়োজন মেটাবে, খেয়ে-পরে বেচেবর্তে থাকবে কেমন করে, সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। আগাম ও অসময়ে বর্ষণ কিংবা ভারতীয় পানির ঢলের আশঙ্কা বরাবরই থাকে। সে আশঙ্কা যে এবার এমনভাবে সত্য হয়ে দেখা দেবে, তা কারো কল্পনাতেও ছিল না। হাওর এলাকা ধানের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। এবার সেই ভান্ডার বড় রকমের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। লাখ লাখ কৃষকের ভাগ্যবিপর্যয়ের সঙ্গে খাদ্য উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বিগত বছরগুলোতে খাদ্য উৎপাদন যথেষ্ট বাড়া সত্তে¡ও চালের দাম এখন চড়া। এক বছরে চালের দাম গড়ে প্রতি কেজিতে ৮-১০ টাকা বেড়েছে। নানা ঘোঁট ও চক্রান্তে চালের দাম বাড়ছেই। এরপর ধানের উৎপাদন কমে গেলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে বা দাঁড়াতে পারে তা আন্দাজ করা যায়।
আমরা জানি, হাওর এলাকায় ফসল রক্ষার জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। দেখা গেছে, এবার বেড়িবাঁধ ভেঙে বা বাঁধ উপচে পানি কৃষি জমিতে প্রবেশ করেছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, বেড়িবাঁধ কি যথেষ্ট উচ্চ ও টেকসইভাবে নির্মাণ করা হয়নি? বাঁধ সংস্কারের জন্য যে মোটা অংকের টাকা বরাদ্দ করা হয় সেই টাকায় কি এবার বাঁধের কোনো কাজ হয়নি? অভিযোগ রয়েছে, টাকা বরাদ্দ করা হলেও কাজের কাজ তেমন হয়নি। পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙে যাওয়া কিংবা বাঁধ উপচে পানি ঢুকে পড়ার ঘটনা এর প্রমাণ বহন করে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড তার দায় এড়িয়ে যেতে পারবে না। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা যেতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপেক্ষা-অবহেলা, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে যদি এ বিপর্যয় ঘটে থাকে তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি-লুটপাট ও কাজের মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন রয়েছে। উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ, শহর রক্ষা বাঁধ, ভূমি রক্ষা বাঁধসহ তার সব ধরনের কাজের সঙ্গেই অদক্ষতা, দুর্নীতি, অপচয়, লুটপাট আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। বর্ষাকাল এখনো আসেনি। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন প্রকার বাঁধের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, সাতক্ষীরার প্রায় ২১০ কিলোমিটার উপকূলীয় বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। দ্রুত সংস্কার করা না না হলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভেঙে বা বাঁধ উপচে পানি ঢুকে বিস্তৃত এলাকা প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শুধু সাতক্ষীরা বেড়িবাঁধের ক্ষেত্রে নয়, সব ধরনের বাঁধের ক্ষেত্রেই এ আশঙ্কা বিদ্যমান। এখনো যেটুকু সময় আছে, তার মধ্যে যদি বাঁধ সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে ব্যাপক আকারে সম্পদ-সম্পত্তির ক্ষতিসহ ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
আমরা জানতে পেরেছি, হাওর এলাকায় পানির আগ্রাসন অব্যাহত আছে এবং নতুন নতুন এলাকা ডুবে যাচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কার ও ভাঙন ঠেকানো গেলে হয়তো কিছু ফসল রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে। ক্ষেতে পানি প্রবেশের পর যেভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে, সেটাই সবচেয়ে বড় শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি দ্রুত সরিয়ে দিতে পারলে হয়তো কিছু ধান পাওয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে কি করা যায়, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। যেহেতু সামনে বর্ষাকাল, সুতরাং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আরো সতর্ক ও তৎপর হতে হবে। যেসব বাঁধের কাজ চলছে সেসব কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকায় যেসব বাঁধের কাজে এখনো হাত দেয়া হয়নি সেসব বাঁধের কাজ দ্রুত শুরু ও শেষ করতে হবে। বাঁধের কারণে ফসল, সহায়-সম্পদের ক্ষতি ও মানুষের দুর্ভোগ যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন