পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় আবারও বাড়ছে। এই ব্যয় মৌচাক অংশে বাড়ছে। প্রায় ৩ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ অংশের নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে ১০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মৌচাক অংশের নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবটি ইতোমধ্যেই সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়েছে, চারলেন বিশিষ্ট এ ফ্লাইওভারের প্রকল্প এলাকায় বিভিন্ন সেবাপ্রদানকারী সংস্থার ভূগর্ভস্থ অবকাঠামো স্থানান্তরযোগ্য না হওয়ায় প্রতিটি ফাউন্ডেশনের পৃথক নকশা প্রণয়ন পাইলসংখ্যা, পাইল দৈর্ঘ্য ও পালিক্যাপের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে ভূমিকম্পসহনের জন্য ফ্লাইওভারে পটবিয়ারিং ও শক ট্রান্সমিশন ইউনিট সংযোজন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আরোপিত ভ্যাট ও আয়কর বৃদ্ধি এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী মূল্য সমন্বয় ইত্যাদি কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার এখন জনদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। এই ফ্লাইওভারটি নির্মাণ প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই নানা ধরনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। কয়েকদিন আগে দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, এপর্যন্ত অন্তত ৭ জন শ্রমিকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। অন্যদিকে জনভোগান্তির কথা বলে শেষ করা যাবে না। বৃষ্টিতে পানি-কাদায় যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তা বর্ণনাতীত। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য অংশ নির্মাণে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ মূল চুক্তিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪৩ কোটি ৭০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুযায়ী ভ্যাট-ট্যাক্সসহ এর মোট নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪৫২ কোটি ১০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। ব্যয় বেড়েছে ১০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বরে ক্রয় কমিটির বৈঠকে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের দুটি অংশের জন্য মোট ২৭১ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির পৃথক দুটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ অংশের ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়। যৌথভাবে এ কাজটি করছে এমসিসি ও তমা কনস্ট্রাকশন্স। একথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না, কাজের ধীরগতি বা সময় মত কাজ শেষ করতে না পারার কারণেই নির্মাণ ব্যয়সহ সার্বিক ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বলা যায়, এবারের ব্যয় বৃদ্ধিই শেষ বৃদ্ধি নয়। ভবিষ্যতে আরও ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয় জনগণের সার্বিক স্বার্থের বিবেচনায়। এখানে অর্থের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অর্থ যেখান থেকেই আসুক তা শেষ পর্যন্ত জনগণকেই পরিশোধ করতে হয়। এখনই ঋণ ও করের বোঝায় জনজীবন অতীষ্ঠ। এনিয়ে বহুবার বহুভাবে বলা হয়েছে যে, এধরনের ব্যয়বৃদ্ধি মূলত অপচয়ের শামিল। এখন যেসব প্রসঙ্গের উল্লেখ করা হয়েছে পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় কেন তা ভাবা হয়নি? এব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের মতামত না নিয়ে কেন প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে? অন্যদিক এ কথাও উল্লেখ করা দরকার আলোচ্য ফ্লাইওভারের মূল পরিকল্পনাগত ত্রুটিও রয়েছে।
রাজধানীর যানজট নিরসনের বিবেচনায় এ পর্যন্ত যেসব ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে তা কতটা সুবিধা দিয়েছে, বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। এতে হয়ত কোন কোন এলাকায় সুবিধা হয়েছে। তবে তা সামগ্রীক অর্থে জনসাধারণের জন্য তেমন কোন সুবিধা বয়ে আনতে পারেনি। অন্যদিকে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে বছরের পর বছর যেভাবে অর্থব্যয় ও অবর্ণনীয় জনদুর্ভোগ হচ্ছে তা অবর্ণনীয়। কেবলমাত্র একটি প্রকল্প নয়, চলমান প্রতিটি প্রকল্পের বেলাতেই ব্যয় বৃদ্ধির ঘটনা ঘটছে। এর সাথে দুর্নীতির বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। প্রকল্প প্রণয়ন তার বাস্তবায়নে একটু-আধটু হের-ফের হতেই পারে। তার অর্থ এই নয় যে, বছরের পর বছর প্রকল্প ঝুলে থাকবে। এজন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ব্যয় বাড়িয়ে দেয়া আমাদের মতো একটি দেশের জন্য দুঃখজনক। অর্থ সাশ্রয় ও জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে দ্রুত শেষ করা কাম্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।