পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ৪৭ বছরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের প্রাপ্তির পাল্লা ভারি বলে দাবি করা হয়েছে। গতকাল এক সেমিনারে এ দাবি করা হয়। সেমিনারে বৈঠকের মূল প্রবন্ধে ভারতের সঙ্গে সামরিক চুক্তির প্রয়োজনীয়তার লক্ষ্যে যুক্তি তুলে ধরা হয়। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, প্রতিরক্ষা চুক্তির অন্তর্নিহিত বিষয় অনুধাবন ও উল্লেখ না করে দেশ বিক্রির ধুয়া তুলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিরোধিতা করা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা চুক্তি যতটা সামরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিকনির্ভর। যারা সামরিক চুক্তি বিরোধিতা করছেন তাদের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজকে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশ-ভারতের সামরিক চুক্তি নিয়ে কথা বলছেন। অথচ তিনি একই কথা পার্বত্য শান্তি চুক্তির সময়েও বলেছিলেন। তাই আমাদের কথা খুব পরিষ্কার যে, এগুলোকে শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে হবে। বাংলাদেশের সমাজ রাজনীতি যে পাকিস্তানিকরণ প্রক্রিয়া চলছে তা বন্ধ করতে হবে। গতকাল গুলশানের হোটেল লেকশোরে ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। একই বৈঠকে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক বলেন, ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তির পাল্লাটাই ভারি। জাসদ নেতা মইনুদ্দিন খান বাদল এমপি বলেন, বাংলাদেশের অবস্থা এমন নেই যে ভারত নিরাপত্তা চুক্তি চাপিয়ে দেবে। আমরা যখন চীনের কাছ থেকে দুটো সাবমেরিন আনি; সেটা উদ্বোধনের দিন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত জানতে চান ‘সাবমেরিন দিয়ে কি করবেন’। তখন আমার খুব বলার ইচ্ছে ছিলো ‘এটা দিয়ে ডুঙ্গা বানিয়ে আমরা ঘুরব’। নিরাপত্তার এই জায়গায় আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, নিরাপত্তার বিষয়টি বাস্তবিক কারণে তাড়াহুড়া করার কিছু নেই। সহজভাবে যতটুকু অগ্রসর হয় ততটুকু প্রবাহিত হতে দেয়া উচিত।
ইনস্টিটিউট অফ কনফ্লিক্ট ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাজিজ আয়োজিত আলোচনায় বক্তৃতা করেন শাহরিয়ার কবীর, ড. কাজী খলীকুজ্জামান, মইন্দ্দুীন খান বাদল এমপি, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মুন্সি ফয়েজ আহমেদ, খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, ওয়ালিউর রহমান, ড. হারুন অর রশিদ, ড. তারেক শামসুর রহমান, ড. সাদেকা হালিম, ড. দেলোয়ার হোসেন, এয়ার কমোডর ইশফাক ইলাহী চৌধুরী, এম শফিউল্লাহ, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, ড. জিনাত হুদা, মুহম্মদ নুরুল হুদা, হারুন হাবিব, অজয় দাশগুপ্ত, পীযুষ বন্দোপাধ্যায়, তুরিন আফরোজ, মাহজাবিন খালেদ এমপি, মাসুদা ভাট্টি, রোকেয়া কবির, সুভাস সিং রায়, ড. আশিকুর রহমান, শ্যামল দত্ত, নঈম নিযাম, নূর খান, মোজাম্মেল বাবু প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আই ক্ল্যাডসের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোঃ আবদুর রশিদ।
মইনুদ্দিন খান বাদল বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য এবং আমরা কৃতজ্ঞ জাতি। কিন্তু তাদের এটা ভুলে গেলে চলবে না এই অবদানের প্রতিদান আমরা দিয়েছি। যার কারণে উত্তর-পূর্ব ভারতে সামরিক খাতে বিগত ৪৬ বছরে খরচ করা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সম্পূর্ণভাবে বেঁচে গেছে। আর আমাদের স্বাধীনতা অনেক দামে, অনেক ত্যাগে কেনা। এটা যেন তাদের মাথায় থাকে। তিনি আরও বলেন, দ্রæততার সাথে আমাদের এমন কোনো অবস্থার সৃষ্টি হয়নি যে, বাংলাদেশের ওপর ভারত সামরিক নিরাপত্তা চুক্তি চাপিয়ে দেবে। ভারতীয় নাগরিকদের বলছি আপনারা আমাদের উপর কোনো চুক্তি চাপিয়ে দিবেন না, আমরা এখন সেই অবস্থায় নেই। বরং অবস্থাটা এমন যে, আমাদের মাঝে অদ্ভুত ভালো একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে এবং সেটা ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে। আমাদের উচিত ভারতীয়দের স্মরণ করিয়ে দেয়া যে, তারা উজানের দেশ হিসেবে বিশ্বের কোনো যুক্তি ওনারা মানেন নাই। এটা যেনো ওনাদের মাথায় থাকে। যেটা ওনারা রাখেননি।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয়দিকই সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক। যা ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম তখন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এবং তাদের এদেশীয় সহযোগী জামায়াতি ইসলাম এবং অন্যান্য সহযোগীরা পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন ‘যদি পাকিস্তান না থাকে তবে দুনিয়ার বুকে ইসলামের নাম-নিশানা থকবে না’। একই কথা বলেছিলেন জামায়াতি ইসলামের প্রধান গোলাম আযমও। ওরা (ভারত-বাংলাদেশের সামরিক চুক্তির বিরোধিতাকারী) ’৭১ সালে পাকিস্তান এবং ইসলামকে এক করে দেখেছেন। যার ফলে আমাদের দেশে ইসলামের নামে গণহত্যাসহ অনেক মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের বলা হয়েছে ইসলামের শত্রæ, পাকিস্তানের শত্রæ এবং ভারতের এজেন্ট। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই প্রমাণ হয়ে গেছে বাংলাদেশের শক্র কে, আর বন্ধু কে। ৭৫-এর পর থেকে বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে পাকিস্তানপন্থার মৌলবাদ সাম্প্রাদায়িকতার আধিপত্য তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সমস্ত কাজকর্মে এই পন্থার প্রতিফলন দেখতে পাই। বিশেষ করে জামায়াত-বিএনপি যখন যেকোনো বিষয় নিয়ে কথা বলে তখন তা আরও স্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে যে জঙ্গি হামলা হচ্ছে সেটা পাকিস্তানের স্বার্থে। পাকিস্তান বাংলাদেশকে আবার একটি মুসলিম রাষ্ট্র বানাতে চায়। দেশকে আফগানিস্তান কিংবা জিয়ার পাকিস্তানের মতো বানাতে চায়। এখন আমরা সেটা হতে দেবো কি-না এটাই প্রশ্ন। কিন্তু আমি বলবো যে, না। এটা আমরা কিংবা আমাদের বর্তমান সরকার এটা হতে দিবে না।
পিকেএসএফ’র চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, দুই দেশের মধ্যকার যে কোনো সম্পর্কের বহুমাত্রিকতা রয়েছে। শুধু তিস্তা নিয়ে আমরা এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে অন্যান্য সমস্যা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। শুল্ক বাহির্ভূত সমস্যা নিয়েও আলোচনা করা উচিত। দেশে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে, সেখানে ভারতের বিনিয়োগ আসবে। টেকসই উন্নয়নে জোর দিতে হবে। স্থল সীমানা সমাধান হয়েছে, পানি সীমানা নিয়ে সমস্যা সমাধান হয়েছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে তিস্তা আটকে আছে। তবে সম্পর্কের বহুমাত্রিকতার অনেক বিষয় রয়েছে। একটি বিষয়ে আটকে থাকবে না। বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক বলেন, ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তির পাল্লাটাই ভারি। আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার অনেক সমস্যা সমাধান হয়েছে। যেমনÑ ছিটমহল সমস্যা। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছার অভাব নেই। রাজ্য সরকার বাধা দিচ্ছে। তারপরও আশা করছি তিস্তা সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ প্রবন্ধে বলেন, চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরে ২৭টি চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে ২৪ বিলিয়ন ডলার প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। বাংলাদেশের নৌবহরে ২টি চীনা সাবমেরিনের সংযোজন ভারতকে বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক চুক্তিতে উদ্যোগী করেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত কখনো বাংলাদেশের সামরিক প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে আবর্তিত হয়নি। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মিলে দেশ স্বাধীন করেছে। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পররাষ্ট্রনীতি পাল্টেছে। ৪৭ বছরে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি। স্থল ও সমুদ্র সীমাসহ অনেক অমিমাংসিত বিষয়ের সমাধান হয়েছে। নিরাপত্তা, অর্থনীতি, বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, নৌ ও স্থল যোগাযোগ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক অনেক গভীর। দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অনেক আগেই পথচলা শুরু করেছে। প্রবন্ধে আরো বলা হয়, প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অবয়ব আমরা জানি না। তবে সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা খর্বের শর্ত না থাকলে এবং সামরিক জোটের ক্ষেত্রে দুই দেশের সামরিক সহযোগিতা হতে বাধা নেই। রাজনৈতিকভাবে বন্ধুকে সামরিকভাবে বৈরী ভাবার কোনো যুক্তি নেই। প্রতিরক্ষা একটি ব্যাপক শব্দ। যেখানে সেনা মোতায়েন থেকে শুরু করে যুক্ত কৌশল তৈরি, ঘাঁটি ব্যবহার, যৌথ মহড়া, যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম সংগ্রহ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, প্রশিক্ষণ, তথ্য বিনিময় ও উদ্ধার, সামরিক অবকাঠামো নির্মাণ, সামরিক শিল্প স্থাপনা তৈরি অন্তর্ভুক্ত। প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় সেনা মোতায়েন ও ঘাঁটি তৈরি বা ব্যবহার ব্যতিরেকে অন্য ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী সুযোগ কাজে লাগাতে অসুবিধা নেই। প্রতিরক্ষার অন্তর্নিহিত বিষয় অনুধাবন ও উল্লেখ না করে দেশ বিক্রির ধুয়া তুলে সম্পর্ক উন্নয়নের বিরোধিতা করা হচ্ছে। যেমন প্রতিবেশী দেশ বদলানোর কোনো সুযোগ নেই, তেমনি বড় প্রতিবেশী মানে আগ্রাসন, দখলদারিত্ব, খবরদারি এবং সুবিধাবাজ ভাবার কারণ নেই। নেতৃত্বে দৃঢ়তা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও কূটনৈতিক দক্ষতাই পারে জাতীয় স্বার্থ ধরে রেখে বড় দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।