Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হালদায় রেণু উৎপাদন হ্রাস

| প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


দেশের রুই জাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে রেণু উৎপাদনের হার কমছে। এসংক্রান্ত প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে রেণু উৎপাদিত হয়েছে এক হাজার ৫৬৯ কেজি। আর চার বছরে উৎপাদন কমেছে এক হাজার ৪০২ কেজি। শতকরা হিসেবে এ হার ৮৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কার্যালয়ের এই তথ্যের সাথে ভিন্নমত পোষণ করছেন বেসরকারি গবেষকরা। তারা বলেছেন, পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। ৩০ বছর ধরে হালদা নদী নিয়ে গবেষণা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী আজাদি। তিনি মনে করেন, মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে হালদা নদী দিন দিন হুমকির মুখে পড়েছে। এর পেছনে নদী সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খালে সুইস গেইট নির্মাণ এবং নদীতে পতিত গৃহস্থলী ও শিল্পবর্জ্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। তার গবেষণায় উঠে এসেছে, নদীর ১১টি স্থানের বাঁক সমান করে ফেলায় মাছের বিচরণ ও প্রজনন কমে গেছে। বাঁক না থাকায় প্রাকৃতিকভাবে কোনো কুম অর্থাৎ নদীর তলদেশে গভীর খাদ থাকছে না। ফলে উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়ায় এখন মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়ার পর আর কোন ডিম ছাড়ছে না। একারণে দিন দিন নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার হার কমছে। এর বাইরে কিছু কিছু জায়গায় চর জেগে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মিঠাপানির নিরাপদ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী বিশ্বের অন্যতম জোয়ার-ভাটার নদী। এখানে প্রতিবছর এই সময়ে রুই জাতীয় মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ ডিম ছাড়ে এবং জেলেরা ডিম সংগ্রহ করে। এই ডিম জেলেদের আয়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। স্বাভাবিকভাবেই এই নদী আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্ব বহন করছে। পবিত্র কোরআনে সামুদ্রিক গোশতকে হালাল করা হয়েছে। সামুদ্রিক গোশত বলতে মাছকেই বুঝান হয়েছে। মাছ শরীরের জন্য উপকারী আমিষ। প্রাকৃতিক মাছে কোন ক্ষতিকারক উপাদান বলতে গেলে প্রায় অনুপস্থিত। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, প্রতিবেশীর বৈরী পানি নীতির কারণে দেশ বলতে গেলে পানি শূন্য হয়ে  উঠেছে। শুষ্ক মৌসুমে নদ-নদী, খাল-বিলে কোথাও পানি থাকছে না। ফলে মাছের অভয় আশ্রমগুলো দিন দিনই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবিরত শিল্প দূষণ, নদীভরাট দখল-বেদখলসহ বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্যে ভয়াবহ হুমকির মুখে  পড়েছে দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। নদীর গতিপথে রাবারড্যাম নির্মাণ ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন দিনদিনই নদীটিকে মাছ শূন্য করে তুলছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই নদীটি তার স্বাভাবিক চরিত্র হারিয়ে ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বছর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নদীর নিকটবর্তী আট প্রতিষ্ঠানের কারণে মূলত দূষিত হচ্ছে হালদার মৎস্য প্রজনন। প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর তরল বর্জ্য শোধনাগার না থাকায় ট্যানারির তরল বর্জ্য এবং গৃহস্থালী বর্জ্যরে মাধ্যমে দূষিত হচ্ছে হালদা। নদীর সাথে যুক্ত বিভিন্ন খাল ও ছোট ছোট ছড়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে এদূষণ।
হালদা নদী নিয়ে এ পর্যন্ত বহুবার লেখা হয়েছে। হালদা রক্ষার তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। হালদায় যাতে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন সুবিধা নষ্ট না হয় সেদিকে জাতীয় স্বার্থে নজর দেয়ার বিকল্প নেই। একে কেবলমাত্র একটি নদী হিসেবেই বিবেচনার সুযোগ নেই বরং দেখতে হবে জাতীয় সম্পদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। এক সময়ে এ নদী থেকে রেণু সংগ্রহ করে সারাদেশের চাহিদা মেটানো হতো। চট্টগ্রামের ৬০ লাখের বেশি মানুষের দৈনন্দিন পানি সরবরাহ করা হয় এ নদী থেকে। তাছাড়া খাগড়াছড়ি-পাতাছড়ি থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত ৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীর দুইপাশের মানুষ এই নদীর উপর নির্ভরশীল। দেশের রুই জাতীয় মাছের একমাত্র প্রকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী নষ্ট হয়ে গেলে তার কত মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে। দেশে এখন এমনিতেই মাছের তীব্র সংকট রয়েছে। কৃত্রিমভাবে চাষ করা মাছ নিয়ে এমনিতেই নানা প্রশ্ন রয়েছে। তার উপর  যদি প্রাকৃতিক মাছের প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যায় তাহলে দেশে মাছের সংকট দেখা দেবে। হালদাকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক আন্তরিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ  নেবেন এটাই প্রত্যাশিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন