Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তীব্র যানজটে স্থবির বন্দরনগরী

| প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : তীব্র যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। উন্নয়নে ধীরগতি, সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি, ফুটপাত, সড়ক ও রাস্তা দখলের ফলে মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ভারী যানবাহনের চাপে দেশের অর্থনীতির মূলচালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। যানজটে আটকা পড়ে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর বেশিরভাগ এলাকা ছিল যানজটে অচল। আর এ কারণে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়। বেপরোয়া খোঁড়াখুঁড়ির ফলে প্রতিটি সড়কে উড়ছে ধুলোবালি। মহানগরী এখন যানজট আর ধুলার নগরীতে পরিণত হয়েছে।
নগরীর প্রধান সড়কের মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলছে। পাঁচ কিলোমিটার এ সড়ককে ঘিরে মহানগরীর বিশালঅংশে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে অনেক আগে। ভিআইপি সড়ক হিসেবে পরিচিত বিমানবন্দর সড়কে তিনটি সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। পুরাতন সেতু ভেঙে নতুন সেতু তৈরি করতে বিকল্প সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হচ্ছে।
আর এর মধ্যে ওই সড়কে পাইপ লাইন বসানোর কাজ করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এতে করে বিমানবন্দর সড়কে যানজট এখন স্থায়ীরূপ নিয়েছে। মহানগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় ওয়াসার পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলছে। সড়কের মাঝ বরাবর বিশাল গর্ত করে পাইপ লাইন বসানো হচ্ছে। পাইপ লাইন বসানোর পর ওইসব গর্ত বালি দিয়ে ভরাট করে চলে যাচ্ছে ঠিকাদারের লোকজন।
আর গর্তে ভারী যানবাহন আটকা পড়ে ঘটছে নিত্য দুর্ঘটনা। গতকাল সকালে নগরীর সল্টগোলা এলাকায় স্টিলের প্লেটবাহী একটি বড় লরি এমন একটি গর্তে আটকা পড়ে। এর ফলে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে একটি ক্রেন এনে গর্ত থেকে ওই লরিটি তুলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।
মহানগরীর বেশিরভাগ সড়ক খানাখন্দে ভরা। সংস্কার না হওয়ায় এসব সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মহানগরীতে ছোট যানবাহনের সংখ্যা দ্রæত বাড়ছে। অগণিত রিকশার ছড়াছড়ি সড়কজুড়ে। রয়েছে ব্যাটারিচালিত অবৈধরিকশা ও টমটম। বৈধ যানবাহনের পাশাপাশি অবৈধ যানবাহনের ঢল নগরজুড়ে। যানবাহনের তুলনায় নগরীতে সড়ক অনেক কম। তার উপর অবৈধ যানবাহনের ঢল নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাকে অচল করে দিয়েছে।
মহানগরীর অন্য এলাকায় দিনের বেলা ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও ব্যতিক্রম চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার। এ কে খান গেইট থেকে শুরু করে পোর্ট কানেকটিং রোড হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর সদরঘাট, ইপিজেড থেকে শুরু করে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে দিনের বেলাও ভারী যানবাহন চলাচল করে। বন্দর অভিমুখী আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহনে ঠাসা থাকে এসব এলাকার প্রতিটি সড়ক। স্থানীয়রা বলছেন, বন্দর-পতেঙ্গা এলাকায় গড়ে উঠা বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনালের কারণে যানজট স্থায়ীরূপ নিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনাল স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও আইন ভঙ্গ করে ছোট বড় অন্তত ১২টি টার্মিনাল গড়ে উঠেছে। বন্দর দিয়ে যত রফতানি পণ্য পরিবহন হয়, তার ৯০ শতাংশই এসব ডিপোতে কন্টেইনারে বোঝাই হয়। এরপর ডিপো থেকে বন্দর দিয়ে জাহাজে তুলে দেয়া হয় কন্টেইনার। আবার বন্দর দিয়ে কন্টেইনারে আমদানি হওয়া ৩৭ ধরনের পণ্য বন্দর থেকে সরাসরি এসব ডিপোতে নিয়ে খালাস করতে হয়। এসব টার্মিনাল থেকে কন্টেইনার আনা-নেয়ার ফলে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা বন্দর-পতেঙ্গা এলাকায় তীব্র যানজট হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কন্টেইনার টার্মিনালগুলোর আশপাশের সড়ক দখল করে কন্টেইনার মোভার ও লরির মতো ভারী যানবাহন রাখা হচ্ছে। এ কারণেও এসব এলাকায় যানজট হচ্ছে। এসব বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনাল সরিয়ে নেয়ার দাবিতে বন্দর-পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের এক অনুষ্ঠানে জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এসব টার্মিনাল মহানগরী থেকে সরিয়ে নেয়ার দাবি তোলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। তিনি বলেন, বন্দর-পতেঙ্গা এলাকায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বিমান ও নৌঘাঁটি, রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেলের তিনটি ডিপোসহ ১১টি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) থাকার পরও সেখানে ১২টি কন্টেইনার টার্মিনাল গড়ে তোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। ওই এলাকায় যানজটের মূলে এসব কন্টেইনার টার্মিনাল অভিযোগ করে তিনি বলেন, ওই এলাকার জনগণ ক্ষোভে ফুঁসছে।
এদিকে গত ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দর উপদেষ্টা কমিটির ১১তম সভায় চট্টগ্রাম বন্দরের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলো মহানগরীর বাইরে সরিয়ে নেয়ার সুপারিশ করা হয়। সভায় কমিটির সদস্যরা নগরীর পতেঙ্গা ও ইপিজেড এলাকায় অবস্থিত কন্টেইনার ডিপোর কারণে নগরীতে যানজট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তারা বলেন, ডিপোর কন্টেইনারবাহী গাড়ি চলাচলের কারণে সড়কজুড়ে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। বন্দর উপদেষ্টা কমিটির ওই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে স্থানীয়রা দ্রুত তা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তীব্র

৫ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ