Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউরোপ-ব্রিটেনে সতর্কাবস্থা

তীব্র খরা, পানি ও জলবিদ্যুৎ সঙ্কট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

আবহাওয়া পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে চরম দাবদাহ থেকে শুরু করে ঘন ঘন বন্যা, দাবানল, খরা এবং শস্যহানি ঘটাচ্ছে। অনান্য অঞ্চলের পাশাপাশি সমৃদ্ধ বৃহত্তর ইউরোপও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ফ্রান্স, রোমানিয়া, স্পেন, পর্তুগাল এবং ইতালিকে শস্যহানির মোকাবেলা করতে হচ্ছে। জার্মানি, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, সেøাভেনিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

ইতালির পো নদীর অববাহিকা সর্বোচ্চ স্তরের খরার সম্মুখীন। পাঁচটি ইতালীয় অঞ্চলে জরুরী খরা অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে এবং পানি সঙ্কট পৌরসভাগুলিকে পানি ব্যবহারে একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করতে বাধ্য করেছে। ফ্রান্স ও ব্রিটেনেও পানির ব্যবহার সীমিত করার অনুরূপ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইবেরিয়ান উপদ্বীপ জুড়ে পরিস্থিতিও কঠিন। স্পেনে বর্তমানে জলাধারগুলিতে সঞ্চিত পানির পরিমাণ গত ১০ বছরের গড় থেকে ৩১ শতাংশ কম। পর্তুগালে, জলবিদ্যুৎ শক্তির উৎপাদন আগের ৭ বছরের গড়ের তুলনায় অর্ধেক। দেশগুলির রুক্ষ-শুষ্ক মাটি বিধ্বংসী দাবানলের জন্য আদর্শ পরিস্থিতি সরবরাহ করছে।

সুইস আল্পসের ওবভাহ্ডেনের পাহাড়ি স্রোত শুকিয়ে যাচ্ছে। আলপাইন দেশটির পশুপালকে ক্ষুধা-তৃষ্ণা থেকে বাঁচানোর জন্য নীচের হ্রদ থেকে চারণভূমিতে তাড়িয়ে নিতে গত সপ্তাহে সামরিক বাহনী ও হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছে। ইটিএইচ জুরিখ গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি-আবহাওয়া গতিবিদ্যার অধ্যাপক সোনিয়া সেনেভিরত্নে বলেন, ‘সুইজারল্যান্ডে আমরা খরার ধারণায় অভ্যস্ত নই। আমরা নিজেদেরকে ইউরোপের পানির নিরাপত্তা আধার হিসাবে দেখি। কিন্তু যেভাবে হিমবাহ সঙ্কুচিত এবং গ্রীষ্মের দাবদাহ আরও চরম হয়ে উঠছে এটি ক্রমশ অবাস্তব হয়ে উঠছে।’

পানি ঘাটতি পর্তুগাল থেকে পূর্ব ইউরোপ এবং দক্ষিণ ইংল্যান্ড থেকে ইতালি পর্যন্ত মহাদেশে ব্যাপক খরার জন্ম দিচ্ছে। ফ্রান্সে গ্রীষ্মের তৃতীয় দাবদাহ বসতবাড়ি, শিল্প, পরিবহন এবং পর্যটনের পাশাপাশি কৃষি ও কৃষিখাতে আঘাত হানছে। ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ খরা মোকাবেলা করতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বঁন শুক্রবার একটি বিশেষ সঙ্কট ইউনিট সক্রিয় করেছেন। ব্রাসেল্সের গত বছর অনুমান করেছিল যে, খরা-সম্পর্কিত ক্ষতির জন্য প্রতি বছর ইইউকে প্রায় ৯ বিলিয়ন ইউরো গচ্চা দিতে হবে। আর যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা আরও ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তাহলে বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ হবে ৪০ বিলিয়ন ইউরো।

ব্রিটেন তাপমাত্রা প্রথমবারের মতো নজিরবিহীন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হওয়াতে ১৯৩৫ সালের পর থেকে এবারে জুলাই ইংল্যান্ডে সবচেয়ে শুষ্কতম মাস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। চরম আবহাওয়া ইতিমধ্যেই দেশটির তিনটি পানি সংস্থাকে হোসপাইপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য করেছে, ব্রিটেন এবং ওয়েল্শ’র প্রায় ২.৪ মিলিয়ন মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। শুক্রবার, ব্রিটেনের আবহাওয়া সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে যে, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দেশটির অনেক অংশ খরা কবলিত হবে।

পানির স্তর রেকর্ড পরিমাণ নিচে নেমে যাওয়ায় পোল্যান্ড কর্তৃপক্ষ দেশের দীর্ঘতম নদী ভিস্তুলা সহ অন্যান্য নদীগুলিতে বিধিনিষেধ চালু করেছে এবং নেদারল্যান্ডস এসপ্তাহে ‘জাতীয় পানি ঘাটতি’ ঘোষণা করেছে। গত মাসে ওয়ারশতে ভিস্তুলা জুড়ে ফেরি পরিষেবাগুলি এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়। যদি দ্য হ্রাইন নদীর পানির স্তর আরও ৭ সেমি কমে যায়, তাহলে ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘ শিল্প মহাসড়ক মালবাহী যানবাহনের জটে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়বে। আয়তনের দিক থেকে পশ্চিম ইউরোপের মিঠা পানির দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস লেক কনস্ত্যান্সে পানির স্তর ১৯৪৯ এবং ১৮৭৬ সালের পর থেকে সর্ব নিম্নে রয়েছে।

ইইউ ইউরোপীয়ান ড্রট অবজারভেটরির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ১০ জুলাই পর্যন্ত অঞ্চলটির ১৩ শতাংশ অঞ্চল গুরুতর সতর্কতা অবস্থায় ছিল এবং ৪৫ শতাংশ সতর্ক অবস্থায় ছিল এবং তারপর থেকে খরা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ফরাসী আবহাওয়া অফিস মিতিও ফ্রান্স জানিয়েছে, সারা দেশে ভূপৃষ্ঠের মাটির আর্দ্রতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করছে এবং ১৯৬১ সালের মার্চের পর এবছরের জুলাই ইতিহাসের দ্বিতীয়-শুষ্কতম মাস।
পানির সঙ্কট সমগ্র ইউরোপ ও ব্রিটেনে জলবিদ্যুৎ এবং তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম কমিয়ে দিয়েছে বা স্থগিত করে ফেলেছে। অনেক ইউরোপীয় দেশে জুলাইয়ের প্রথম দিকে জল বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০১৫-২০২১ সালের গড় থেকে কম ছিল, বিশেষ করে ইতালি এবং পর্তুগালে। নরওয়ে, স্পেন, রোমানিয়া, মন্টেনিগ্রো এবং বুলগেরিয়ার মতো দেশগুলিতেও জলবিদ্যুৎ হ্রাস পাচ্ছে। পানি সঙ্কটের কারণে কিছু ফরাসি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকেও উৎপাদন কমাতে হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বৈশি^ক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট অস্বাভাবিক শুষ্ক শীত, সমানভাবে শুষ্ক বসন্ত এবং গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহের সংমিশ্রণকে দায়ী করেছেন। সেনেভিরত্নে বলেন করেন, ‘একটি চরম উষ্ণ আবহাওয়ার ঘটনা যা প্রতি ১০ বছরে একবার মানব-প্ররোচিত জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াই ঘটত, এখন তা প্রতি ১০ বছরে তিনবার ঘটছে। সম্ভবত এক দশকের মধ্যে এটা এক গ্রীষ্ম পর পর নিয়মিত ঘটবে, এবং যদি আমরা কার্বন নির্গমন বন্ধ না করি তবে এটি আরও খারাপ হবে।’ সূত্র : ফাইনান্সিয়াল টাইম্স, ইউরোপিয়ান কমিশন।



 

Show all comments
  • এন,আই,সম্রাট। ৮ আগস্ট, ২০২২, ২:১২ পিএম says : 0
    উন্নত দেশগুলোর স্বেচ্ছাচারিতায় সারা বিশ্ব আজ তাবদাহে পুড়ছে! কথায়,কথায় আমেরিকা ও ইউরোপিয়ানরা যেভাবে বোমা হামলা করেছে। তার খেসারত এখন আমরাও দিচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ