হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
কামরুল হাসান দর্পণ : খুব সাধারণভাবে যদি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের দিকে কেউ দৃষ্টিপাত করে, তবে দেখা যাবে তাতে ভারতের ব্যাপক একটা প্রভাব বাংলাদেশের ওপর রয়েছে। এ প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। বলা যায়, ভারতের প্রভাব বাংলাদেশকে গ্রাস করে ফেলছে। অথচ আমাদের কেউ কেউ ভারতের সাথে সম্পর্ককে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ বলে আখ্যায়িত করেন। ভারতের আচরণে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তো নেই-ই বরং এক ধরনের দাদাগিরি ভাব রয়েছে। বন্ধুর ওপর বন্ধুর প্রভাব থাকা স্বাভাবিক, তবে সে প্রভাব হতে হয় সমান্তরাল, একতরফা বা গ্রাস করার মানসিকতার নয়। অর্থাৎ এক বন্ধু আরেক বন্ধুর সুখে-দুঃখে শামিল হয়ে থাকবে। একজনের দুঃখ আরেকজন বুঝবে, সহমর্মী হবে। আমরা যে ভারতের সাথে বন্ধুত্বের কথা বলছি, এ বন্ধুত্বে, বন্ধুর সাথে যে ধরনের আচরণ ও সম্পর্ক হওয়ার কথা, তা কখনই দেশের মানুষ দেখেনি। দেশের মানুষ ভালো করেই বুঝতে পারে ভারত বন্ধুত্বের মোড়কে বাংলাদেশের সাথে প্রচ্ছন্ন ধমকের সম্পর্ক বজায় রেখেছে। বলাবাহুল্য, কারো কাছে যদি সম্পদ ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকে এবং সে দুর্বলতার পরিচয় দেয়, তখন লুটেরা ধমক দিয়ে সব নিয়ে যাবেÑ এটাই স্বাভাবিক। শহর ও গ্রামে এ শ্রেণির কিছু লোক দেখা যায়। তারা যদি দেখে দুর্বল লোকের কাছে মূল্যবান সম্পদ রয়েছে, তখন ধমক দিয়ে তা কেড়ে নেয়। কারণ সে জানে দুর্বল ব্যক্তির পক্ষে তার ধমক প্রতিরোধ করার মতো সক্ষমতা নেই। বাংলাদেশের সাথে ভারত যেন অনেকটা এরকম আচরণ করছে। একটি শ্রেণি প্রায়ই বলে, বাংলাদেশের তিনদিকে ভারত, আমাদের এ বাস্তবতা মানতে হবে। তাদের কথার সুর হচ্ছে, ভারতকে সমঝাইয়া চলতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত আমাদের ঘিরে আছে বলেই কি আমাদের স্বাধীনচেতা মনোভাব বিলিয়ে দিতে হবে? এ জন্যই কি আমরা স্বাধীন হয়েছি? ইউরোপে তো এমন অনেক দেশ আছে যা বড় বড় দেশের মাঝখানে পড়ে আছে। যেগুলোর সীমান্ত একের সাথে অপরের মিলে আছে। তাই বলে কি বড় দেশগুলো ভারতের মতো তাদের সাথে একতরফা আচরণ করে বা প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে? ভারত বাংলাদেশকে ঘিরে আছে বলে কি তার সব কথা আমাদের মানতে হবে? দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ভারতকে তার অবারিত চাহিদা পূরণ করে দিতে দিতে তার জিহŸাকে আমরা এতই বড় করে দিয়েছি যে, এখন সে তার এ জিহŸা সামলাতে পারছে না। সে ভালো করেই জানে, তার আবদার রক্ষা এবং পূরণ করার মতো মহল আমাদের দেশে রয়েছে। এ মহল হাত এমনভাবে প্রসারিত করেছে, যে ভারতকে দিতে পারলেই যেন ধন্য হয়। বিপরীতে নিজের ন্যায্য চাওয়াটুকু চাইতে লজ্জায় মিইয়ে যায়। এর কারণ কি? কারণ আর কিছুই নয়, তারা মনে করে ভারতকে দিতে ও খুশি করতে পারলে তারা সুখে-স্বচ্ছন্দে থাকতে পারবে। দেশের সার্বভৌমত্ব গেল কি থাকলÑ এ নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। দেশের মানুষ হায় হায় করে মাথাকুটে মরলেও তাদের কিছু যায় আসে না। এটা একটি জাতির জন্য দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কী হতে পারে!
দুই.
ভারত সামরিক সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে বেশ উতলা হয়ে উঠেছে। সে এতটাই উদগ্রীব, এ চুক্তি করতে না পারলে তার শান্তি হচ্ছে না। ভারতের মিডিয়া থেকে শুরু করে তার আমলা-মন্ত্রীরা এতটাই উতলা হয়ে উঠেছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফরেই যেন চুক্তিটি করে ফেলা হয়। কিছুতেই যেন মিস না হয়। ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি, সমঝোতামূলক চুক্তিটি স্বাক্ষরের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিরোধী দল বিএনপি তো বারবার বলছে, সমঝোতা স্মারক চুক্তি হচ্ছে প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রথম ধাপ। এটি শেষ পর্যন্ত প্রতিরক্ষা চুক্তিতেই পরিণত হবে। আমাদেরকে পর্যুদস্ত করার জন্য, পদানত করার জন্য, আমাদের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করার জন্যই দিল্লি তাদের পরীক্ষিত বন্ধুকে দিয়ে এই চুক্তি করাচ্ছে। বিএনপির এ অভিযোগ সত্য হলে তা হবে আমাদের স্বাধীন অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমাদের সার্বভৌমত্ব অনিবার্য ঝুঁকির মধ্যে পড়বে কারণ ভারত এমন একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি চাইছে যার লক্ষ্য, প্রশিক্ষণ, সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি এবং দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। এ চুক্তির মাধ্যমে ভারতের এ ইচ্ছাই প্রকাশিত হচ্ছে যে, তার কাছ থেকে বেশি পরিমাণে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র বাংলাদেশ কিনুক। এ ছাড়া কিছু কিছু সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে যৌথ অভিযান চালানো হোক। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে অবাধে ভারতীয় সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন এবং রাজ্যগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। দেখা যাচ্ছে, ভারতের এসব চাওয়ার মধ্যে বাংলাদেশের কিছুই নেই। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, সে নিজেই বাংলাদেশকে ঋণ দিয়ে অস্ত্র ব্যবসা করতে চায়। অর্থাৎ তার দেয়া ঋণের টাকায় অস্ত্র কেনা হোক। তার অস্ত্রের গুণগত মান কি বা কেমন তা আমরা জানি না। তবে এটা জানি, ভারত নিজেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। যে নিজেই অস্ত্র আমদানি করে, সে কিনা আমাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে চাইছে! বাংলাদেশের একটি বিষয় থাকতে পারে আর সেটি হচ্ছে অস্ত্র কেনা। তবে বাংলাদেশ তো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে চীন থেকে অস্ত্র কিনছেই। অস্ত্র কিনতে ভারতের কাছে যাওয়ার তো কোনো প্রয়োজনই নেই। চীন বহুদিন ধরেই আমাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে। আমাদের বেশির ভাগ অস্ত্রই চীনের। বলা যায়, স্বাধীনতার পর থেকেই চীন আমাদের অস্ত্র কেনার মূল বাজার। চীনের সাথে ২০০২ সালে সামরিক খাতে কারিগরি সহায়তায় একটি সমঝোতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এ চুক্তি শুধু একটি খাতেই সীমাবদ্ধ। অথচ ভারত যে চুক্তি চাচ্ছে, তাতে অসংখ্য ধারা-উপধারা রয়েছেÑ যার সবই ভারতের স্বার্থে এবং তার অনুক‚লে। এমন একতরফা চুক্তি বাংলাদেশ করবে কেন? এতে বাংলাদেশের লাভ কী? এক কথায় কোনোই লাভ নেই। যত লাভ ভারতের। বাংলাদেশ নিজ থেকে এ ধরনের কোনো চুক্তি করার আগ্রহও কোনো দিন প্রকাশ করেনি। কারণ সামরিক সহায়তামূলক কোনো কর্মকাÐে ভারতের সহায়তা বাংলাদেশের প্রয়োজন নেই। যেখান থেকে ভালো অস্ত্র কেনা যায়, বাংলাদেশ তার স্বাধীন মতো সেখান থেকেই অস্ত্র কিনছে। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের এই স্বাধীন ইচ্ছায় ভারত তার স্বার্থে অনেকটা বাগড়া দিয়ে বসছে। অতি আগ্রহ এবং প্রচ্ছন্ন চাপ সৃষ্টি করে একটি সামরিক চুক্তি করিয়ে নিতে চাইছে। ঋণ দিয়ে অস্ত্র কেনাতে চাচ্ছে এবং তার দেশের সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের ভূখÐ ব্যবহার করতে চাচ্ছে। প্রয়োজনে যৌথ অভিযানের কথাও বলছে। এক কথায় এ চুক্তির মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে চাইছে, যেখানে বাংলাদেশের বিন্দুমাত্র স্বার্থ নেই। একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। তা হচ্ছে, সামরিক সমঝোতামূলক চুক্তির সাথে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি গুলিয়ে ফেলা। কারো কারো বক্তব্য, এ চুক্তির বিনিময়ে তিস্তা চুক্তি আদায় করা হোক। অথচ তিস্তা চুক্তির সাথে এ চুক্তির কোনো বিনিময় হতে পারে না। সামরিক বিষয় সম্পর্কিত চুক্তি পুরোপুরি আলাদা একটি চুক্তি, যার সাথে বাংলাদেশের স্বাধীন সত্তার বিষয়টি জড়িয়ে আছে। এর সাথে কোনো চুক্তিরই তুলনা হয় না। তিস্তা চুক্তির বিষয়টি বহুদিন ধরেই ঝুলে আছে। ভারত নানা তালবাহানায় তা করছে না। এখন সামরিক সমঝোতামূলক চুক্তির প্রসঙ্গ আসায় তিস্তার চুক্তি নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। এটা মোটেও সমীচীন নয়। দুটি চুক্তি একেবারে দুই মেরুর। একটির বিনিময় আরেকটি হতে পারে না। বরং এমন নতুন চুক্তি যদি হয়, যাতে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সমান স্বার্থ রয়েছে, সেক্ষেত্রে বিনিময় হতে পারে। কাজেই তিস্তা চুক্তি ও সামরিক সমঝোতা চুক্তির বিষয়টি এক পাল্লায় রাখা কোনোভাবেই উচিত নয়।
তিন.
সামরিক সমঝোতামূলক চুক্তির বিরুদ্ধে যখন দেশের মানুষ সোচ্চার, তখন সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে ইদানীং সরাসরি বলা হচ্ছে, ২০০১ সালে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং আমেরিকা যোগসাজশে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। সরকারের তরফ থেকে এ ধরনের বক্তব্যে মনে হতে পারে, সরকার প্রচÐ ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে সরকারের এ ধরনের অবস্থান নেয়া নিয়ে এক ধরনের দ্বিধাদ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের মনে হতে পারে, তাহলে কি ভারতের সাথে বর্তমান সরকারের কোনো টানাপড়েন চলছে? তার সাথে কি সম্পর্কের অবনতি হয়েছে? তাহলে কি সামরিক সহযোগিতা চুক্তি করবে না? এসব প্রশ্ন মনে উদয় হওয়া খুবই সঙ্গত। তবে সচেতন মানুষ মাত্রই বোঝেন, এটি সরকারের এক ধরনের কৌশল ছাড়া কিছুই নয়। লোক দেখানোও বটে। চুক্তির আগে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা যাতে জনগণ মনে করতে পারে, সরকার হয়তো চুক্তিটি করবে না। যারা বোঝেন, তারা ঠিকই বোঝেন, সরকারের এটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কৌশল। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে চুক্তিকে আড়াল করতে চাইছে। তা না হলে যে সরকার ভারতের খুবই পছন্দের এবং সমর্থনীয়, তার বিরুদ্ধে কথা বলার কোনো কারণ নেই। এটা দেশের একজন সাধারণ নাগরিকও বুঝতে পারে। কারণ সাধারণ মানুষ ইতোমধ্যে জেনে গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারত প্রকাশ্যে এসে কীভাবে এ সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করেছিল। এ ধরনের সম্পর্ক হঠাৎ করেই শিথিল হয়ে যাবে, এটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। যে দলের নেতা-কর্মীরা ভারতের প্রতি অন্ধ ভক্তিতে নিমগ্ন সে দল আর যাই হোক, ভারত অসন্তুষ্ট হয় এমন কথা ও কাজ করবে না। আমরা দেখেছি, এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে অনেকগুলো চুক্তি হয়েছে, সেসব চুক্তিতে কী আছে, তা কখনই প্রকাশ করা হয়নি। অনেকে মনে করছেন, এ ধরনের চুক্তি করার জন্যই সরকার হঠাৎ করে ভারতবিরোধী বক্তব্য দেয়া শুরু করেছে। যাতে চুক্তি করে এলেও কেউ বুঝতে না পারে, চুক্তিটি করা হয়েছে। এখন কী ধরনের চুক্তি হবে আপাত প্রকাশিত হলেও প্রধানমন্ত্রীর সফরে তা কী রূপ লাভ করে, আগাম বলা যাচ্ছে না। তবে চুক্তি যে একটা হবেই, এটা নিশ্চিত। এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, ভারত যেমন একটার পর একটা নতুন নতুন চুক্তি হাজির করে তা বাস্তবায়নে যেমন তোড়জোড় শুরু করে, বাংলাদেশের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। সরকারের তরফ থেকেও তেমন জোরালো আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় না। কেবল এক তিস্তার চুক্তি সামনে আসে। কিছু কথাবার্তা হয়, তারপর থেমে যায়। পানিসম্পদ মন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে তিস্তা চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন চুক্তির সাথে তিস্তা চুক্তির সম্পর্ক কি? তিস্তা চুক্তি তো নতুন কোনো বিষয় নয়। এটা দীর্ঘদিন ধরেই ঝুলে আছে। এর সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ জড়িয়ে আছে বলেই ভারত তা করতে গড়িমসি করছে। ভারতের এমন মনোভাবের মধ্যে এটাই ফুটে ওঠে যে, চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ রয়েছে, সে চুক্তি সে করতে আগ্রহী নয়। শুধু সে এককভাবে লাভবান হলে, তা করতে বিন্দুমাত্র দেরি করতে চায় না। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের কাছ থেকে নানা ছুঁতোয় ভারত বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে। মানবিক কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে খাদ্য পরিবহন থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ভারি সরঞ্জামাদি তার অঙ্গরাজ্যগুলোতে নিয়েছে। নামমাত্র মাশুলে ট্রানজিটের নামে করিডোর আদায় করে নিয়েছে। এসব কার্যক্রম এত দ্রæত করা হয়েছে যে বাংলাদেশ ঠিকমতো প্রস্তুতিও নিতে পারেনি। আর আমাদের সরকার এতই দরদি যে, ভারতের কোনো কিছুতে তকলিফ হয়, তা যেন কোনোভাবেই সহ্য করতে পারে না। বরং মুখিয়ে থাকে ভারত আর কী চায় এবং তা কত তাড়াতাড়ি পূরণ করা যায়।
চার.
ভারতের সাথে সম্ভাব্য সামরিক চুক্তি নিয়ে বেশির ভাগ বিশ্লেষকই বিরোধিত করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এতে ক্ষতির কিছু নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, যে চুক্তিতে আমাদের নিজস্ব কোনো স্বার্থ নেই, সে চুক্তি করতে যাব কেন? এ ধরনের চুক্তির প্রস্তাবই বা আসবে কেন? ভারত বৃহৎ রাষ্ট্র বলে কি তার ইচ্ছা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেবে এবং তা আমাদের মানতে হবে? আমরা যদি এ চুক্তি না করি, তাতে কী এমন আসবে যাবে? বরং বাংলাদেশ অনেক বেশি মযার্দাশীল ও স্বতন্ত্র অবস্থানে থাকবে। চুক্তি হলে ভারতের সমরাস্ত্রবাহী যানবাহন আমাদের ভূখÐের ওপর দিয়ে যাবে, আবার প্রয়োজন হলে যৌথ অভিযানেও অংশগ্রহণ করতে হবেÑ এমন এক বেড়াজালের মধ্যে আমরা আটকা পড়তে যাব কেন? আরও অনেক জটিলতাও সৃষ্টি হতে পারে। ভারতের সেনাবাহিনী যে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সেখানের সন্ত্রাসী গ্রæপগুলোর বিরুদ্ধে বিগত ৫০ বছর ধরে লড়াই করে আসছে, এখন তা দমনে যদি বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করতে দেয়া হয়, তবে কি বাংলাদেশ নিরাপদ থাকবে? ওদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যে রুষ্ঠ হয়ে আমাদের এখানে হামলা করবে না, তার গ্যারান্টি কি দেয়া যায়? বরং চুক্তি হলে এসব সমস্যা ও সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাজেই আমরা মনে করি, ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত নতুন কোনো চুক্তি করা কোনোভাবেই উচিত হবে না। তা করা হলে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনার শামিল হবে। এ ধরনের ব্যাপারে বাংলাদেশের সরকারকে গভীরভাবে ভাবতে হবে। দেশের মানুষের মনোভাব বুঝতে হবে। বন্ধুত্বের খাতিরে নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো চুক্তি করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।