Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল

| প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সড়ক-মহাসড়কে প্রতিদিনই ঝরছে তাজাপ্রাণ। গত ৪৫ দিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৪২১ জন। এ হিসেবে গড়ে প্রতিদিন সারাদেশে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১০ জন। বেসরকারি হিসেবে গত ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে প্রায় ৪৭ হাজার। জাতিসংঘের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতি মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ১ দশমিক ৬ শতাংশের সমান। বেসরকারি সংস্থাগুলো সড়ক দুর্ঘটনা পর্যালোচনা করে যেসব কারণ শনাক্ত করেছে তার মধ্যে রয়েছে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালানো, নিয়ম ভঙ্গ করে ওভারলোডিং ও ওভারটেকিং প্রবণতা, চালকদের দীর্ঘক্ষণ বিরামহীনভাবে গাড়ী চালানো, ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, আনফিট গাড়ী ও থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধের আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও সড়কের বেহালদশা। দুর্ঘটনার কারণসমূহ রোধে বিভিন্ন সংস্থা যেসব সুপারিশ করেছে সেসব সুপারিশ অদ্যাবদিও বাস্তবায়িত হয়নি। এমনকি এসব বাস্তবায়নের জন্য তেমন কোন পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে না। উপরন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে আগের মতোই দায়ী ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদন্ড বা ২৫ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় বিধান রেখেই চূড়ান্ত করা হয়েছে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৭’র খসড়া।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা নতুন কিছু নয়। চালকের নামে যারা ড্রাইভিং আসনে বসে গাড়ী চালাচ্ছে তাদের অধিকাংশই মূলত প্রশিক্ষণহীন, অদক্ষ। বলার অপেক্ষা রাখে না, সড়ক পরিবহন এখন যাতায়াতের অপরিহার্য মাধ্যমে পরিণত হবার সুবাদে এখাতে অনিয়ম-দুর্র্নীতি এখন জনজীবনের জন্য মারাত্মক হুমকিতে পরিণত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকের দায় প্রধান হলেও একথা অস্বীকার করা যাবে না আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। এর নানা কারণ রয়েছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায়, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় যারা রয়েছে তারাই এসব অনিয়মের জন্য প্রধানত দায়ী। সড়ক-মহাসড়ক থেকে অবৈধ দখলদারদের বারবার উচ্ছেদ করার পরও পুনরায় পূর্বাবস্থায় ফিরে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অসতর্কতার কারণেই মূলত সম্পূর্ণ উচ্ছেদ সম্ভব হচ্ছে না। যখনই কোন নতুন সড়ক হয় তখনই দেখা যায়, প্রভাবশালীদের সম্পত্তি বাঁচিয়ে তা তৈরি করা হয়। এমনকি সাম্প্রতিকালেও খোদ রাজধানীতে তৈরি হওয়া সড়ক সম্পর্কেও এধরনের অভিযোগ রয়েছে। ফলে বাঁকে বাঁকে গাড়ী ঘুরতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব নানা কারণ থাকলেও চালকের অদক্ষতা অন্যতম কারণ হয়ে রয়েছে। এই অদক্ষতার পিছনে অনেক কিছু যুক্ত থাকলেও মূলত সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা এবং আস্কারাই নিয়ামক হয়ে রয়েছে। মূলত পরিবহন খাতকে রাজনৈতিকভবে ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাবই পড়ছে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে। গাড়ী চালাবার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে অশিক্ষিতদের কোন অবস্থাতেই এ পেশায় থাকা সঙ্গত নয়। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, অধিকাংশ চালকই নাম স্বাক্ষর করতে জানে না। অন্যদিকে ইউনিয়ন বা সংঘবদ্ধতার জোরে তাদের অনেকে পার পেয়ে যাচ্ছে।
সড়ক দুর্ঘটনা বলতে বর্তমানে দেশে যা হচ্ছে তাকে কতটা দুর্ঘটনা বলা যায় তা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। সর্বশেষ যে দুটি ঘটনায় দু’জন চালকের সাজা দেয়া হয়েছে তার একটি ছিল অত্যন্ত মর্মান্তিক। বিবরণীতে দেখা গেছে, ট্রাকচালক অত্যন্ত ঠান্ডামাথায় দুর্ঘটনার নামে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল। সে বিবেচনাতেই এটিকে হত্যা মামলা হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়। একটিতে যাবজ্জীবন ও অন্যটিতে ফাঁসির আদেশের প্রেক্ষিতে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছিলেন, এর ফলে গণপরিবহন শ্রমিকরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এর মধ্য দিয়ে চালকদের এক ধরনের দায় মুক্তির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। এখন যে খসড়া আইন তৈরি হয়েছে মূলত সেটি বাস্তবায়িত হলে আগামীতে দুর্ঘটনা বাড়বে বৈকি কমবে না। প্রকৃত বিচেনায় চালকদের আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি করা এবং সেই সাথে তাদের চাকরিবিধিকে আধুনিকায়ন করার পরিবর্তে যা করা হচ্ছে তা কোনভাবেই সমীচিন নয়। সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল বাড়তেই থাকবে অথচ তার কোন বিচার হবে না বা করা যাবে না এটা কোন সভ্য দেশের বিধান হতে পারে না। মূলত পরিবহন খাতকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করে কঠোর নিয়ম-কানুন ও শৃঙ্খলার মধ্যে আনা দরকার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন