Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষামন্ত্রীর দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য

| প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আমাদের দেশের মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে একটি শ্রেণী বহুদিন ধরেই অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। মাদরাসাগুলো জঙ্গিবাদের উৎস- এমন কথা এই শ্রেণীটি যত্রতত্র বলে বেড়ায়। তাদের এ কথায় যে কোনো সারবত্তা নেই, তা বহু প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিগত কয়েক মাস ধরে যেসব জঙ্গি হামলা ও তৎপরতা হয়েছে এবং হচ্ছে, এসব ঘটনায় যাদের সংশ্লিষ্টতা দেখা যায়, তারা কোনোভাবেই মাদরাসা শিক্ষার সাথে জড়িত নয়। বরং উচ্চবিত্ত পরিবারের ইংরেজি বা অন্য মাধ্যমের শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত। তারপরও ওই শ্রেণীটি ক্রমাগত মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে বিষোদ্গার করে চলেছে। জঙ্গিবাদ বা এর কর্মকান্ডের সাথে যে মাদরাসা শিক্ষিতরা জড়িত নয়, তা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আরো স্পষ্ট করে দিয়েছেন। গত শুক্রবার  রাজধানীর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি অডিটরিয়ামে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ফাজিল অনার্স শিক্ষার মান উন্নয়ন শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, মাদরাসা এবং মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিতরা জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত নয়। মাদরাসা জঙ্গিবাদের কারখানা- এটি সঠিক নয়। এ কথা মোটেও বলবেন না। কারণ গুলশান হামলার সঙ্গে জড়িতদের কেউ মাদরাসার ছাত্র ছিল না। তারা উচ্চবিত্ত ও উচ্চশিক্ষিত ছিল। মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী এ ধরনের কথা এর আগেও একাধিকবার বলেছেন। কাজেই যারা মাদরাসা শিক্ষাকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন, শিক্ষামন্ত্রীর এ বক্তব্য তাদের ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি।
মাদরাসা শিক্ষা আমাদের দেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সাথে জড়িত। ইসলামের প্রকৃত জ্ঞান অর্জন এবং ইসলামের সঠিক পথে চলা ও এর বার্তা মুসলমানদের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজটি মাদরাসা শিক্ষার্থীরাই করে থাকে। এখন ধনী-দরিদ্র ঊভয় ঘরের সন্তানরা মাদরাসাগুলোতে দীনি শিক্ষা লাভের জন্য পড়াশোনা করে। অভিভাবকরা সন্তানকে ইসলাম ও তাওহীদের পথে গড়ে তুলে সঠিক জীবনযাপন করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয়ার জন্য মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলে। আমরা দেখেছি, যারা মাদরাসায় পড়াশোনা করে, তারা একটি নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন ও আধ্যাত্মিক পরিবেশে বসবাস করে। সেখানে হিংসা, বিদ্বেষ বা জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে চিন্তা করার সুযোগ নেই। তাদের চিন্তা-চেতনা ও মনোজগত জুড়েই থাকে ইসলাম ও এর বিধি-বিধান। ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন করতে হবে- এমন চিন্তা কখনোই তাদের মধ্যে কাজ করে না। বরং তারা ইসলামের সঠিক শিক্ষা নিয়ে নিজেদের সঠিক পথে পরিচালিত করার মাধ্যমে ইসলামের খেদমত করে থাকে। মাদরাসা শিক্ষায় যে ধরনের নীতি-নৈতিকতা ও সুশৃঙ্খল জীবন পদ্ধতি শিক্ষা দেয়া হয়, অন্য কোনো শিক্ষায় তা খুব কমই দেখা যায়। তবে ইসলামকে ব্যবহার করে এবং এর অপব্যাখ্যায় বিভ্রান্ত হয়ে কেউ কেউ সন্ত্রাসী পথে ধাবিত হয়। ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে না জেনে তারা জঙ্গিবাদের মতো আত্মবিধ্বংসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। এর নজির আমরা গুলশান ও কল্যাণপুরের ঘটনায় দেখেছি। এটাও দেখেছি, সেখানে কোনো মাদরাসা পড়–য়া শিক্ষার্থী ছিল না। সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী। র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে যেসব জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, দেখা গেছে, তারা এবং তাদের নেতারা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত। তাদের কেউ মাদরাসা শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। তারা ইসলামকে পুরোপুরি না জেনে, ইসলামের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে এসব জঙ্গি কর্মকান্ডে জড়িতে হয়েছে। ইসলাম যে অন্যায়ভাবে হত্যা এবং আত্মহননের মতো কাজ সমর্থন করে না, এ বিষয়টি তারা বেমালুম হয়েই অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। কাজেই যারা মাদরাসা শিক্ষা এবং এর শিক্ষার্থীদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন, তাদের বোধ-বুদ্ধির উদয় হওয়া উচিত। কেবলমাত্র নিজেদের সুবিধার জন্য একটি শিক্ষা পদ্ধতি এবং এর শিক্ষার্থীদের প্রতি ঢালাওভাবে জঙ্গিবাদের অপবাদ দেয়া সমীচিন নয়।
আমরা জানি, দেশের মাদরাসাগুলো অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়ে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যায়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল। এর মাঝেই সুদীর্ঘকাল ধরে ইসলামের সঠিক জ্ঞান আহরণে তারা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আশার কথা, বর্তমান সরকার ও শিক্ষামন্ত্রীর প্রচেষ্টায় মাদরাসা শিক্ষা উন্নতকরণের প্রক্রিয়া চলছে। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষা আধুনিক শিক্ষার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে। আমরা মনে করি, মাদরাসা শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে প্রত্যেকটি মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরও পড়ালেখার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। বলা বাহুল্য, মাদরাসা শিক্ষাকে গতিশীল ও উন্নত করলে এবং মাদরাসা শিক্ষার অন্তর্গত ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষার দিকগুলো সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় সংযুক্ত করলে দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, তা হ্রাস পাবে। কারণ, ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ জানতে পারলে কেউই জঙ্গিবাদে জড়াতে উৎসাহী হবে না।



 

Show all comments
  • সাইফুল ইসলাম ২৬ মার্চ, ২০১৭, ১১:৩৪ এএম says : 0
    শিক্ষামন্ত্রীর এই দ্ব্যর্থহীন বক্তব্যের জন্য তাকে অসংখ্য মোবারকবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • রাসেল ২৬ মার্চ, ২০১৭, ১১:৩৬ এএম says : 1
    আশা করি যারা মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়, এবার তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আজাদ ২৬ মার্চ, ২০১৭, ১১:৩৮ এএম says : 0
    এই বিষয়টি নিয়ে সম্পাদকীয় লেখায় দৈনিক ইনকিলাবকে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আব্দুল গাফফার ২৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:৫২ পিএম says : 0
    যে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শিক্ষার্থীদের জানারই আসলে বাকী থেকে যায় যে, কোনকাজটি অন্যায়, কোনকাজটি অবৈধ, কোনকাজ করা অনুচিৎ, কোনকাজ ক্ষতিকারক, কোন কাজ করলে পরকালে পুরষ্কার, কোন কাজ করলে পরকালে কঠিন শাস্তি, কোন কাজ করলে ইহকাল এবং পরকালে পুরষ্কার, কোন কাজে দেশপ্রেমের বহিপ্রকাশ, কোন কাজে দেশ ও দশের নিন্দা, কোন কাজে পিতা-মাতার অসন্তুষ্টি, কোন কাজে মহান প্রভূর অসন্তুষ্টি ইত্যাদি জানাই হয় না সেই শিক্ষা উচ্চ শিক্ষা হতে পারে না
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন