Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২২ লাখ টাকা জরিমানায় ৮টি হত্যা ও ১৪টি মামলার সালিশী সমাধান দিলেন এমপি রাজু

স্বাধীনতাত্তোর ৪০টি হত্যাকান্ডের আইনী সমাধান ঘটেনি

| প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : রায়পুরার নিলক্ষারচরে আওয়ামী লীগের দুই লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত ৮টি হত্যাকান্ডসহ ১৪টি মামলার আইন ও আদালতের সমাধান আবারো তিরোহিত হয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার রায়পুরার এমপি, সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক সরকারের নেতৃত্বাধীন দুই লাঠিয়াল বাহিনীর নেতাদেরকে ডেকে দুইপক্ষকে ২২ লাখ টাকা জরিমানা নির্ধারণের মাধ্যমে এসব হত্যাকান্ড ও দাঙ্গা ঘটনার সালিশী মীমাংসা দিয়েছেন। ২০১৪ সালের পূর্বে সংঘটিত এমনিভাবে ৪টি হত্যাকান্ড ও কয়েকটি দাঙ্গা সংক্রান্ত মামলা সালিশী সমাধানের পর গত ২ বছরাধিককালে পুনরায় ৮টি হত্যাকান্ডসহ ৯টি দাঙ্গা সংঘটিত হয়। আর এ থেকে এক শ্রেণীর রাজনীতিক, লাঠিয়াল সর্দার, গ্রাম্য মোড়ল ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ফায়দা লুটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বার বারই সেখানে গ্রাম্য দাঙ্গার সৃষ্টি হচ্ছে, অকাতরে মানুষ মরছে, পঙ্গু হচ্ছে বহুসংখ্যক মানুষ। সহায় সম্পদ হারিয়ে সর্বহারা হচ্ছে শত শত মানুষ। স্বাধীনতা উত্তরকালে এই নিলক্ষারচরে কমবেশী ৪০টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু কোন হত্যাকান্ডের বিচারই আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারেনি। যুগযুগ ধরে এই কথিত সালিশ দরবারের কারণেই নিলক্ষারচরে একের পর এক দাঙ্গা, হাঙ্গামা, টেঁটাযুদ্ধ, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মত ভয়াবহ ঘটনা ঘটে চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন রায়পুরার নিলক্ষারচরে টেঁটাযুদ্ধ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামার মূল কারণ হচ্ছে গ্রাম্য মোড়লীপনা। প্রাপ্ত তথ্য মতে নিলক্ষারচরের ৮/৯টি গ্রামের প্রতিটি গ্রামেই একাধিক লাঠিয়াল বাহিনী রয়েছে। এর মধ্যে হরিপুর নামে শুধু একটি গ্রামেই রয়েছে ২২টি লাঠিয়াল বাহিনী। জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ বা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এলেই লাঠিয়াল বাহিনীগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ২০১৪ সালের পূর্বে এই গ্রাম্য মোড়লীপনাকে নিয়ে ৪টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। মামলাও হয় ৭/৮টি। এসব ঘটনা নিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তৎকালীন মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু ২০১৪ সালের গত ১৩ মে এক সালিশের মাধ্যমে মামলাগুলোর আপোষ মীমাংসার করে দেন। এতে দুইপক্ষের কয়েক দফা টেঁটাযুদ্ধে ৪টি হত্যাকান্ডের জন্য জরিমানা ধার্য করা হয় সাড়ে ২২ লাখ ও বাড়ীঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের জন্য সাড়ে ৩ লাখ টাকা। কিন্তু এ আপোষ মীমাংসার রেশ কাটতে না কাটতেই বীরগাঁও গ্রামের মহাজন বাড়ীর নাসু মিয়া ও সরকার বাড়ীর আনোয়ার হোসেনের পক্ষের লোকজনের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে টেঁটার আঘাতে ঘটনাস্থলেই ইয়াকুব আলী (৫০) নামে নাসু গ্রুপের আর এক ব্যক্তি মারা যায়।
এলাকার লোকজন জানিয়েছে, এবারের টেঁটাযুদ্ধ ও মানুষ খুনের ঘটনা শুরু হয় ২০১৬ সালের ৭ মে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। রায়পুরা থানা আওয়ামী লীগ নিলক্ষা ইউনিয়নে ৫বার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হক সরকারকে মনোনয়ন না দিয়ে তাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়। এ নিয়েই শুরু হয় নতুন করে দুই আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে বিরোধ। অভিযোগ অনুযায়ী, নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী তাজুল ইসলামের লাঠিয়াল বাহিনী জোরপূর্বক কেন্দ্র দখল করে নির্বাচনে জয়লাভ করার পর পরই শুরু হয় সেখানকার দাঙ্গা, টেঁটাযুদ্ধ, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, আর মানুষ খুনের ঘটনা। ৩টি হত্যাকান্ডের ঘটনায় রায়পুরা থানায় মামলা রুজু হলেও ৫টি হত্যাকান্ডের কোন মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। বাধ্য হয়ে নিহতদের আত্মীয়-স্বজনরা আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা রুজু করার নির্দেশ দিলেও দীর্ঘদিন যাবত ৫টি হত্যা মামলাই রায়পুরা থানা পুলিশ ধামাচাপা দিয়ে রাখে। এরপরও আরো কয়েকটি দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২/৩ শত বাড়ীঘর। গত ১৪ নভেম্বর সংঘটিত হয় সর্বশেষ দাঙ্গা-হাঙ্গামা। গত মঙ্গলবার রায়পুরার এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু রায়পুরা ডাকবাংলোয় বসে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক সরকার ও বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম’র লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসা করেন। সাথে সাথেই জনগণের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয় যে, এই মীমাংসা অতীত মীমাংসারই পুনরাবৃত্তি। অতীতে এধরনের কোন মীমাংসাই স্থায়িত্ব লাভ করেনি। এই মীমাংসায় অনেক ফোকর রয়েছে। যা থেকে অতীতের মত আবারো সংঘর্ষের আশংকা করছে এলাকার সচেতন মানুষ।



 

Show all comments
  • Nannu chowhan ২৫ মার্চ, ২০১৭, ৭:৪৮ এএম says : 0
    Binneia voter mp bolei ainer proti kono sradda
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টাকা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ