Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ

| প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাহ্যত সেবার মানোন্নয়নের কথা বলেই ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করা হয়েছিল। এরপর অনেক প্রতিশ্রæতির ফুলঝুরি ছড়িয়ে ২০১৫ সালের প্রথমদিকে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভক্ত সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন। দখলবাজি ও বিএনপি’র ভোট বর্জনের কারণে সেই নির্বাচনের মান, গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিতর্কে না গেলেও সরকারী দলের প্রভাবশালী দুই প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নগরবাসী প্রত্যাশা করেছিল, এবার হয়তো নগরীর বিদ্যমান জনদুর্ভোগ লাঘব হবে। ইতোমধ্যে মেয়রদ্বয় তাদের মেয়াদের প্রায় দুই বছর পেরিয়ে এসেছেন। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ঢাকার বহুবিধ সমস্যা নিরসনে দুই বছর হয়তো যথেষ্ট সময় নয়, তবে এই দুই বছরে ঢাকার যানজট, রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ির দুর্ভোগ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। দশকের পর দশক ধরে চলে আসা জনদুর্ভোগের কারণগুলো সুচিহ্নিত। এ কারণে মেয়রগণ নির্বাচনের আগে ঢাকার সেবামূলক সংস্থাগুলোর কর্মকাÐে প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছিলেন। এমনকি নির্বাচিত হওয়ার পরেও বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করেছেন। এর কোন বাস্তব ফলাফল বা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাÐ ও সংস্কারের কারণে যানচলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। এর ফলে উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমমুখী চলাচলকারী লাখ লাখ নগরবাসিকে প্রতিদিনই দুঃসহ যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রস্থলে নির্মীয়মান মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ শেষ করতে বছরের পর বছর ধরে সময় বাড়ানো হচ্ছে। সেই সাথে মেট্রোরেলের কাজ, ওয়াসা, ডেসকো, তিতাস গ্যাস, টিএন্ডটিসহ একেকটি সেবা সংস্থার খননে ছিন্নভিন্ন রাস্তাগুলো মাসের পর মাস ধরে শুধু চলাচলের অনুপযুক্তই থাকছে না, সামান্য বৃষ্টিতে অথবা ড্রেনের ময়লা পানি খানাখন্দকে জমে পথচারী ও যাত্রীদের জন্য বিপজ্জনক ফাঁদে পরিণত হচ্ছে। একদিকে খোঁড়াখুঁড়িতে রাস্তাগুলো দুর্গন্ধযুক্ত কাদাপানিসহ বিপদসঙ্কুল হয়ে আছে, অন্যদিকে শুকনো ধুলোবালি মিশ্রিত বাতাসের বিশ্রি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানুষের চলাচল দুরূহ হয়ে পড়েছে। তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রæতিদানকারী নগর পিতারা এসব অব্যবস্থাপনা দূর করতে কার্যত ব্যর্থ হচ্ছেন। বিভিন্ন সংস্থার কাজের সমন্বয়হীনতা, সময়মত কাজ সমাপ্ত করতে না পারা এবং নগর কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে এ অবস্থা ক্রমে জটিলতর হয়ে উঠেছে। জনভোগান্তি নিরসনে নানাবিধ দীর্ঘ ও মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনার কথা শোনাচ্ছে না সরকারের সংশ্লিষ্টরা। অথচ সেবা সংস্থাগুলোর কাজের সমন্বয় সাধনের কোন বাস্তব উদ্যোগ নিচ্ছেন না।
ঢাকার যানজট নিরসনসহ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক নতুন ফ্লাইওভার নির্মাণসহ সরকারের তরফ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। আশা করা হয়েছিল, এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যানজট নিরসনসহ নাগরিক দুর্ভোগ অনেকটা কমে আসবে। দক্ষিণ-পূর্বে এবং উত্তরে শহরের প্রবেশ মুখে একাধিক উড়ালপথ ও সেতু নির্মিত হওয়ার পরও যানজট ও জনদুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে না আসা হতাশাজনক। হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফ্লাইওভারের পাশেই রাস্তার বড় অংশ বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়িতে চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তিন বছর আগে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হলেও এখনো এর পাশের রাস্তাগুলো চলাচলের উপযোগী করা হয়নি। অথচ ফ্লাইওভারের চেয়ে নিচের রাস্তা দিয়েই বেশী যানবাহন চলাচল করে থাকে। একদিকে রাস্তাগুলোতে খোঁড়াখুঁড়ি, দখলবাজিসহ নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা, অন্যদিকে গণপরিবহনে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলায় নাকাল নগরবাসী কার্যত: একটি সর্বব্যাপী অব্যবস্থাপনার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকার যখন দেশকে উন্নয়নের মহাসরণীতে নিয়ে যাওয়ার দাবি করছে, আগামী দশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে, তখন আমাদের রাজধানী শহর বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য ও অনিরাপদ শহরগুলোর শীর্ষে স্থান পাচ্ছে। বিদেশী পর্যটক আকর্ষণ দূরের কথা, আমাদের তৈরী পোশাক রফতানি খাতের ক্রেতারাও এখন ঢাকা শহরে আসতে চান না। ঢাকা শহরের যানজট ও বিশৃঙ্খলা এখন কোটি নগরবাসীর দুর্ভোগের পাশাপাশি দেশের বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আন্তর্জাতিক ভাব-মর্যাদার ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার ও অবকাঠামো উন্নয়নের চাইতে একটি সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই মুহূর্তে বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, উন্নয়নের নামে অপচয় ও লুটপাট বন্ধের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া, বিভিন্ন সেবা সংস্থার কাজে সমন্বয়সাধান করা এবং আধুনিক প্রযুক্তি ও লজিস্টিক সার্পোট নিশ্চিত করে দ্রæততম সময়ে উন্নয়ন ও সংস্কার কাজগুলো সমাপ্ত করা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন