পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দীর্ঘ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক টানপোড়েন শেষে বর্তমান সরকারের আমলে ভারতের সাথে অমীমাংসিত ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে বহু পুরনো এই সমস্যাটির সমাধান সম্ভব হয়েছে। তবে মুহুরীর চরের মালিকানাসহ বিভিন্ন সীমান্ত নদীর ভাঙনে হারানো ও দখল বিরোধ মীমাংসায় ভারতের গড়িমসির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। শত বছরের দখল ও জরিপ রেকর্ডে মালিকানার কাগজপত্র থাকা সত্তে¡ও বিএসএফ’র দখলদারিত্বের কারণে বাংলাদেশী কৃষকরা নিজেদের জমি থেকে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ভারতের প্রাপ্তির পাল্লা অনেক বেশী হলেও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির মত অতীব গুরুত্বপূর্ণ, প্রত্যাশিত ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে দুই দেশের সরকারী পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করা হলেও এখনো সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই বিএসএফ’র হাতে নিরীহ বাংলাদেশী নাগরিক হতাহত হচ্ছে। এমতাবস্থায়, আগামী মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিস্তার পানিচুক্তির পাশাপাশি সীমান্ত হত্যা এবং অমীমাংসিত সীমান্তবিরোধ মিটিয়ে ফেলতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রত্যাশা করছে দেশবাসী। বিশেষত: সীমান্তনদীর ভাঙনে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান হারে ভূমি হারানোর বাস্তবতাকে সামনে রেখে এ সংক্রান্ত একটি সুস্পষ্ট চুক্তি ও সমঝোতায় ভারতের সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখতে চায় বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য ভারত সফরে অন্তত ২২টি চুক্তি ও এমওইউ স্বাক্ষরিত হতে পারে বলে নানা মাধ্যমে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্তনদী কেন্দ্রিক জটিলতা নিরসন এবং যৌথ নদী কমিশনের কার্যক্রমসহ পানি সমস্যার স্থায়ী সমাধান ছাড়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যে স্থিতিশীল ও সৌহার্দ্যপূর্ণ রাখা সম্ভব নয়, ভারতীয় পক্ষকে এটা বুঝতে হবে।
সাতচল্লিশ সালের দেশভাগের সময় র্যাডক্লিফ রোয়েদাদের অধীনে সীমান্ত নদীর মধ্যস্রোতকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুসারে যৌথ নদীকে একতরফা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ না থাকলেও আইন ও কনভেনশন লঙ্ঘন করে ভারত সীমান্তের উজানে বাধ ও গ্রোয়েন নির্মাণ করে সীমান্ত নদীকে ভাঙনপ্রবণ করে তোলায় এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ক্রমশ: বাংলাদেশের দিকে সরে আসায় হাজার হাজার একর ভূমি হারিয়েছে বাংলাদেশ এখনো হারাচ্ছে। মুহুরীর চর এধরনের সমস্যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মুহুরী, পদ্মা, সুরমা-কুশিয়ারা, ইছামতিসহ প্রতিটি সীমান্ত নদীতে প্রায় একই অবস্থা বিরাজমান। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ এভাবে প্রায় ৫০ হাজার একর ভূমি হারিয়েছে বলে ইতিপূর্বে প্রকাশিত খবরাদিতে জানা যায়। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, দুই দেশের সম্মতিতে মুহুরীর চরের প্রায় ৯০ একর ভূমিকে ডিস্পুটেড হিসেবে ঘোষণা করা হলেও এই জমির ৬৬ শতাংশ এখন বিএসএফ দখল করে রেখেছে। অবশিষ্টাংশেও বাংলাদেশিরা স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালাতে পারছে না। দুই দেশের সীমান্তরক্ষি বাহিনী দশকের পর দশক ধরে এ সংক্রান্ত বিরোধে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। বিশেষত: বিএসএফ অস্ত্র দিয়ে চরদখলের নীতি গ্রহণ করেছে। মুহুরীর চর দখলে রাখতে ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯৯ সালের ২২ আগস্ট পর্যন্ত ৫৮ বার বিএসএফ’র সাথে বিজিবি’র গুলি বিনিময় হয়েছে এবং এসব গোলাগুলিতে শতাধিক বাংলাদেশী নাগরিক হতাহত হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
পানির অভাবে তিস্তা সেচ প্রকল্প এখন অকার্যকর। কৃষকরা হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি অনাবাদি রাখতে বাধ্য হয়। বছরের পর বছর পেরিয়ে যায়, ভারতের অনিচ্ছায় জেআরসি বৈঠক হয় না। নদীর উজানে বাঁধ ও গ্রোয়েন নির্মাণ করে বাংলাদেশ অংশে ভাঙন নিশ্চিত করা হলেও ভাঙন প্রতিরোধে বাংলাদেশ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলে বিএসএফ’র বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এভাবেই দেশের অমূল্য ভূমি ভারতের দখলে চলে যাচ্ছে। আমাদের সীমান্তরক্ষি বাহিনী, সেনাবাহিনী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষায় জাতির কাছে অঙ্গীকারাবদ্ধ হলেও প্রতিপক্ষের কূটকৌশলের কাছে হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইছামতি ও সুরমা-কুশিয়ারার ভাঙনে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার একর জমি হারালেও ভাঙন রোধ ও নদীর নাব্যতা বৃদ্ধিকল্পে ড্রেজিং করতে গিয়েও ভারতীয়দের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এভাবেই সীমান্ত নদীর ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের মুখ দেখছে না। দেশের নদী, ভূমির স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের গল্প জনগণ আর শুনতে চায় না। প্রধানমন্ত্রীর আগামী সফরে সম্ভাব্য যে সব চুক্তি ও সমাঝোতার কথা বলা হচ্ছে, সে বিষয়ে জনগণের কাছে পরিষ্কার করতে হবে। একটি নিরাপত্তা চুক্তির কথা নানাভাবে উঠে আসলেও নদী ও ভূমি রক্ষায় সরকারের প্রস্তাব এবং ভারতের অবস্থান সম্পর্কে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। এসব বিষয়ে দলমত নির্বিশেষে এক ধরনের জাতীয় ঐক্য থাকলেও সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। মুহুরীর চর এবং সীমান্তনদীর ভাঙন প্রবণতায় বাংলাদেশের ভূমি হারানোর প্রক্রিয়া এখনো একটি অমীমাংসিত ইস্যু। র্যাডক্লিফ রোয়েদাদে সীমানা নির্ধারণে নদীর মধ্যস্রোত নীতি গ্রহণ করা হলেও যৌথ নদীর যৌথ ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠা এবং পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে একই নীতি কার্যকর হিসেবে ধরে নেয়া বাঞ্ছনীয় নয়। সাতচল্লিশ সালের সীমান্ত পিলারকে মূল সীমান্ত ধরেই নদী সীমান্ত নির্ধারণ করে মুহুরীর চরসহ দেশের হাজার হাজার একর ভূমির মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিছুমাত্র ছাড় দেয়ার ও সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।