Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তিস্তার পানি চুক্তির কোন বিকল্প নেই

| প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হবে এমন প্রত্যাশা দেশবাসীর থাকলেও প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে সেরকম সম্ভাবনা খুবই কম। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্র উদ্ধৃত করে দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, তিস্তার পানি চুক্তির সাথে এবারেও কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিতে যাচ্ছে ভারত। যার মধ্যে থাকছে ফেনী নদীর পানি ভাগাভাগি, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে খালকেটে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের পানি গঙ্গায় নিয়ে যাওয়া এবং বরাক নদীর উজানে টিপাইমুখ ড্যাম নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশের সম্মতি আদায় করা। তিস্তা নিয়ে ভারতের প্রস্তাবনার ব্যাপারে জানতে চাইলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব  ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে উভয় দেশ একটি খসড়া তৈরি করেছে। এখন এ সংক্রান্ত চুক্তি সইয়ের বিষয়টি ভারতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। তিস্তা চুক্তির সাথে ভারত অনেক শর্ত জুড়ে দিতে চাচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, ভারতের অনেক প্রত্যাশা থাকতে পারে। তারা কি চাইবে সেটা তাদের ব্যাপার। এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আমাদের লক্ষ্য তিস্তাচুক্তি। এদিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আনুষ্ঠানিক বা চূড়ান্ত কোন চুক্তি নয় বরং একটি  খসড়ায় সম্মত হতে পারে বাংলাদেশ ও ভারত। বাংলাদেশে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তির দিকে যেতে পারে বলে ভারতীয় কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছে অনলাইন দ্য ইকনমিক টাইমস।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের যেকটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে পানির ন্যায্য বণ্টনের বিষয়টি অন্যতম। স্বাধীনতার পর থেকে গ্যারান্টিক্লজহীনভাবে পরীক্ষামূলকভাবে  ফারাক্কা বাঁধ চালু করার পর  থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে শুরুর কথা বললেও পরে আর এ নিয়ে ভারতীয়রা এগোয়নি। পরবর্তীতে চুক্তি হলেও সে চুক্তি অনুযায়ী যেমনি বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না, তেমনি বাংলাদেশ তার প্রয়োজনের ন্যূনতম  অবস্থাও মেটাতে পারছে না পানি দিয়ে। অন্যদিকে ভারত একের পর এক  বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার অব্যাহত রেখেছে। অভিন্ন নদীগুলো নিয়ে ভারতীয় আচরণ রীতিমত আন্তর্জাতিক নিয়মের বরখেলাপ। তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারতের সাথে ১৫ বছরমেয়াদি একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে এসেও হয়নি। ওই চুক্তির খসড়ায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব রয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে তিস্তা নদীর ৪০ ভাগ পানি ভারত পাবে এবং ৪০ ভাগ বাংলাদেশ পাবে। তিস্তার নাব্য রক্ষার জন্য ২০ ভাগ সংরক্ষিত থাকবে। বাংলাদেশের এই প্রস্তাব নিয়ে পশ্চিমবাংলার  মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তীব্র আপত্তি থাকায় ঝুলে যায় অন্তর্বর্তীকালীন তিস্তা চুক্তি। গজলডোবা বাঁধের ২৫ কিলোমিটার উজানে ডাইভারসন পয়েণ্ট থেকে নাকি পয়েণ্টের ভাটিতে জমা পানি থেকে পনি ভাগাভাগি হবে, সর্বনিম্ন কী পরিমাণ পানি এখানে জমা থাকতে হবে, গজলডোবা পয়েণ্টে পানির প্রবাহ বৃদ্ধিতে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে? অন্যদিকে ভারত থেকে তিস্তা বাংলাদেশের যে পয়েণ্টে প্রবেশ করেছে সেই নিলফামারী জেলার ডোমার উপজেলায় কালিগঞ্জ  গ্রাম থেকে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত তিস্তার গতিপথ বাঁচিয়ে রাখতে কি পরিমাণ পানি ছাড়া হবে এটা নির্দিষ্ট করতে বলা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গকে। এদিকে গত সোমবার ভারতের হাইকমিশনার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের সাথে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের আভাস দিয়েছেন তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিতে অগ্রগতি না হওয়ায় অভিন্ন নদীগুলোর অববাহিকা ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, তিস্তা নিয়ে অচলাবস্থার কারণে শেখ হাসিনার সফরকে সফল করতে বিকল্প উপায় নিয়ে ভাবছে ভারত।
তিস্তা নদীর উৎপত্তিস্থল সিকিমে। এরপর প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। পরে ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে যুক্ত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে এর আগেও দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। এবারে আশা করা গিয়েছিল, হয়ত চুক্তির ব্যাপারে কার্যকর অগ্রগতি হবে। এখন দেখাযাচ্ছে সকলই গরলভেল। মনে হয়, বাংলাদেশের জীবন-মরণ সমস্যা পানির ব্যাপারে বিন্দুমাত্র কোন অগ্রগতির পরিবর্তে এক ধরনের ধাপ্পা দেয়ার চেষ্টা চলছে। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী যেসব বিষয়ে  চুক্তি বা সমঝোতা হবে সেসব ব্যাপারে দু’পক্ষ সম্মত হয়েছে। এনিয়ে দু’দেশের দায়িত্বশীলরা বারবার সফরও করেছেন। ভারতীয় হাইকমিশনারের বক্তব্য অনুযায়ী কানেকটিভিটির উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রকাশিত খবরাদিতে প্রতিরক্ষা সমঝোতার ব্যাপারটি যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে। নতুন করে একথা বলার কোন প্রয়োজন নেই যে, ভারত না চাইতেই বাংলাদেশ এ পর্যন্ত অনেক কিছু দিয়েছে। তার বিনিময়ে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থরক্ষার কোনব্যবস্থা এপর্যন্ত করা যায়নি। তারপরেও যদি পানি পাওয়া  বিশেষ করে তিস্তার পানি বণ্টনের কোন চুক্তি করা যেত, তাহলে হয়ত সফরকে একটু হলেও ইতিবাচকতায় দেখার সুযোগ ছিল। এখন দেখাযাচ্ছে সে আশার গুড়েবালি। সংগত প্রশ্ন উঠতে পারে সফর নিয়ে। বাংলাদেশের কোন স্বার্থই যদি রক্ষিত না হয় তাহলে কোন বিবেচনায়  দু’দেশের সম্পর্ককে বন্ধুত্বপূর্ণ বলা যাবে। একথা সকলেরই জানা, পানির অভাবে এখন দেশ মরুকরণের দিকে যাচ্ছে। খোদ রাজধানীসহ সারাদশে খাবার পানির পর্যন্ত সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষি তো অনেক অগেই হুমকির মুখে পড়েছে। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম পানিটুকুও যদি না পাওয়া যায় তাহলে যেসব  চুক্তি-সমঝোতার কথা বলা হচ্ছে তা দিয়ে জনগণের কি উপকার হবে তা বলা দুষ্কর। আসন্ন সফরকালে আর যাই হোক না হোক পানির ন্যায্য হিস্যা পাবার বিষয়টি নিশ্চিতকরণে যা যা করণীয় তার সবটাই করা জরুরি। পানি পেতে হবে এর কোন বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্ট সকলে এব্যাপারে আন্তরিক হবেন, এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন