নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিশেষ সংবাদদাতা কলম্বো (শ্রীলঙ্কা) থেকে : ১৯৬৫ সালে নিজেদের শততম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিতিয়েছিলেন স্যার গ্যারী সোবার্স। জ্যামাইকার কিংসস্টোনের সাবিনা পার্কে সেবার শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে ১৭৯ রানে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে সেঞ্চুরি টেস্টে জয় উৎসবে মেতেছিলো ক্যারিবয়ীয়ানরা। তার এক যুগ পর সেই একই কীর্তিতে ভাস্বর হয় পাকিস্তান মুশতাক আহমেদের অধিনায়কত্বে। ১৯৬৫ সালে এবারও প্রতিপক্ষ সেই অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্নে পাকিস্তানের জয়টি ছিলো ৭১ রানে। আর তার ঠিক ৩৮ বছর পর সোবার্স, মুশতাকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে শততম টেস্টে জিতে নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও। গতকাল কলম্বোর পি সারা ওভালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়টি ৪ উইকেটের। তবে কাকতালীয়ভাবে তিনটি জয়ই এসেছে মার্চ মাসে! এমন ইতিহাসের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পেরে যার পর নাই খুশি টাইগার দলপতি। তাই তো ম্যাচ শেষে মুশফিকের কন্ঠে ঝরলো উচ্ছাসের ফুলঝুড়ি- ‘প্রথমেই বলবো আলহামদুলিল্লাহ। সত্যিই খুব ভালো লাগছে। কারণ প্রথম টেস্টে হারের পর আমাদের মনে হয়েছিলো, আমরা যদি আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী খেলতে পারি তাহলে এই দলকে হারানো তেমন একটা কঠিন কাজ নয়। শেষ পর্যন্ত আমরা তা পেরেছি, হারিয়েছি শ্রীলঙ্কাকে।’ মুশফিক যোগ করেন, ‘যদিও লঙ্কানরা প্রথম টেস্টটা বেশ সহজেই জিতেছে। আমরা জানতাম আমরা যদি মাঠে আমাদের পরিকল্পনা ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি, আমরাই জিতবো। সব মিলিয়ে এই জয়ের জন্য খুবই খুশি আমি। জয়টা আমরা অনেক কষ্টে অর্জন করেছি। আমার মনে হয় ভবিষ্যতে যদি আমরা এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ি, তখন আরো ভালোভাবে খেলতে পারবো।’
অধিনায়কের ধারণা শ্রীলঙ্কাকে হারানোর ফলে টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করতে বাংলাদেশের আতœবিশ্বাস বেড়ে যাবে। তার কথা,‘এই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিবে। কারণ গত কয়েকটি সিরিজে আমরা প্রত্যাশিত ফল পাইনি। এ জন্যই এই ম্যাচটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। দলের সবাই আনন্দিত। অনেকেই ভালো পারফর্ম করেছেন। আমাদের আপাতত লক্ষ্য হলো পরের সিরিজটা, বিশেষ করে লঙ্কানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটি জেতা। আশা করি কয়েকদিনের বিশ্রামে দলের সবাই প্রস্তুত হয়ে উঠবেন।’
মুশফিক যোগ করেন বলেন, ‘ম্যাচ জিতলেও আমি বলবো শ্রীলঙ্কা এখনো তাদের মাটিতে দুর্দান্ত দল। তারা অস্ট্রেলিয়াকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছে। তাই তাদেরকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নাই। আমার মনে হয়, গত পাঁচ দিন আমরা তাদের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলেছি। বিশেষ করে টস হারের পর বোলাররা প্রথম ইনিংসে তাদের কাজটা যথাযথভাবে করেছেন। গতকাল সাকিব ও মুস্তাফিজ ফ্ল্যাট উইকেটে দারুণ বোলিং করেছেন। ওদের কয়েক ওভারের স্পেলে শ্রীলঙ্কা ব্যাকফুটে চলে যায়। এরপর আমাদের দরকার ছিলো মোমেন্টামটা (ভাবাবেগ, এইটার চেয়ে ওইটাই মনে হয় বেশি সহজ) ধরে রাখা। আমাদের মনে হয়েছিলো লক্ষ্য যা-ই হোক, আমরা চেজ করতে যাবো। আমাদের মনে হয়েছে ২০০ বা ২৫০ রান এই উইকেটে তাড়া করা সম্ভব। তাদেরকে অলআউট করার পর আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। বিশেষ করে তামিম ও সাব্বির যেভাবে ব্যাটিং করেছে, এটা দারুণ। সব মিলিয়ে শততম টেস্ট জেতা বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন।’ সিরিজ সেরা সাকিব আল হাসান বলেন,‘সব সময়ই আমার ইচ্ছা থাকে দলের জন্য ভালো করার। আমার মনে হয় একটু লাকি আমি। কারণ এ রকম পরিস্থিতিতে আমি পারফর্ম করতে পারছি দলের জন্য। দলের জন্য ভূমিকা রাখা আমার জন্য অনেক বড় একটা ব্যাপার।’ তিনি আরও বলেন,‘ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট আর লঙ্কানদের বিপক্ষে এই ম্যাচ- এ দু’টি আমার ক্যারিয়ারে সবার ওপরে থাকবে। যেভাবে খেলেছি, দলের জন্য অবদান রাখতে পেরেছি তাতে খুশি। বারবার এর পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করবো। আশি করি, আমরা আরও বেশি ম্যাচ জিতবো।’
স্কোর কার্ড
শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ, ২য় টেস্ট ৫ম দিন
পি সারা ওভাল, কলম্বো; টস : শ্রীলঙ্কা
৪র্থ দিন শেষে শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস ৩৩৮। বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৪৬৭। শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস ১০০ ওভারে ২৬৮/৮ করুণারতেœ ১২৬, থারাঙ্গা ২৬ কুশল ৩৬, পেরেরা ২৬*, লাকমাল ১৬*; মিরাজ ৬৭/১, মুস্তাফিজ ৩/৫২, সাকিব ৩/৬১, তাইজুল ১/৩১)
রান বল ৪ ৬
পেরেরা রানআউট ৫০ ১৭৪ ৬ ০
লাকমাল ক মোসাদ্দেক ব সাকিব ৪২ ৪৮ ৪ ০
সান্দাকান অপরাজিত ০ ১ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ৪, লেবা ৮, ও ১) ১৩
মোট (অলআউট, ১১৩.২ ওভার) ৩১৯
উইকেট পতন : ১-৫৭ (থারাঙ্গা), ২-১৪৩ (কুশল), ৩-১৬৫ (চান্দিমাল), ৪-১৭৬ (গুণারতেœ), ৫-১৭৭ (ধনঞ্জয়া), ৬-১৯০ (ডিকওয়েলা), ৭-২১৭ (করুণারতেœ), ৮-২৩৮ (হেরাথ), ৯-৩১৮ (পেরেরা), ১০-৩১৯ (লাকমাল)।
বোলিং : শুভাশিষ ১৬-৪-৩৬-০, মিরাজ ২৪-০-৭১-১, মোস্তাফিজ ২৩-৩-৭৮-৩, সাকিব ৩৬.২-৯-৭৪-৪, মোসাদ্দেক ৩-০-১০-০, তাইজুল ১১-১-৩৮-১।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস (লক্ষ্য ১৯১) রান বল ৪ ৬
তামীম ক চান্দিমাল ব পেরেরা ৮২ ১২৫ ৭ ১
সৌম্য ক থারাঙ্গা ব হেরাথ ১০ ২৬ ২ ০
ইমরুল ক গুণারতেœ ব হেরাথ ০ ১ ০ ০
সাব্বির এলবি ব পেরেরা ৪১ ৭৬ ৫ ০
সাকিব বোল্ড পেরেরা ১৫ ৪৩ ১ ০
মুশফিক অপরাজিত ২২ ৪৫ ১ ০
মোসাদ্দেক ক ডিকওয়েলা ব হেরাথ ১৩ ২৮ ২ ০
মিরাজ অপরাজিত ২ ৩ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ৪, লেবা ১, ও ১) ৬
মোট (৬ উইকেট, ৫৭.৫ ওভার) ১৯১
উইকেট পতন : ১-২২ (সৌম্য), ২-২২ (ইমরুল), ৩-১৩১ (তামীম), ৪-১৪৩ (সাব্বির), ৫-১৬২ (সাকিব), ৬-১৮৯ (মোসাদ্দেক)।
বোলিং : পেরেরা ২২-১-৫৯-৩, হেরাথ ২৪.৫-২-৭৫-৩, সান্দাকান ৬-১-৩৪-০, লাকমাল ২-০-৭-০, গুণারতেœ ১-০-৪-০।
ফল : বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : তামীম ইকবাল (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : ২ ম্যাচে ১-১ এ সমতা।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।