নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শামীম চৌধুরী, কলম্বো (শ্রীলঙ্কা) থেকে : শ্রীলঙ্কার অভিষেক টেস্ট ভেন্যুতে বাংলাদেশের অতীত ছিল না মোটেও সুখকর, তিন ম্যাচের তিনটিতেই ইনিংস হারকে নিয়তি বলে মেনে নিতে হয়েছে যে দলকে, সেই বাংলাদেশ ই কি না অতীতের দুঃসহ ভেন্যুতে উড়াল জাতীয় পতাকা! হেরাথের ফুলটস ডেলিভারিতে মিরাজের সুইপ শটে স্কোয়ার লেগে ২ রানের সঙ্গে সঙ্গেই অন্য এক উৎসবে মেতে উঠল বাংলাদেশ। ৪ উইকেটে জিতে শততম টেস্ট উদযাপনে পেলো ভিন্ন মাত্রা। দেশের শততম টেস্ট বিষাদময় হয়ে থেকেছে ইংল্যান্ড, দ.আফ্রিকা, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং জিম্বাবুয়ের। প্রতিরোধ গড়ে নিউজিল্যান্ড শততম টেস্ট পেরেছে ড্র’ করতে। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর দেশের শততম টেস্ট জয় দিয়ে উদযাপনে অন্য উচ্চতায় উঠল বাংলাদেশ। মেলবোর্নে ১৯৭৯ সালে দেশের শততম টেস্টে পাকিস্তানের কৃতিগাথার ৩৮ বছর পর বাংলাদেশ গড়ল আর একটি গৌরবগাথা। সাকিব, মুশফিক, তামীম, সৌম্য, মোসাদ্দেক, সাব্বির, মিরাজ, মুস্তাফিজে গৌরবময় অধ্যায় রচিত হলো।
শ্রীলঙ্কার আগের ১৭টি টেস্টে ছিল না বাংলাদেশের কোন জয়। শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রবল পরাক্রমশালী হয়ে ওঠা স্বাগতিকরা যেখানে ক’মাস আগে অস্ট্রেলিয়াকে ৩-০তে করেছে হোয়াইট ওয়াশ, হোমে টানা ৬ টেস্টের সব ক’টি জয়ে সিরিজের ট্রফি জয়ে চোখ ছিল যাদের, সেই শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাদের বিপক্ষে প্রথম জয়ে টেস্টের সেঞ্চুরিটা করেছে মুশফিকুররা উদযাপন। দেশের মাটিতে এমন উৎসবের উপলক্ষ পায়নি বলে পি.সারা ওভালে ল্যাপ অব অনার দিতে পারেনি, তবে সমর্থকদের কাছ থেকে পাওয়া লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে ইতিহাসের ফ্রেমে বন্দি হয়েছে বাংলাদেশ দারুণভাবে। শততম টেস্টের সিরিজের নামকরণ ‘জয় বাংলা’, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিকামী বাংলাদেশিদের সেই সেøাগানের নামে ট্রফিটাও যে স্বাধীনতার মাসকে সারা বিশ্বে নুতনভাবে চিনিয়েছে মুশফিকুররা!
জয়ের আবহ ছিল তৃতীয় দিন থেকেই। সাকিবের সেঞ্চুরি, সৌম্য, মুশফিক, সাব্বির, মোসাদ্দেকের ফিফটিতে বিদেশের মাটিতে ১২৯ রানের রেকর্ড লিডটাই গল টেস্টের বদলা নেয়ায় উজ্জীবিত করেছে বাংলাদেশকে। চতুর্থ দিনে মুস্তাফিজুরের একটি স্পেলে (৭-১-২৪-৩) শ্রীলঙ্কার মিডল অর্ডার ছিন্ন ভিন্ন হওয়ায় জয়ের আবহ পেয়েছে বাংলাদেশ। চতুর্থ ইনিংসের চ্যালেঞ্জ ২ বারের বেশি পাড়ি দেয়ার অতীত নেই বাংলাদেশের, তাই ৭৪ ওভারের মধ্যে ১৯১ রানের চ্যালেঞ্জকে সহজ মনে করেনি কেউ। সময়ের সেরা বাঁ হাতি স্পিনার হেরাথের সঙ্গে আছেন চায়নাম্যান সান্দকান, দিলুরুয়া পেরেরার স্পিন। পঞ্চম দিনের উইকেট না জানি কতোটা আতঙ্ক ছড়ায়, শঙ্কা ছিল তা নিয়েও। হেরাথের এক স্পেলে (৭-১-১১-২) পর পর ২ বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে যেয়ে লং অনে সৌম্য (১০), এবং কাট করতে যেয়ে সিøপে (০) ইমরুল কায়েস ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসায় বড় ধরনের দুর্ভাবনাই বেধেছিল বাসা। ২২/২ স্কোর থেকে সাব্বিরকে নিয়ে তৃতীয় জুটিতে তামীমের নেতৃত্ব দেয়া ১০৯ রানের পার্টনারশিপে উঁকি দিয়েছে বড় জয়ের স্বপ্ন। তবে জয় থেকে ৬০ রান দুরে থেকে তামীমের বিদায় (৮২) হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি দিয়েছে বাংলাদেশকে। ছক্কায় প্রলুদ্ধ হয়ে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে যেয়ে লং অনে তার উইকেট দিয়ে আসার পর পেরেরাকে সুইপ করতে যেয়ে সাব্বিরের আউট (৪১), কিংবা কাট করতে যেয়ে সাকিবের আউট (১৫) স্বাগতিক শিবিরে কিছুটা উত্তেজনা দিলেও হেরাথের ৩৯তম জন্মদিনকে মাটি করে দিতে মুশফিক-মোসাদ্দেকের ৩৭ রানের পার্টনারশিপ ছিল যথেষ্ট। পেরেরার আতঙ্ক ছড়ানো স্পেলটি (১৩-১-২৬-৩) আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারতো। জয় থেকে বাংলাদেশ যখন ২৪ রান দূরে, তখন পেরেরাকে শর্ট অফার না করেও বিপদের মুখে পড়েছিলেন মুশফিক। ভারতীয় আম্পায়ার এস রবি দিয়েছিলেন আউটের সিদ্ধান্ত, মোসাদ্দেকের অনুরোধে রিভিউ আপীলে জিতে সেই যে ফেলেছেন স্বস্তির নিশ্বাস বাংলাদেশ অধিনায়ক, তাতেই বাংলাদেশ দেখেছে জয়ের স্বপ্ন। হেরাথকে মিড উইকেটে খেলতে যেয়ে মোসাদ্দেক আউট হয়েছেন যখন (১৩), তখন জয়ের ঠিক দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। জয়ের কাছে এসে বঞ্চিত হতে হয়নি বাংলাদেশকে।
ইতিহাসের ম্যাচে ইতিহাস হয়ে গেছেন মুশফিক। প্রথম সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের জয় ৯টির ৬টিই এসেছে তার অধিনায়কত্বে। যে ৬টি জয়ের মধ্যে ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার মতো বড় দলের বিপক্ষে মাত্র ৫ মাসের ব্যবধানে জয়ে বাংলাদেশকে গর্বিত করেছেন এই অধিনায়ক। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের চতুর্থ এই জয়টি শ্রীলঙ্কাকে ফেলে দিয়েছে বড় ধরনের লজ্জায়। হোমে টানা জয়ের রেকর্ডে ছেদ পড়ল তাদের। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়ে (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০০৯ সালে ২-০) সিরিজ সেরার পুরস্কারে হয়েছেন ভুষিত সাকিব, ৮ বছর পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয় এবং শ্রীলঙ্কার মাটি থেকে টেস্টের ট্রফি ভাগাভাগি করে নেয়ার নায়কও তিনি (১৬২ রান এবং ৯ উইকেট)। পেয়েছেন সিরিজ সেরার পুরস্কার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।