বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা : জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ২ কিলোমিটার এবং সদর থানা থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে বসেছে নগ্ননৃত্য ও রমরমা জুয়ার বাজার। স্বাধীনতার মাসে বিজয় মেলার নামে চালানো হচ্ছে এই নগ্ননৃত্য আর জুয়ার আসর। প্রতিদিন মোটা অংকের লেন-দেনের চুক্তিতে প্রশাসন প্রকাশ্যে নগ্ননৃত্য ও জুয়ার আসর চলতে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে একটি প্রভাবশালী মহলও জাড়িত আছে এই মেলায়। স্কুল-কলেজের ছাত্র, শিশু, যুবকসহ বয়ঃবৃদ্ধরা ভিড় করছেন মেলায়। জুয়ার আসরে দাঁড়িয়ে নিস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার।
মাদারীপুর-মস্তফাপুর সড়কের খাগদী বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে খোলা জায়গাটি রাতের গাঢ় অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকত। কিছুদিন ধরে সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানটিই ঝলমলে আলেতে আলোকিত হয়ে উঠেছে। আর এই আলোর মধ্যেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে অনেকের স্বপ্ন। আলোর ঝলকানিতে জুয়ার আসরে সব হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। হাহাকার করছে পরিবারের সদস্যরা। তাদের এই হাহাকার দেখে মুচকি হাসি হেসে পকেট ভরছে প্রশাসনের অসাধু কর্তারা, প্রভাবশালী একটি মহলসহ অনেকেই।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মোটর সাইকেল, স্বর্ণের অলঙ্কারসহ বিভিন্ন পণ্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে একটি মঞ্চে। এখান থেকে প্রচার মাইকে জনসাধারণকে লটারির টিকিট কেনার জন্য বলা হচ্ছে। পরীক্ষা করে নিতে বলা হচ্ছে ভাগ্যকে। ঘোষণা করা হচ্ছে প্রথম পুরস্কার মোটা অংকের নগদ টাকা। এছাড়া একাধিক মোটর সাইকেল, ফ্রিজ, টিভিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য। বিশ টাকা করে টিকিটের মূল্য নিচ্ছে তারা। শুধু মেলার মাঠেই নয়, ভ্যানে নতুন মোটরসাইকেল নিয়ে এবং বিভিন্ন রিকশায় মাইক ব্যবহার করে শহর ও গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত প্রকাশ্যে মাইকিং করে লোভনীয় পুরস্কারের কথা বলে বিক্রি করছে লটারির টিকিট। গ্রামের সহজ-সরল মহিলারাসহ খেটে খাওয়া মনুষগুলো লোভের বর্শ্ববর্তী হয়ে একাধিক টিকিট কিনছে। এভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মেলা কর্তৃপক্ষ। মেলা মাঠের এক কোনায় সারি সারি জুয়ার কোট। সাধারণ মানুষ ভিড় করছে এই কোটগুলোকে ঘিরে। এক একটি কোটে পড়ছে হাজার হাজার টাকা, একজন গুটি চালছে। কেউ হয়ত কিছু টাকা পাচ্ছে বাকি টাকা চলে যাচ্ছে কোট পরিচালনাকারীর হাতে। পাশেই চলছে পুতুল নাচ। এখানে ভিড় করে আছে শিশু, কিশোর, যুবক এমনকি বৃদ্ধরাও। ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, নামেই পুতুল নাচ। পুতুলের পরিবর্তে সেখানে নাচছে কিশোরী মেয়েরা। এ যেন জ্যান্ত পুতুল। প্রথমে পোশাক পরে স্টেজে আসলেও ধীরে ধীরে পোষাক খুলতে শুরু করে এই কিশোরীরা। শেষটা এমন পর্যায় নিয়ে যায় যেন এটা নগ্ননৃত্যের একটি আসর। আর এ দেখে উল্লাসিত হয়ে উঠছে শিশু, কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধরা। চিৎকার দিয়ে কিশোরীদের নগ্ন হতে উৎসাহ দিচ্ছেন তারা। যে যত বেশি খোলা মেলা হচ্ছে দর্শকরা তার দিকেই ছুড়ে দিচ্ছেন তত বেশি টাকা। কেউ কেউ কিশোরীদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন টাকা। পাশেই চলছে যাত্রাপালা। এই যাত্রাপালার অবস্থাও পুতুল নাচের মতই। এখানেও চলছে নগ্ননৃত্য। শিশু কিশোররা নগ্ননৃত্য দেখার জন্য ও অশ্লীল নৃত্য শিল্পীদের টাকা দেয়ার জন্য বাড়ি থেকে বাবা মায়ের কাছ থেকে জোড় করে টাকা নিয়ে আসছে। কেউ কেউ বাড়ি থেকে টাকা বা মালামাল চুরি করছে। এমনকি অনেকই আবার অন্যের জিনিস চুরি করে তা বিক্রি করে জোগান দিচ্ছে এই টাকার। প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের পকেট ভারী করার এই খেলায় ধ্বংস হচ্ছে শিশু কিশোরদের ভবিষ্যৎ। ঘরে ঘরে বাড়ছে অশান্তি। নিস্ব হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষ।
একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে প্রতিদিন প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরকে মোটা অংকের টাকা দিচ্ছে মেলা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের সাথে তাদের একই চুক্তি হয়েছে। তারাও মেলাটিকে চালিয়ে নিতে সাহায্য করছে। মেলার লোকজন প্রচার করছে আওয়ামী লীগের লোকজন এই মেলা এনেছে তাই এ মেলায় সব চলবে। কেউ এই মেলা বন্ধ করতে পারবেনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকই জানান, এই জুয়া, পুতুল নাচ ও যাত্রাপালার আসর তাদের পরিবারে বিরূপ প্রভাব পরছে। অনেক বাড়িতেই শুরু হয়েছে অশান্তি। বেড়ে গেছে চুরি। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। ছাত্ররা সন্ধ্যা হলেই পড়ালেখা বাদ দিয়ে চলে যায় মেলায়। বাড়িতে ফেরে গভীর রাতে। কিছু বললেই সংসারে অশান্তি শুরু করে।
গরিব এক কৃষক জানান, আমি অনেক কষ্টে আমার ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছি। সামনে ছেলের পরীক্ষা। এই মেলা শুরু হওয়ার পর ছেলে সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়, আর আসে গভীর রাতে। কিছু বললেই আমাদের সাথে রাগারাগি করে। কান্না জড়িত কণ্ঠে কৃষক আরও বলেন, এই ছেলেকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। আমাদের সেই স্বপ্ন ভাঙতে বসেছে।
সাংস্কৃতিক সংগঠক ও কর্মি কুমার লাভলু বলেন, বাংলা সংস্কৃতির যে ঐতিহ্য, যে সুস্থ ধারা তার যেকোনো বিচ্যুতিই হচ্ছে অপসংস্কৃতি। যা সমাজকে একটি ভুল পথে চালিত করবার জন্য অন্যতম কারণ হতে পারে। দুই দশক আগেও যাত্রাপালা ও পুতুল নাচ কিংবা পালা গান, কবি গান পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে উপভোগ করতাম। যা আমাদের প্রতিদিনের আত্মার খোরাক যোগাতো। কিন্তু এখন লক্ষ্যণীয় যে, সেই পুতুল নাচ, সেই যাত্রাপালার নামে যে সমস্ত অশ্লীলতা প্রদর্শন করা হয় তা একটি জাতির সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিতে ধাবিত করার অভিপ্রায় বলে আমার মনে হয়। যারা এই যাত্রাপালা বা পুতুল নাচের নামে অশ্লীল নৃত্যের আয়োজন করছে বা আয়োজন করতে সহযোগিতা করছে তারা প্রত্যক্ষভাবে এই ধ্বংস যজ্ঞকেই সহযোগিতা করছে। প্রত্যাশা করি তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। সুস্থ সংস্কৃতি ধারায় ফিরে আসুক। আমাদের বাংলার চিরায়ত সেই ঐতিহ্যে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মাদারীপুরের স্থানীয় লোকদের চাহিদার কারণে মেলা হচ্ছে। তবে সেখানে যদি জুয়া বা নগ্ননৃত হয় তাহলে সাধারন জনতা প্রতিবাদ করে বন্ধ করে দিতে পারে প্রয়োজনে প্রশাসন লিখিত অভিযোগ পেলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সক্ষম আছে । ইতোমধ্যে টেকেরহাটে গিয়ে মোবাইল কোর্ট মেলার নামে জুয়ার আসর ভেঙে দিয়েছে।
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল মোর্শেদ জানান, জুয়া ও অশ্লীল নৃত্যের ব্যপারে আমার জানা নেই। যদি এ ধরণের কর্মকান্ড হয়ে থাকে তাহলে আমরা মেলা বন্ধ করে দিব এবং যারা এই কর্মকান্ডের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।