পবিত্র লাইলাতুল বরাত
![img_img-1719955133](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678112525_editorial-inq.jpg)
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান ও হতাহতের ঘটনা, বিস্ফোরক ও বোমা উদ্ধার এবং ঢাকায় র্যাবের ব্যারাকে আত্মঘাতী হামলার ঘটনা প্রমাণ করছে, জঙ্গি তৎপরতা ফের জোরদার হয়ে উঠেছে। কিছুদিন বিরতির পর নতুন করে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সঙ্গত কারণেই জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে র্যাবের ব্যারাকে আত্মঘাতী হামলার পর কেউই আর নিরাপদ বোধ করছে না। যারা র্যাবের মতো এলিট ফোর্সের ব্যারাককে আক্রমণের নিশানা বানাতে পারে তারা কী করতে পারে না, সেটাই প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বিচলিত হওয়ার মতো বিষয় এই যে, জঙ্গিরা এখন আত্মঘাতী হামলার পথ বেছে নিয়েছে। আগে হামলা, হত্যা-নাশকতা ও পালিয়ে যাওয়ার নীতি অনুসরণ করলেও এখন তারা আত্মঘাতী হতেও দ্বিধা করছে না। এটা তাদের চরম ও বেপরোয়া মনোভাব ও পদক্ষেপেরই পরিচয় বহন করে। উদ্বেগ বিচলনের বিশেষ কারণ এখানেই। আরো লক্ষ্য করার ব্যাপার, তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান-স্থাপনাকেও ছাড় দিচ্ছে না। র্যাবের ব্যারাকে হামলার পর রাজধানীতে র্যাবের একটি চেকপোস্টে থামার নির্দেশ অমান্য করায় এক মোটরসাইকেল আরোহীকে গুলি করা হলে তাতে তার মৃত্যু হয়েছে। র্যাবের তরফে বলা হয়েছে, মোটরসাইকেল আরোহী বোমা হামলার চেষ্টা করলে তাকে গুলি করা হয়। তার ব্যাকপ্যাক থেকে দু’টি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাবের ব্যারাকে আত্মঘাতী হামলার পর আবারো আইএস বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সিরিয়া-ইরাকভিত্তিক আইএস ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে। এর আগেও বিভিন্ন হামলার দায় আইএস স্বীকার করে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বরাবরের মতো এবারও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কোনো আইএস নেই। আমরাও বিশ্বাস করি, আইএস নেই। তবে আইএসের ভাবধারাপুষ্ট জঙ্গি থাকতে পারে। সরকারের তরফে যেমন বলা হয়, এরা হোম গ্রোন, বাইরের কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে এদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটাই হয়তো সত্য। তবে এই হোম গ্রোন জঙ্গিরাও যে সক্রিয়, তৎপর এবং ইদানীং অনেক বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই তাদের আন্ডার এস্টিমেট করার সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা আর্টিজান-শোলাকিয়া থেকে এখনো বের হতে পারিনি। তার এ কথার সারসত্য অস্বীকার করার উপায় নেই। আর্টিজান- শোলাকিয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখা যাচ্ছে প্রায়ই। সাধারণ নাগরিকদের জিম্মি করার কিংবা আত্মঘাতী হওয়ার যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এ ব্যাপারে সকলেই একমত, বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা চলছে অনেক দিন ধরে। দেশি-বিদেশি চক্র এ জন্য সক্রিয় রয়েছে। বিদেশী হত্যা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হত্যা, ব্লগার হত্যা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর আক্রমণ ইত্যাদি ওই পাঁয়তারাই অংশ। যুক্তরাষ্ট্রসহ কতিপয় দেশ মনে করে, ওই সব হত্যা ও হামলার সঙ্গে আইএস জড়িত। কাকতালীয় কি না বলা মুশকিল, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাসহ কতিপয় হামলা ও হত্যাকান্ডের দায় আইএস স্বীকার করেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য স্মরণ করা যেতে পারে। অনেক আগেই তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশে আইএস আছে, এটা প্রমাণ করা গেলে তারা এ দেশের ওপর হামলে পড়তে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যে জঙ্গি তৎপরতা চলছে, তার লক্ষ্য দেশকে জঙ্গি দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা। আর এর সঙ্গে যদি আইএস আছে প্রমাণ করা যায়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। তখন এখানে ‘হস্তক্ষেপ’ করাটা সহজ হতে পারে। বলা যায়, এটা একটা ফাঁদ। এই ফাঁদ সম্পর্কে সব সময় আমাদের সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, হলি আর্টিজেন বেকারিতে হামলার পর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমর্যাদা তো মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হয়ই, সেই সঙ্গে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও উন্নয়ন কার্যক্রমে মারাত্মক বিদ্রুপ প্রভাব পড়ে। সেই প্রভাব এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। বিনিয়োগে গতি ফেরেনি, ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা হয়নি এবং মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে ধীরতা অব্যাহত রয়েছে। আমরা জানি, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে উন্নয়নের একটা বিশাল পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের চেহারা বদলে যাবে। অথচ কী আশ্চর্য, ওই এলাকাতেই জঙ্গিদের বিশেষভাবে কেন্দ্রীভ‚ত ও তৎপর হয়ে ওঠার প্রমাণ মিলছে। যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে না, তারাই যে ওই জঙ্গিদের সঙ্গে যুক্ত সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। জঙ্গিদের কাছে যে বিস্ফোরক ও বোমা পাওয়া গেছে তা উচ্চ শক্তিসম্পন্ন। একটি গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিস্ফোরক ও গোলাবারুদের ৮০ শতাংশই আসছে ভারত থেকে।
আইএস না থাকুক, হোম গ্রোন জঙ্গিরাও কম ঝুঁকিপূর্ণ নয়। এই জঙ্গিদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি কুচক্রী মহলের সম্পৃক্ততা যেহেতু এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই, সুতরাং জঙ্গি দমনে আরো সতর্ক, কৌশলী ও বিচক্ষণ হওয়ার বিকল্প নেই। সাধারণত বলা হয়, একশ্রেণীর বিপথগামী তরুণ জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হচ্ছে। ইসলামের নামে বিভ্রান্ত করে তাদের জঙ্গি বানানো হচ্ছে। আইজিপি শহিদুল হক এদের ‘পারভার্টেট মানসিকতার অধিকারী’ বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, ধর্মীয় অপব্যাখ্যায় কিছু লোককে বিভ্রান্ত করে জঙ্গি বানানোর চেষ্টা চলছে। জঙ্গি মোকাবিলার ক্ষেত্রে গুরুত্বের সঙ্গে এ বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। বিভ্রান্তি দূর করতে হবে, জঙ্গি বানানোর প্রক্রিয়া রোধ করতে হবে। জঙ্গি আস্তানায় অভিযান, জঙ্গি গ্রেফতার ও হত্যা যে জঙ্গি সমস্যার নিশ্চিত সমাধান দিতে সক্ষম নয়, তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি তাই যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে বা মহলবিশেষের প্ররোচনায় পড়ে জঙ্গি সৃষ্টি করছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। ইতোমধ্যে যারা বিভ্রান্ত হয়েছে বা বিভ্রান্ত হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে তাদের সংশোধনের কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সুপথে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ভ্রান্ত চিন্তার সূত্র ছিন্ন করে দিলেই তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। এ জন্য দেশে আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখের সহযোগিতা নেয়া জরুরি। তারাই এই বিভ্রান্তি ও ভ্রান্ত তত্ত¡-চিন্তা দূর করতে পারেন। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ারই কেবল নয়, গোটা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে শান্তিপ্রিয়, স্থিতিশীল, তারুণ্যনির্ভর ও উদ্দমী দেশ। যারা এই দেশে জঙ্গিবাদের ভ‚ত ঢুকিয়ে দিতে চায়, একে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র পরিণত করতে চায়, তারা এ দেশ ও মানুষের মিত্র নয়। এই খেয়াল সামনে রেখেই সফলভাবে জঙ্গিবাদের মোকাবিলা করতে হবে। আমরা আশাবাদী, ঐক্যবদ্ধ, সম্মিলিত ও সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশকে অবশ্যই জঙ্গিচিন্তা ও জঙ্গিমুক্ত করা সম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।