পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
তিন দশক আগেও রাজধানী ঢাকা ছিল দৃষ্টিনন্দন পুকুর, খাল ও ঝিলের শহর। অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং ভরাট ও দখলের কারণে এসবের অস্তিত্ব এখন নেই বললেই চলে। রাজধানী হয়ে উঠেছে ইট-পাথরের শহর। প্রাকৃতিক এসব পানির আধার না থাকায়, তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াসহ বিশুদ্ধ পানির সংকট ও পরিবেশ বিপর্যয় এখন নগরীর নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বলা যায়, রাজধানীর আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে গেছে। বিশ্বের অন্যতম নিকৃষ্ট শহরে পরিণত হয়েছে। এটা এখন কল্পনাও করা যায় না, ১৯৮৫ সালে রাজধানীতে দুই হাজার পুকুর ছিল। শুধু পুকুর নয়, প্রায় ৪৪টি স্রোতস্বিনী খাল ছিল। এ তথ্য এ প্রজন্মের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে। অথচ বাস্তবতই ঢাকার খাল, ঝিল ও পুকুরের চিত্র এমনই ছিল। নগরবিদদের মতে, সচেতনতা ও পরিবেশবান্ধব চিন্তার অভাবে নগরীর পুকুর, ঝিল ও খাল হারিয়ে গেছে। নগর উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক সংস্থা এবং সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সমন্বয়হীনতার কারণে এগুলো হারিয়ে গেছে। যে অল্প সংখ্যক পুকুর রয়েছে, সেগুলোও অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে রয়েছে। বলা বাহুল্য, পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ ছাড়া রাজধানীর পরিবেশ কখনোই ভাল থাকতে পারে না। এখানে বসবাস করাও ঝুঁকিপূর্ণ।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক পরামর্শ সেবাদানকারী সংস্থা মার্সারের করা ‘এইটিনথ কোয়ালিটি অব লাইফ র্যাংকিং’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবনযাপনের মানের দিক থেকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট শহরের তালিকায় রয়েছে ঢাকা। ২৩০ শহরের মধ্যে বসবাসের দিক দিয়ে ঢাকার অবস্থান ২১৪ নম্বরে। গত বছর ছিল ২০৪ নম্বরে। এ বছর ১০ ধাপ নেমে গেছে। জীবনযাপনের মানের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় এ তালিকা তৈরি করা হয়। সংস্থাটির এ প্রতিবেদন থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, যতই দিন যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা ততই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। কেন হচ্ছে তা সকলেরই জানা। রাজধানীর জনসংখ্যা এখন প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে ৪৩ হাজার ৫০০ জন। এই জনসংখ্যার সাথে প্রতিদিন গড়ে যুক্ত হচ্ছে ১৭০০ জন। বিশ্বের আর কোনো শহরে এত ঘনবসতি দেখা যায় না। আগামী কয়েক বছরে এর জনসংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা কল্পনা করা যায় না। এত অধিক সংখ্যক মানুষের স্থান সংকুলান করার ক্ষেত্রে যথাযথ কোনো পরিকল্পনাও নেই। যে যেভাবে পারছে ঠেলেঠুলে জায়গা করে নিচ্ছে। এর ফায়দা নিচ্ছে অবৈধ দখলকারীরা। পুকুর দখল, খাল দখল থেকে শুরু করে খোলা মাঠ ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলছে। এর ফলে সেবাব্যবস্থা, পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এসব মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তেমন কোনো চিন্তাভাবনা আছে বলে মনে হয় না। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেভাবে চলছে চলুক, তাদের কিছু করার নেই। এই উদাসীনতাই রাজধানীতে বসবাসের এক দুঃসহ পরিবেশ সৃষ্টি করছে। যে দুই হাজার পুকুর ছিল সেগুলোর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৯০০টি কোথায় গেল, ৪৪টি খালের সিংহভাগ কেন হারিয়ে গেল, এর মূলে নগর কর্তৃপক্ষকে যেতে দেখা যায় না। এর কারণ এগুলো যেমন সরকারিভাবে ভরাট করা হয়েছে, তেমনি বেসরকারিভাবে বিভিন্ন দখলদারদের কবলে চলে গেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের গোচরেই এসব খাল, পুকুর ও ঝিল দখল হয়েছে। যদি সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এগুলো সংরক্ষণ করা যেত, তবে রাজধানীর এই করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। আমরা দেখেছি, সরকারি কলোনিগুলোর ভেতরে একাধিক পুকুর ও মাঠ ছিল। বাসস্থান সৃষ্টি করতে গিয়ে সেসব পুকুরের বেশিরভাগই সরকারিভাবে ভরাট এবং মাঠ বরাদ্দ করা হয়েছে। ভরাট ও বরাদ্দ করার আগে চিন্তা করা হয়নি এতে পরিবেশের উপর কী বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করবে। এখন বিশুদ্ধ পানির যে সংকট, বায়ু দূষণ, পরিবেশ দূষণ এগুলোর মূল কারণই তো হচ্ছে প্রাকৃতিক পানির আধারগুলো ভরাট করে ফেলা। বলা হচ্ছে, রাজধানীর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর নিচে নেমে যাচ্ছে। চারদিকের চারটি নদী দখল-দূষণে প্রবাহ হারিয়ে ফেলায় রাজধানী শুকিয়ে মলিন হয়ে গেছে। যতই দিন যাবে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তখন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কোনো উপায়ই থাকবে না।
রাজধানীকে কিছুটা হলেও বসবাস উপযোগী করে তুলতে যে কয়টি পুকুর, ঝিল ও খাল রয়েছে সেগুলোকে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরী। অন্যদিকে যেসব খাল, পুকুর ও ঝিল উদ্ধার করা সম্ভব সেগুলো উদ্ধার করতে পারলে আরও ভাল হবে। এজন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং তার কঠোর পদক্ষেপ। যারাই অবৈধভাবে দখল করে আছে, যে কোনো উপায়ে তাদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করতে হবে। যে চারটি নদী দখলদারদের কবলে পড়েছে, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত অপরিহার্য। প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। পুকুর, খাল ও ঝিল রক্ষা এবং উদ্ধার করার দায়িত্ব যেসব প্রতিষ্ঠানের, তাদের এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। যেমন চলছে, চলুক- এ মানসিকতা থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বের হয়ে আসতে হবে। রাজধানীকে বসবাস উপযোগী করে তুলতে এবং আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হওয়া রুখতে তাদের উদ্যোগী হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।