পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চীন থেকে আনা দু’টি সাবমেরিন গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে নৌবাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের সাবমেরিন জেটিতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বানৌজা ‘নবযাত্রা’ ও ‘জয়যাত্রা’ নামের সাবমেরিন দু’টি নৌবাহিনীর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইএসপিআর’র তথ্য থেকে জানা যায়, ৭৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের সাবমেরিন দু’টি টর্নেডো ও মাইন দ্বারা সুসজ্জিত, যা শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনে আক্রমণ করতে সক্ষম। নৌবাহিনীকে পূর্ণাঙ্গ ও সক্ষম একটি বাহিনীতে পরিণত করার জন্য এতে সাবমেরিন সংযোজন অপরিহার্য ছিল। এ জন্য দীর্ঘদিন আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশেষে সেই অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে। চীন থেকে সাবমেরিন গ্রহণের পর নৌবাহিনী প্রধান বলেছিলেন, সরকার নৌবাহিনীকে আধুনিক, ত্রিমাত্রিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সাবমেরিন পাওয়ার মাধ্যমে নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক শক্তি হিসেবে যাত্রা শুরু করল। প্রকৃতপক্ষে গতকাল থেকেই এই যাত্রা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য, নৌবাহিনীর জন্য, ব্যাপক অর্থে সামরিক বাহিনীর জন্য গতকালের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সাবমেরিন সংযোজনের ফলে নৌবাহিনীর শক্তি ও সামর্থ্যই শুধু বাড়েনি, একই সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সক্ষমতাও বেড়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষায় সক্ষম সামরিক বাহিনী ছাড়া কোনো দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখন্ডতা নিরাপদ থাকতে পারে না। এ জন্যই যে কোনো দেশের জন্য আধুনিক, যুগোপযোগী ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর বিকল্প নেই। সামরিক বাহিনীর তিনটি শাখা সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর যুগপৎ উন্নয়ন এবং ভারসাম্যপূর্ণ বিকাশ ছাড়া শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আশার কথা এই, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীকে জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষায় সক্ষম বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার নিরস্তর প্রয়াস অব্যাহত আছে। সেই প্রয়াসেরই একটি উল্লেখযোগ্য নজির হলো নৌবাহিনীতে সাবমেরিন সংযোজন।
ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশে একটি দক্ষ, সক্ষম, আধুনিক ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এই প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষিতেই সামরিক বাহিনীর উন্নয়ন ও বিকাশে প্রতিটি সরকারই কাজ করে যাচ্ছে। বিগত প্রায় এক দশকে সামরিক বাহিনীর লোকবল, সামরিক সরঞ্জাম, অস্ত্রশস্ত্র বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার (জিএফপি) তার ওয়েবসাইটে তথ্য দিয়েছে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার চতুর্থ সামরিক শক্তিধর দেশ। আর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ৩৩ দেশের মধ্যে সামরিক শক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮তম এবং বিশ্বের ১২৬ দেশের মধ্যে ৫৩তম। অবস্থানগত কারণেই বিশ্বের পরাশক্তিসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে দেশগুলো গভীর আগ্রহ দেখাচ্ছে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক অবদানের জন্য বিপুল প্রশংসা লাভ করেছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিশ্বের অন্যতম সেরা সেনাবাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের মানুষও কায়মনোবাক্যে জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার তাকিদ থেকে আধুনিক, উপযোগী ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনী প্রত্যাশা করে। প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে যদি আমরা তাকাই, দেখব, সব দেশই তাদের নৌবাহিনীকে আলাদা গুরুত্ব প্রদান করছে। ভারত, চীন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি দেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। সমুদ্রে প্রভাব ও প্রাধান্য বিস্তার এবং তা সুরক্ষার জন্য তাদের এই প্রয়াস অব্যাহত আছে। সঙ্গতকারণেই বাংলাদেশের নৌবাহিনীকে দেশের সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা ও সমুদ্র সম্পদ আহরণ ত্বরান্বিত করতে আরো সক্ষম ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে তার এই অভিযাত্রাকে সফল ও পূর্ণাঙ্গ করে তুলতে হবে।
ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত প্রভৃতি দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করতে চায়। বাংলাদেশ ও চীন ইতোমধ্যেই একে অপরকে কৌশলগত মিত্র ঘোষণা ধরেছে, যার অন্যতম লক্ষ্য সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করা। বলা যায়, অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের সময়ে এই সম্পর্কসহ অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা লাভ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পার্টনারশিপ ডায়ালগও মূলত কৌশলগত। এর সঙ্গে সামরিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ভারতও বাংলাদেশের সঙ্গে একটি কৌশলগত সম্পর্ক গড়তে চায়। এ জন্য সে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানকামী প্রতিটা দেশেরই। লক্ষ্য করার বিষয়, বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে সাবমেরিন সংগ্রহ করার পর থেকেই ভারত অতি বিচলিত হয়ে পড়েছে। সে এটা ভালোভাবে নেয়নি। ভারতের বিভিন্ন মিডিয়ায় এ সম্পর্কে ভারতের মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। ভারত এর বিপরীতে কিংবা বলা যায়, চীনকে মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চায়। চীন বাংলাদেশের স্বাভাবিক মিত্র। তার মোকাবিলায় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ জোট বাঁধবে কেন? আমাদের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞগণ স্পষ্টই অভিমত দিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি করা ঠিক হবে না। এই চুক্তির কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব যে কোনো সময় বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে। কাজেই, জাতীয় স্বার্থের পক্ষে হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে, এমন কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি করা যাবে না। এই সঙ্গে জাতীয় প্রয়োজনেই আমাদের সামরিক বাহিনীকে সবদিক দিয়ে আরো সক্ষম ও শক্তিশালী করে তুলতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।