Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

উত্তরপ্রদেশ-উত্তরাখন্ডে ক্ষমতায় বিজেপি

প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:১৫ এএম, ১২ মার্চ, ২০১৭


পাঞ্জাব, গোয়া ও মণিপুরে কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ

ইনকিলাব ডেস্ক : উত্তরপ্রদেশে রীতিমতো বয়ে গেছে মোদি সাইক্লোন। এ সাইক্লোনের ওপর ভর করে দেড় দশক পর প্রদেশটিতে ঘটেছে বিজেপির প্রত্যাবর্তন। একাই ৩২৫টি আসন লাভ করেছে বিজেপি। পক্ষান্তরে সমাজবাদী পার্টি সপা পেয়েছে ৫৪টি এবং বহুজনা সমাজবাদী পার্টি বসপা পেয়েছে ১৯টি আসন। বাকি পাঁচটি পেয়েছে অন্যরা। ১৯৯১-এ বাবরী মসজিদ ভেঙে সেটাকে পুঁজি করে যে চমক সৃষ্টি করেছিল বিজেপি তাকেও ছাপিয়ে গেল এবারের মোদি ঝড়। বিজেপি শহরাঞ্চলে ভালো ফল করেছে। ভারতের সর্ববৃহৎ রাজ্য ও কংগ্রেস ঘরানার শক্ত ঘাঁটিতে গেরুয়া জয়ের ফলে ল²ৌ থেকে দিল্লি পর্যন্ত চলছে আবির খেলা, মিষ্টি বিতরণ।
উত্তরপ্রদেশের মতো উত্তরাখন্ডেও বিজয় কেতন উড়েছে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টির। কংগ্রেসের ১১টির বিপরীতে তারা দখল করেছে ৭০ আসনের বিধানসভার ৫৭টি সিট। তবে পাঞ্জাবের ক্ষমতায় ফিরেছে কংগ্রেস। আর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর সামান্য আসন বেশি পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে কংগ্রেস।
উত্তরপ্রদেশের যাদব অধ্যুষিত ৫০ শতাংশ আসনে সমাজ পার্টিকে টেক্কা দিয়েছে বিজেপি। দলিত অধ্যুষিত ৬০ শতাংশ আসনে বহজন সমাজবাদী পার্টিকে ছাড়িয়ে গেছে গেরুয়া। সংখ্যালঘু আসনেও বিজেপির ভালো ফল হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশে ঝড়ো সাফল্যের হাওয়ায় বিজেপির নিশ্চিন্ত ভবিষ্যত। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে রাজ্যসভায় দাপট, আগামীতে সব পথ পরিষ্কার। এদিকে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিরাট সাফল্যের পর ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ এনেছেন বসপা নেত্রী মায়াবতী। তার দাবি, অন্য দলকে দেয়া ভোটও গেছে বিজেপির পক্ষে। ফল বাতিল করে ব্যালটে ফের ভোট করানোর দাবি বসপা নেত্রীর।
এদিকে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ্্দের হোলির রঙ আরো গাঢ় করল উত্তরাখÐ। মোদি-ঝড়ের ওপর ভর করে উত্তরপ্রদেশের মতো এ পাহাড়ি রাজ্যেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল বিজেপি! ১০ বছর পর ফের উত্তরাখÐের কুর্সি দখল করল তারা। উত্তরাখÐ বিধানসভার ৭০টি আসনের মধ্যে বিজেপি একাই ৫৭টি আসন দখল করেছে। কংগ্রেসের ঝুলিতে গেছে মাত্র ১১টি। অন্যরা পেয়েছে দু’টি।
গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বলেন, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখÐে অপ্রত্যাশিত জয় পেয়েছে বিজেপি। সম্ভবত স্বাধীন ভারতের বুকে সবচেয়ে বড় জয়।
যাকে মুখ করে উত্তরাখÐে ভোটে লড়েছিল কংগ্রেস, সেই হরিশ রাওয়াতকেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। এবার কিছা ও হরিদ্বার গ্রামীণ আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু দু’টিতেই বিজেপির কাছে হেরে গিয়েছেন রাওয়াত। হরিদ্বার গ্রামীণে তার হারের ব্যবধান ১২ হাজার ২৭৮। কিছায় মাত্র দুই হাজার ১৫৪ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন তিনি।
৯ কংগ্রেসি বিধায়ক বিজেপি শিবিরে নাম লেখানোয় গত বছর উত্তরাখÐে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। রাজ্যে প্রেসিডেন্ট শাসন জারির সুপারিশ করে মোদি সরকার। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় কংগ্রেস।
পাঞ্জাবে পর্যুদস্ত হয়েছে শাসক বিজেপি-আকালি জোট। সরকার গড়তে চলেছে কংগ্রেস। দু’নম্বরে আপ। ১১৭ আসনের মধ্যে ৭৭টিতে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। ২২টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে দিল্লির পর পাঞ্জাবে সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখা আম আদমি পার্টি। এই রাজ্যে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী ক্যাপ্টেন অমারিন্দম সিং পাটিয়ালায় জয় পেলেও লাম্বি আসনে হেরে গেছেন। তবে জিতেছেন বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেয়া সাবেক ক্রিকেটার নবজ্যোত সিং সিধু। এ দীর্ঘদিন পর আকালী জোটের ভরাডুবি হয়েছে। তারা পেয়েছে মাত্র ১৮টি আসন।
গোয়া-মণিপুরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চললেও শেষ পর্যন্ত বেশি আসন পেয়েছে কংগ্রেসই। তবে তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ৪০ আসনের গোয়া বিধানসভায় ১৭টি কংগ্রেস, ১৩টি আসনে বিজেপি এবং অন্যরা ১০ আসনে বিজয়ী হয়েছে। এ রাজ্যে হেরে গেছেন মুখ্যমন্ত্রী ল²ীকান্ত পারসেকর।
৬০ আসনের মণিপুরে সর্বোচ্চ ২৬টি আসন দখল করেছে কংগ্রেস। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ২২টি আসন পেয়েছে বিজেপি। অন্যরা পেয়েছে ১১টি আসন। এখানে  সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ২৭ বছর বয়সে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে ১৬ বছর অনশন করেন যে ইরম শর্মিলা চানু তার মর্যাদা দেয়নি সেখানকার জনগণ। মাত্র ৯০টি ভোট পেয়ে জীবনে আর কোনো নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মোদিকে টুইটারে অভিনন্দন রাহুলের, পাল্টা ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীর
উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখÐে বিপুল জয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ও বিজেপিকে অভিনন্দন জানালেন রাহুল গান্ধী। গতকাল টুইটারে তিনি লেখেন, ‘উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখÐের জয়ের জন্য আমি নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপিকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। পাল্টা, কংগ্রেস সহ-সভাপতিকে ধন্যবাদ জানালেন নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘ধন্যবাদ। গণতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক’।
বিজেপিকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি এদিন পাঞ্জাবে দলের জয় নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানান রাহুল। এক দশক পর সেখানে কংগ্রেস সরকার গঠন করছে। এর জন্য সেই রাজ্যের বাসিন্দাদের ধন্যবাদ জানান কংগ্রেস সহ-সভাপতি। লেখেন, দলের ওপর আস্থা ও সমর্থনের জন্য পাঞ্জাবের সবাইকে ধন্যবাদ।
এই রায় পাঞ্জাব ও তার যুব স¤প্রদায়ের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতীক হবে। পাঞ্জাবে ফলাফলের জন্য তিনি ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ ও সকল দলীয় কর্মীদেরও অভিনন্দন জানান। লেখেন, তারা সকলেই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। পাশাপাশি দেশের প্রতিটি কংগ্রেস কর্মীর উদ্দেশেও বার্তা দেন রাহুল। লেখেন, শক্তি ও উদ্দেশে ঐক্যবদ্ধ ভারত গড়তে আমরা আমাদের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি দায়বদ্ধ। তিনি মনে করিয়ে দেন, যতদিন না মানুষের হৃদয় ও মন জিতছেন, ততদিন তার লড়াই চলবে।
নবজ্যোত সিং সিধুর প্রতিক্রিয়া
এদিকে বিজয়ী হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নবজ্যোত সিং সিধুও। তিনি বলেছেন, ‘এটা সবে শুরু। এই জয় কংগ্রেসের পুনরুজ্জীবন। এখান থেকেই ছড়িয়ে পড়বে কংগ্রেস’। অমৃতসর পূর্ব কেন্দ্র থেকে জয়ী সিধু আরো বলেন, ‘মানুষ দুষ্টের অহঙ্কার ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছেন। জিতিয়েছেন ধর্মকে’। জয়ের খবর আসার পরপরই তার বাড়ির বাইরে শুরু হয়ে যায় সমর্থকদের উল্লাস। প্রসঙ্গতঃ তার জয়ে স্ত্রী নভজ্যোত কাউরের ভ‚মিকার কথাও বলতে ভোলেননি তিনি। তবে তিনি তার এই জয় উৎসর্গ করেছেন পাঞ্জাবের মানুষের উদ্দেশে।
কে হচ্ছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী?
ওদিকে উত্তর প্রদেশে জয়লাভের পর কার হাতে এখানকার দায়িত্বভার অর্পণ করা হবে তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। এ ক্ষেত্রে পাঁচটি নাম আসছে ঘুরেফিরে। দৌড়ে সবার আগে রয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের নাম। এ ছাড়াও উচ্চারিত হচ্ছে কেশব মৌর্য, মনোজ সিনহা, যোগী আদিত্যনাথ ও উমা ভারতীর নাম। অখিলেশ-রাহুল জোটের বিপরীতে কোনো মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে আনেনি বিজেপি। মূলতঃ নরেন্দ্র মোদিকেই ফোকাস করেছে তারা। তাতেই করেছে বাজিমাত। এতদিন মুখ্যমন্ত্রীর নাম নিয়ে ভাবনা-চিন্তা না করলেও এবার তাই শুরু করতে হয়েছে কেন্দ্রে সরকার গড়া হিন্দুবাদী বিজেপিকে। সূত্র : ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ