Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তরুণদের নিখোঁজ হওয়া রুখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তরুণদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ফের বাড়ছে। ইতোপূর্বে নিখোঁজ হওয়া তরুণদের একাংশের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। এটা যুগপৎভাবে পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তরুণরা স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হচ্ছে, না কি তাদের কোনো মহল প্ররোচনা দিয়ে বা প্রভাব খাটিয়ে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে অথবা কোনো মহল জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, সেটা সুস্পষ্টভাবে নির্ণয় করা কঠিন। খবরা-খবর ও তথ্যাদি পর্যালোচনা করে নিখোঁজ হওয়ার এই তিনটি কারণই লক্ষ্য করা গেছে। কেউ স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছে। কোনো কোনো চক্র ধর্মীয় উগ্রবাদের প্রচার চালিয়ে প্ররোচিত ও প্রভাবিত করে নিয়ে গেছে। কখনো কখনো আইন-শৃংখলা বাহিনীর নামে কাউকে কাউকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তরুণদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা আগে তেমন গুরুত্ব দেয়া না হলেও গুলশানের হলি আর্টিজেনে জঙ্গি হামলা হওয়ার পর এ নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়। এব্যাপারে উদ্বেগ জানানো হয় বিভিন্ন মহল থেকে। তখন পুলিশ ও র‌্যাব নিখোঁজ হওয়াদের পৃথক দুটি তালিকা প্রকাশ করে। পুলিশের তালিকাটি ছিল ৪০ জনের। আর র‌্যাবের তালিকাটি প্রথমে ২৬২ জনের বলা হলেও পরে সংশোধন করে বলা হয় ৬৮ জন। পুলিশ ও র‌্যাবের ভাষ্যমতে, নিখোঁজ তরুণদের একাংশের জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্ট হওয়ার বা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক কালেও কিছু তরুণের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। তবে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা ওই নিখোঁজ তরুণদের কত জনের ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে তা জানানো হয়নি। র‌্যাবের তরফে বলা হয়েছে, তার তালিকাভুক্ত তরুণদের কতজন জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্ট, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের তালিকাভুক্ত ৪০ তরুণের ব্যাপারে পরবর্তী আর কোনো তথ্য দেয়া হয়নি।
ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, নিখোঁজ ৪০ জনের ১৯ জন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে দেশের বাইরে আছে বলে আইন-শৃংখলা বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে। ওই তালিকার কয়েকজন আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। ১০ জন জীবিকার সন্ধানে অবৈধভাবে সাগর পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়েছে। কয়েকজন মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে থাইল্যান্ডে আটক থেকে পরে দেশে ফিরে এসেছে। ওদিকে গুলশানের হলি আর্টিজেনে হামলার পর কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ১০ যুবকের সন্ধান চেয়ে তাদের ফিরে আসার আহ্বান জানায় তাদের পরিবার। তাদের ফিরে আসার বা না আসার ব্যাপারে কী তথ্য আছে, আমাদের জানা নেই। তরুণদের একাংশের জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতা যে কোনো বিবেচনায় গভীর উদ্বেগের বিষয়। তারুণ্যের যে স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য, তাতে তরুণদের কারো বিপথগামী হওয়া, কারো কিছুতে প্ররোচিত ও প্রভাবিত হওয়া কিংবা যে কোনো কিছু করার প্রবণতা অস্বাভাবিক নয়। তারা সহজে আবেগতাড়িত ও উদ্বুদ্ধ হয়, কখনো হতাশায় আক্রান্ত হয়ে বেদিশা হয়ে আত্মঘাতী পথে যেতেও দ্বিধা করে না। তারুণ্যের এই কালটা যেমন স্বর্ণপ্রসবি তেমনি আত্মবিনাশী। তরুণদের যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়, তাদের নিয়ন্ত্রণ ও ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করা যায়, তাহলে তারা অসাধ্য সাধন করতে পারে। অন্যদিকে এর ব্যতিক্রম হলে তারুণ্যের বিনষ্টি ও অপচয়ই হয় না, তরুণরা খারাপের এমন কিছু নেই যা করতে পারে না। এতে তাদের নিজেদের, পরিবারসমূহের এবং দেশের যে ক্ষতি হয় তা কোনো কিছুতেই পূরণ হয় না।
তরুণরা জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক। তারাই দেশের ভবিষ্যৎ, সমাজের ভবিষ্যৎ। তাদের লালন-পালন, শিক্ষা-দীক্ষা ও ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায়িত্ব পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের। পরিবারের সঙ্গে বা তত্ত¡াবধানে থাকা, সমাজের নজরে থাকা তরুণ কীভাবে বিপথগামী হয়, জঙ্গিবাদে দীক্ষা নেয়, সন্ত্রাসী কর্মে নিয়োজিত হয়, অপরাধে সম্পৃক্ত হয়, সেটা অবশ্যই একটি বড় প্রশ্ন। বুঝাই যায়, যেভাবে তার খেয়াল রাখা দরকার, তার সব কিছুর ওপর নজরদারী বহাল রাখা দরকার, সেভাবে খেয়াল ও নজর রাখা হচ্ছে না। তরুণদের নিখোঁজের দায় কোনোভাবেই তাদের পরিবার এড়িয়ে যেতে পারে না। সমাজও নীরব থাকতে পারে না। আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবস্থা আগের জায়গায় নেই। নানা কারণে সেখানে ভাঙন ধরেছে। সেই একান্নবর্তী পরিবার নেই। সিঙ্গেল পরিবারের বাবা-মা অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে তাদের সন্তানদের যথাযথভাবে প্রতিপালন ও নজরদারী করতে পারে না। সমাজের বন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ এতটাই শিথিল পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, তা কার্যকর নেই। বিষয়টি বাস্তব হলেও এর ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার শিকার কিন্তু পরিবার, সমাজ-রাষ্ট্রকেই হতে হচ্ছে। সব দিক দিয়ে আমাদের তরুণদের সুরক্ষা দিতে হবে, তাদের উপযুক্ত লালন-বর্ধন, শিক্ষা-দীক্ষা, সৎ ও বিচক্ষণ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দেশ-জাতির উন্নত-সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য এর বিকল্প নেই। এব্যাপারে পরিবারকেই প্রধান দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিবারের প্রতিটি সন্তানের প্রতি সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারী নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সময় দিতে হবে, সৎ সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। জানা গেছে, নিখোঁজ তরুণদের ব্যাপারে যথাসময়ে অবহিত করতে ব্যর্থ হলে তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। আইন-শৃংখলা ও আইনী দৃষ্টিকোণ থেকে এটা কিছু ফল দিলেও মূল সমস্যার সমাধান হবে না। মূল সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে সেদিকেই নজর দিতে হবে। তরুণদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা, মূল্যবোধে চর্চা ও সার্বক্ষনিক তত্ত¡াবধায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তাদের নিরাপত্তা ও কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের হতাশা দূর করতে হবে।  উত্তম স্বপ্ন দেখাতে হবে। তাদের মধ্যে আত্মোপলব্ধির শক্তি জাগ্রত করতে হবে। যে কোনো বিপদ ও বিপথ থেকে আত্মরক্ষার সামর্থ্য বৃদ্ধি করতে হবে। নিখোঁজ তরুণদের হদিস বের করতে রাষ্ট্র আরও সচেষ্ট হবে। কেউ যাতে আর হারিয়ে বা নিখোঁজ হয়ে যেতে না পারে, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে নেবে, এটাই আমরা কামনা করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন