পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও গাইড লাইন থাকা সত্তে¡ও বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার এবং আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশের নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। এর ফলে পুলিশ কর্তৃক রিমান্ডে নির্যাতন এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলেছে। গতকাল একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামি বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতন না করার বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্তে¡ও তা মানা হচ্ছে না। প্রায়ই আদেশ লঙ্ঘিত হচ্ছে। প্রতিবেদনে রিমান্ডে নির্যাতনের চিত্রও তুলে ধরা হয়। এ নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করা আদালত অবমাননা করা। এতে আইনের শাসন ব্যাহত হয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, গত বছরের ১০ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালত বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন করে দেন। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য ১০ দফার একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। একই সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য ৯ দফা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনের বিষয়ে ৭ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়। এসব নির্দেশনা প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র্যাবের মহাপরিচালককে সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়। আদালতে নির্দেশনার কপি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হলেও এ রায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। এমনকি নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারও কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি।
সর্বোচ্চ আদালতের রায় এবং নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করা বা উদ্যোগ না নেয়া দুঃখজনক। এটা সুস্পষ্টভাবে আইনের শাসনের পরিপন্থী। মানুষের আশা-ভরসার স্থল সর্বোচ্চ আদালতের রায় অমান্য করা হলে তাদের আর যাওয়ার কোনো জায়গা থাকে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের মানবাধিকার রক্ষা এবং জনকল্যাণে আদালত সর্বদা সচেষ্ট এবং রক্ষা কবচ হয়ে দাঁড়ায়। আদালতের রায় যথাযথভাবে বাস্তবায়ন ও প্রতিপালন করা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্ব। আমরা দেখেছি, উচ্চ আদালত জনকল্যাণে অনেক প্রশংসনীয় রায় দিয়েছেন। দেখা গেছে, সেসব রায় সঠিকভাবে বাস্তবায়ন কিংবা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উদ্যোগ নেয়া হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যেত। পুলিশ হেফাজতে আসামির মৃত্যু এবং বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতারের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে মানুষের কাছে এক ধরনের আতঙ্ক হয়ে ছিল। উচ্চ আদালত এবং সর্বোচ্চ আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে এই অনিয়মের প্রতীকার কীভাবে করা যায় তা, অত্যন্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে জনমনে স্বস্তি ও আশার সঞ্চায় হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আদালতের এ রায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অদ্যাবধি কার্যকর করেনি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র যেমন উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নির্দেশনা উপেক্ষা করে পূর্বের ধারা বজায় রেখেছে। এর ফলে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার এবং রিমান্ডে নির্যাতনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এটা নিঃসন্দেহে আদালত অবমাননার শামিল। অন্যদিকে রায়ের কিছু নির্দেশনা সংশোধন চেয়ে সরকারের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে পুনর্বিবেচনা করার আবদেন করা হয়েছে। এর বিপক্ষে দ্বিমত পোষণ করেছেন আইনবিদরা। তারা বলেছেন, সরকারের পুনর্বিবেচনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সর্বোচ্চ আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা সংবিধান ও প্রচলিত আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সরকারের উচিত রায় বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। রায় প্রতিপালন বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, যারা আইন বা আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করছেন, তাদের জন্য প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অবশ্যই একটা আদেশ দেবেন। প্রশ্ন হচ্ছে, আদালত সবকিছু সুবিবেচনা করে চূড়ান্তভাবে রায় দিয়ে দিয়েছে। এ রায় বাস্তবায়ন করা সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তা করা হচ্ছে না কেন? সংশ্লিষ্টরা আইন ও আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে না, তাদের মতো করেই চলবে, এটা কেমন কথা! আদালতের এমন অবমাননা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ ধরনের প্রবণতা পুরোপুরি আইন লঙ্ঘন এবং সুশাসনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আইন ও আদালতের এমন উপেক্ষা জনমনেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তারা মনে করতে পারে, যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই আইন-আদালত মানে না, সেখানে সুবিচার পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নির্যাতনের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের সমাজে আতঙ্ক হয়ে আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাকে কখন গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে এবং রিমান্ডে নেবে তার কোনো ঠিকঠিকানা ছিল না। সাধারণ মানুষকে এই ভয় ও আতঙ্ক থেকে মুক্তি দিতেই সর্বোচ্চ আদালত এক যুগান্তকারী রায় ও নির্দেশনা দিয়েছেন। আদালতের এ রায় সর্বমহলেই প্রশংসিত ও জনবান্ধব হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। এ রায় বাস্তবায়নে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমস্যা কোথায়, তা বোঝা মুশকিল। কারণ রায়ে পরিষ্কারভাবেই আসামি গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেয়ার নিয়ম কানুন বলে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে কোনো ধরনের দ্বিধা-সংশয় ও গড়িমসি করার কারণ নেই। আমরা মনে করি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সবাইকে আইন মানতে হবে। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের নির্দেশনা প্রতিপালন করা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। আমরা মনে করি, সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও নির্দেশনা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করবে এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেবে। আদালত যে আদেশ ও গাইডলাইন দিয়েছেন তা প্রতিপালনে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় মনিটরিংয়ের পদক্ষেপ নেবে। নাগরিক জীবনের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আদালত যে রায় দিয়েছে, তা সমুন্নত রাখতে হবে। তা নাহলে মানুষ যেমন তার আইনগত অধিকার ফিরে পাবে না, তেমনি আইন অমান্যর দুঃখজনক ঘটনার শিকার হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।