পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শামসুল ইসলাম : অবশেষে জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় অনলাইনের মাধ্যমে কর্মী যাচ্ছে মালয়েশিয়ায়। আজ শুক্রবার রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটযোগে ৯৭ জন কর্মী মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবে। মালয়েশিয়ার শ্রম আইন অনুযায়ী এসব কর্মী সুযোগ-সুবিধাদি পাবে। হাতে গোনা কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সি’র মাধ্যমেই দীর্ঘ আট বছর পর নতুন প্রক্রিয়ায় আবারো মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি শুরু হচ্ছে। অভিবাসন ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনা হবে। পর্যায়ক্রমে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিই মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের সুযোগ পাবে। বায়রার মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন এ তথ্য জানিয়েছেন। মালয়েশিয়ার ফেলডা কোম্পানিতে কর্মী নিয়োগের উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ ব্যাপারেও শিগগিরই একটি সমঝোতা হবে বলেও বায়রার মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর আগে বুধবার রাতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র সাথে তার নতুন বাসভবনে জার্নালিস্ট’স ফোরাম অন মাইগ্রেশন (জেএমএফ)-এর নেতাকর্মীরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি উদ্বোধনী ফ্লাইটে ১০২ জন কর্মী মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা জানিয়ে জানান, উদ্বোধনী ফ্লাইটের কর্মীদের তিনি বিদায় জানাতে যাবেন। এবারই প্রথম সোর্স কান্ট্রির মর্যাদায় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাচ্ছে। এর আগে মালয়েশিয়াগামীদের নিয়োগনুমতি, মেডিক্যাল, ট্রেনিং, ব্রিফিং ও বহির্গমন ছাড়পত্র সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম গ্রæপে ৩টি রিক্রুটিং এজেন্সীর মোট ৯৭ জন কর্মী কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (কেএলআইএ) ‘কার্গো লোডার’ পদে নিয়োগ পেয়েছেন। চলতি মাসে আরো ৩০০ কর্মীর যাওয়ার কথা রয়েছে। প্রত্যেক কর্মী মাসে এক হাজার মালয়েশীয় রিংগিত বেতন পাবেন বলে বায়রা নেতারা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মোট সোয়া ৮ লাখ বাংলাদেশী কর্মী কলিং ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়ায় গেছে। তাদের বেশিরভাগই যাওয়ার পর চাকরি পাওয়াতো দূরের কথা ব্রিজের নিচে, খেয়ে না খেয়ে শেল্টার হোমে মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় মালয়েশিয়া সরকার বাধ্য হয়ে বিনা নোটিশে ৫৫ হাজার কর্মীর ভিসা বাতিল করে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। এতে বিপাকে পড়ে যায় দেশে আটকে পড়া হাজার হাজার কর্মী ও তাদের মনোনীত রিক্রুটিং এজেন্সী। এবার যাতে ওই পরিণতি কোনো কর্মীর ভাগ্যে না ঘটে সেটির উপর নজর রাখছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বায়রাসহ সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল রাতে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন ইনকিলাবকে বলেন, শুক্রবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ১০২ জন কর্মীর যাওয়ার কথা থাকলেও সর্বশেষ ৯৭ শ্রমিকের যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে দু’জন শ্রমিকের ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলছে না।
এক প্রশ্নের জবাবে বায়রা মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন বলেন, অভিবাসন ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে। পর্যায়ক্রমে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সীই কর্মী প্রেরণের সুযোগ পাবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ফেলডা কোম্পানিতে কর্মী প্রেরণে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যা শিগগিরই সুরাহা হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, শুক্রবার প্রথম ফ্লাইট যাওয়ার পর দেশটিতে কর্মী যেতে থাকবে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, তারা আমাদের দেশ থেকে লোক চায়। তাদের কাছে আমাদের কর্মীদের অনেক সুনাম রয়েছে। মালয়েশিয়ার মতো মিডলইস্টে আমাদের কর্মীদের অনেক সুখ্যাতি রয়েছে। কারণ আমাদের কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করে। বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে। যার কারণে কর্মীদের ব্যাপারে উই আর হ্যাপি। জি টু টি প্লাস পদ্ধতিতে এবার প্লানটেশন, ফাক্টরি ও সার্ভিস সেক্টরে কর্মী পাঠানো হবে।
এ প্রসঙ্গে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)-এর সভাপতি বেনজির আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মীদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়াবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।
গত ২২ ফেব্রæয়ারি মালয়েশিয়ার মানব সম্পদমন্ত্রী দাতো শ্রী রিচার্ড রায়ত আনাক জায়েম এক চিঠিতে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশনার মো. শহিদুল ইসলামকে নির্বাচিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় পড়বে ৩৪ হাজার টাকা থেকে ৩৭ হাজার টাকা। তবে অভিবাসন ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া থেকে কর্মী নিয়োগের ৯ হাজার নিয়োগানুমতি এসেছে। বায়রার নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে। ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারি ঢাকায় জি টু জি প্লাস চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও মালয়েশিয়ার পক্ষে সফররত মানব সম্পদমন্ত্রী দাতো শ্রী রিচার্ড রায়ত আনাক জায়েম স্বাক্ষর করবেন। এ চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ সোর্স কান্ট্রি হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। চুক্তি স্বাক্ষরের পরের দিনই মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের বিদেশি কর্মী নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সম্পূর্ণ অনলাইনের মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি বেসরকারি ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচিত করে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের মার্চ মাস থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে। বহু ক‚টনৈতিক তৎপরতার পর ২০১২ সালে মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের জি টু জি প্রক্রিয়ায় শুধু প্লানটেশন খাতে সরকারি উদ্যোগে কর্মী যাওয়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া কর্মী প্রেরণের জন্য ডাক-ঢোল পিটিয়ে দু’দফায় সারা দেশ থেকে প্রায় ২২ লাখ কর্মীর নিবন্ধন করা হয়েছিল। কিন্ত জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে এ যাবত প্রায় ১০ হাজার কর্মী জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া গেছে। এছাড়া , গত বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দেশটিতে সকল অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধকরণের ঘোষণা দিয়েছেন। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ কর্মীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বৈধকরণের সুযোগ থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।