Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পচা ও পোকা ধরা ডিম দিয়ে সীতাকুন্ডে তৈরি হচ্ছে কেক-বিস্কুট

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বেকারি বন্ধ

| প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : ডিমগুলো পচে গেছে অনেক আগে। পচা এই ডিমে কিলবিল করছে পোকাও। তবুও সেই ডিম দিয়ে তৈরী হচ্ছে বেকারির কেক-বিস্কুটসহ সু-স্বাদু আরো হরেকরকম খাবার! পরে তা অবলীলায় বাজারে বিক্রি করে জনস্বাস্থ্যের বারোটা বাজিয়ে বেকারিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক কর্তৃক প্রদত্ত ‘স্বাস্থ্য সম্মত খাবারের’ সার্টিফিকেট। যা বিস্মিত করেছে সবাইকে। আর চমকপ্রদ এসব ঘটনা ঘটিয়েছে সীতাকুন্ডের বাড়বকুন্ডের শুকলালহাটের মো. এনামুল হকের মালিকানাধীন নিউ আজমীর বেকারি নামক খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। গতকাল মঙ্গলবার ভ্রাম্যমান আদালত ঐ বেকারিতে অভিযান চালালে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই বাড়বকুন্ড শুকলালহাটের নিউ আজমীর বেকারি নামক খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে এভাবে মানহীন ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক খাদ্য উৎপাদন করা হচ্ছিল। অল্প পুঁজিতে বেশি লাভের আশায় এ বেকারির মালিক খাবার তৈরীতে পচা-গলা ডিম থেকে শুরু করে কাপড়ের রং, মানহীন ফ্লেবারসহ নানান নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করে আসছিলো। যা নিয়মিত বাজারজাত করায় অসংখ্য মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে যায়। কিন্তু এতদিন এ নিয়ে কারোই কোনো মাথা ব্যাথা দেখা যায়নি। অন্যদিকে দেরিতে হলেও নিউ আজমীর বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর এসব খাদ্য উৎপাদনের বিষয়টি সীতাকুন্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রহুল আমিন জানতে পারার সাথে সাথে গতকাল সেখানে অভিযান পরিচালনা করেন। ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমিন প্রতিবেদককে বলেন, গতকাল বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তিনি নিউ আজমীর বেকারিতে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় দেখা যায়, অত্যান্ত নোংরা পরিবেশে কেকসহ বিভিন্ন রকম খাদ্য তৈরী করা হচেছ। খাবারে ব্যবহার করা কেকগুলি পচে গলে পোকায় ভর্তি হয়ে গেছে। তবুও সেগুলো খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহার হচ্ছে। খাবার ভাজা হচ্ছে কয়েক মাস আগের পোড়া তেলে। সুন্দর ও সুগন্ধির জন্য দেওয়া কাপড়ের ক্ষতিকারক রং ও ফ্লেভার। কোন পণ্যের গায়েই মেয়াদের তারিখ দেওয়া ছিলো না। পামওয়েল, চিনি, ডালডা, ময়দা প্রভৃতি রাখা হয়েছে খুবই নোংরা পরিবেশে। বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে এক বছর আগে। ম্যাজিস্ট্রেট রহুল আমিন আরো বলেন, অনুমোদন বিহীন পলি ব্যাগও ব্যবহার করা হচ্ছে এই কারখানায়। অভিযানকালে বেকারির মালিক মো. এনামুল হক একটি স্বাস্থ্য সনদ দেখান। দেখা যায়, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. জাহেরুল হক প্রত্যয়ণ পত্রে নিউ আজমীর বেকারির খাদ্য স্বাস্থ্য সম্মত ও নিরাপদ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে জাহেরুল হক কোনোদিন ঐ কারখানা পরিদর্শন করেছে কিনা ম্যজিস্ট্রেট জানতে চাইলে মালিক এনামুল হক কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি। এ সময় মানহীন ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক খাদ্য উৎপাদনের কথা স্বীকার করে নিউ আজমীর বেকারির মালিক ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং সাময়িকভাবে বেকারিটি বন্ধ করে দেন। তিনি বেকারিটি স্বাস্থ্য সম্মত করার পর বিএসটিআই এর লাইসেন্স গ্রহণ করে ব্যবসা পরিচালনা করার নির্দেশ দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পচা

২০ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ