Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পাটের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে বহুমুখী পাট পণ্যের রফতানি দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশের পাটের তৈরি আধুনিক বিলাস সামগ্রী এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ব্রিটিশ রাজপুত্র প্রিন্স চার্লসের বাসায়। স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের রাণীর হাতে পৌঁছে গেছে পাটের তৈরি ব্যাগ। ২০১১ সালে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে ১৫ হাজার অংশগ্রহণকারীর হাতে যে আকর্ষণীয় ডিজাইনের পাটের ব্যাগ তুলে দেয়া হয়েছিল সেগুলো গিয়েছিল বাংলাদেশ থেকে। ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমিও তাদের বার্ষিক সম্মেলনে প্রতিবছর পাটের ব্যাগই  সদস্যদের উপহার দিয়ে আসছে। বলা হয়েছে, পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে বিশ্বের বেশিরভাগ পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলনে পাটের ব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো বেশিরভাগই যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। এদিকে দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাঁচাপাট রফতানিস্থল খুলনার দৌলতপুর থেকে ২৩টি দেশে রফতানি বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি ৪৮ জন রফতানিকারক ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। ব্যাংক ঋণের দায়ে রফতানিকারকরা গাঁ ঢাকা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। বলা হয়েছে, বিদেশের বাজারে চাহিদা না থাকায় রফতানি কমেছে।
বাংলাদেশে পাটের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে বলার নেই। একসময় দেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক শক্তি হিসেবে যে কটি খাতকে বিবেচনায় নেয়া হতো তার মধ্যে পাট ছিল অন্যতম। পাটের ব্যাপারটি ছিল বহুমাত্রিক। এটি একদিকে যেমনি কৃষকের জন্য অন্যদিকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকলের কর্মসংস্থানের জন্যই এক বিশাল ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। একসময় স্বর্ণতন্তু হিসেবেই বিবেচিত হতো। সাবেক পাকিস্তান আমল পর্যন্ত পাটের এই বাস্তবতা ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে একশ্রেণীর লুটেরার হাতে পরে সেই যে পাট খাত তার স্থানচ্যুত হলো, আজো পাট সেই মর্যাদায় অসীন হতে পারেনি। এই না পারার পেছনে নানামাত্রিক কারণ কাজ করছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেমনি পাটের বিকল্প ব্যবহার বৃদ্ধি করতে পারেনি, তেমনি দেশিয় বাজারেও  পরিবেশসম্মত এই পণ্যের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে পারেনি। পাটের বিকল্প পলিথিনকে কোন অবস্থাতেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। পাট রফতানিতেও সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা এবং অবস্থান সন্তোষজনক নয়। বাংলাদেশ  জুট অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে বলা হয়েছে ২০১০ সাল পর্যন্ত যেখানে ৪৮টি দেশে কাঁচাপাট রফতানি হয়েছে সেখানে ২০১১ সাল থেকে ২৩টি দেশে রফতানি বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশ পাট রফতানিতে এগিয়ে আসতে শুরু করছে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে- একসময়ে দড়ি, চট, বাজারের ব্যাগ বা বস্তার মতো সস্তা পণ্যের মধ্যে পাটের ব্যবহার সীমিত থাকলেও সেই পাট এখন বিশ্বের নামি-দামি গাড়ী তৈরির কোম্পানী বিএম ডব্লিউর সর্বাধুনিক আইথ্রিডেলেরর ইলেকট্রিক গাড়ীর ভেতরে বক্স বডি ও অন্যান্য উপাদান তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জার্মানীর ভক্সওয়াগন জাপানের নিশান ও টয়োটা গাড়ীর কাঁচামাল হিসেবেও বাংলাদেশের পাটের সমাদর রয়েছে। পাটের শপিং ব্যাগ বাসাবাড়িতে আসবাব সামগ্রী বাগানে ব্যবহৃত শৌখিন সামগ্রী থেকে শুরু করে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, স্যুট, শার্ট-প্যান্ট, চাদর এমনকি ডেনিমও পাট থেকে তৈরি হচ্ছে। সুতরাং এটা বলার অপেক্ষা রাখে না সময়ের পরিবর্তনের সাথে পাটের ব্যবহারেও পরিবর্তন এসেছে। পরিবেশবান্ধব ইতিবাচক এই পরিবর্তনকে  কার্যত এগিয়ে নিতে যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন তা না থাকলে পাটের টিকে ধাকার ব্যাপারটি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশের পাটকে ঘিরে নিকট প্রতিবেশির নানা চক্রান্তের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। একসময়ে বাংলাদেশের পাট দিয়েই তারা তাদের পাটকলগুলো চালু রেখে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পাটের বাজার তারা দখল করতে তৎপর ছিল। বাংলাদেশের উপর দিয়ে তারা প্রায় বিনা শুল্কে পণ্য পরিবহন করলেও বাংলাদেশের পাটজাতে সেখানে যাতে বৈধভাবে ঢুকতে না পারে সেজন্য রয়েছে নানা নন-ট্রেডিশনাল বাধা। তাত্তি¡কভাবে আমরা পাটের নানাদিকে হয়ত এগিয়েছি কিন্তু পাটের প্রাণ যে কৃষক সেই কৃষকের আস্থা অর্জনে আমরা মোটেও সফল হইনি। পাটকে কাজে লাগাবার দুটো পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, দেশে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা। ট্রেডিশনাল ব্যবহারের পরিবর্তে নতুন নতুন ব্যবহারকে কাজে লাগানো। দ্বিতীয়ত, রফতানি বৃদ্ধি করা। এখন দেখা যাচ্ছে কোন কোন পাটজাত পণ্যের রফতানি হয়ত বেড়েছে কিন্তু সামগ্রীকভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাটের চাহিদা কমছে। এটা কোন বিবেচনাতেই ইতিবাচক নয়। আমাদের বৈদেশিক আয়ে ভাটা পড়তে শুরু করছে। রফতানি আয় বাড়ানো না গেলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি কঠিন হয়ে উঠতে পারে। সেজন্যই পাটের উৎপাদন এবং বিপণনের উপর সর্বাধিক নজর দেয়া জরুরি। বাংলাদেশের পাট এখনো বিশ্ববাজারে বিশেষভাবে সমাদ্রিত। দেখা যাচ্ছে, পাটের উপযোগিতা ইতিবাচক ধারায় বৃদ্ধি পেয়েছে। গাড়ীর কাঁচামাল হিসেবে পাটের ব্যবহারের দিকটি নিঃসন্দেহে সম্ভাবনা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এইবাজার যাতে বাংলাদেশের হাত ছাড়া না হয়ে যায় সেদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। পাট সম্পদের ব্যবহারে সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিক হবেন, এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন