Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির একটি শক্তিশালী স্তম্ভ। সেই রেমিট্যান্স যখন হ্রাস পায় তখন উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। গত ক’দিন ধরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাসের খবর প্রকাশিত হচ্ছে। খবরে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ৯৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার। গত পাঁচ বছরে একক কোনো মাসের এটি সর্বনিম্ন। বিগত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১১৩  কোটি ৬২ লাখ ডলার। এই হিসাবে ২০ কোটি ডলার কম এসেছে এবার। শুধু ফেব্রুয়ারিতেই নয়, চলতি বছরের আট মাসেই রেমিট্যান্স আগের বছরের আট মাসের তুলনায় কম এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৭৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের আট মাসে এসেছে ৮১১ কোটি ২৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ এই আট মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ১৭ শতাংশ। রেমিট্যান্সে এমন ধসের কারণে সরকারি মহলেও বিচলন দেখা দিয়েছে। কারণ, অর্থনীতির জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে। অর্থমন্ত্রী স্বয়ং বলেছেন, অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যাওয়া প্রধান। তিনি এর কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, আমাদের  রেমিট্যান্সের বড় অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তেলের দাম বাড়েনি। ফলে তাদের বাজেট ঘাটতি হয়েছে। এ কারণে সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। চাকরিও হারিয়েছে অনেকে। এ কারণে রেমিট্যান্স কমে গেছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, তেলের দাম কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি সঙ্কটে পড়েছে। বাজেট ঘাটতিও হয়েছে। এর প্রভাব বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও কর্মরত বিদেশীদের আয়ে পড়া অসম্ভব বা অস্বাভাবিক নয়। সউদী আরব, আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইন- এই ছ’টি দেশ থেকে বাংলাদেশের মোট রেমিট্যান্সের ৫৮ দশমিক আট শতাংশ আসে। জানা গেছে, এসব দেশ রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে আট মাসে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ।
এই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ কেন এবং কতটা কমেছে। এই সঙ্গে এটাও লক্ষণীয়, রেমিট্যান্স প্রবাহ শুধু মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেই কমেনি, অন্যান্য দেশ থেকেও কমেছে। ১৭ শতাংশ রেমিট্যান্স কেবল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে কমেনি। কাজেই, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বা বাজেট ঘাটতি বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাসের প্রধান কারণ হতে পারে, তবে একমাত্র কারণ নয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, ডলারের বিপরীতে টাকার শক্তিশালী অবস্থান এর একটি কারণ হতে পারে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরো, মালয়েশিয়ান রিংগিত, সিঙ্গাপুর ডলার প্রভৃতি মুদ্রার মূল্যমান কমে যাওয়ায় এসব দেশের বাংলাদেশী শ্রমিকদের আয়ের বিপরীতে বাংলাদেশী টাকা কম পাওয়া যাচ্ছে। কারণ যা-ই থাক এবং তা যত বাস্তব ও যৌক্তিক হোক না কেন, রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারাবাহিক হ্রাস  দেশের অর্থনীতির জন্য একটি অশনি সঙ্কেত। এটিও কম আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। তারপরও রেমিট্যান্স প্রবাহে কাম্য গতিশীলতা আসেনি। কেন আসেনি বা আসছে না সেটা আরো গভীরভাবে খতিয়ে দেখার দাবি রাখে। আরো একটি কথা এই যে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি এতটা অবনত অবস্থায় এসে পৌঁছেনি যে, তারা তাদের উন্নয়ন কর্মকান্ড ¯øথ করেছে কিংবা বন্ধ করে দিয়েছে। বরং খোঁজ নিলে হয়তো দেখা যাবে, তারা অন্যান্য দেশ থেকে ঠিকই জনশক্তি আমদানি করছে। বাংলাদেশ সেখানে নেই কেন, তা যথাযথ বিবেচনার অবকাশ রাখে।
সরকার সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রিজার্ভের অর্থ বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পে কাজে লাগাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রিজার্ভের একটি বড় উৎস রেমিট্যান্স। অন্য উৎস রফতানি আয়। রেমিট্যান্স কমছে। এই সঙ্গে রফতানি আয়ও কমছে। গত ৭ মাসে রফতানি আয় কমেছে ৯৩ কোটি ডলার। এভাবে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় যদি কমতে থাকে তবে রিজার্ভের স্থিতি কমে যেতে বাধ্য। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। সেটা যতদিন না বাড়ছে, ততদিন রিজার্ভের অর্থ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার কতটা সঠিক বা যৌক্তিক হবে, সেটা ভেবে দেখতে হবে। সরকারকে জাতীয় স্বার্থেই রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়ানোর দিকে অগ্রাধিকারভিত্তিক নজর দিতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়ানোর সুযোগ যথেষ্টই রয়েছে। এর পথ হলো, অধিক সংখ্যায় বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাড়ানো। দেশে দক্ষ, অদক্ষ জনশক্তির অভাব নেই, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে এই দু’শ্রেণীর জনশক্তির ব্যাপক চাহিদাও আছে। কম বা অদক্ষ জনশক্তির চাহিদাও কোনো কোনো দেশে রয়েছে। বিভিন্ন দেশের চাহিদা নিরূপণ করে জনশক্তি রফতানির উদ্যোগ নেয়া হলে বিদেশে কর্মসংস্থানই শুধু বাড়বে না, একই সঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়বে। জনশক্তি আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। আমরা লক্ষ্য করেছি, জনশক্তি আমদানিকারক মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যতটা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের উষ্ণতা থাকার কথা, সম্ভবত সে রকম নেই। সে কারণে ওই সব দেশে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি যতটা বাড়ার কথা ততটা বাড়ছে না বরং নানাভাবে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি সরকারের গুরুত্বসহকারে নজরে নেয়া জরুরি। ওই  সব দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার কার্যকর উদ্যোগ-পদক্ষেপ নিতে হবে। উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক বিকাশের স্বার্থে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতেই হবে।



 

Show all comments
  • MOHAMMED ৬ মার্চ, ২০১৭, ৩:০১ পিএম says : 0
    hundi te e taka pathabo. stop bank. parle kichu kor. ........... dol.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন