পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে বহিরাগত দালালদের উৎপাতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতালসহ প্রায় সব সরকারি হাসপাতালে দালাল চক্র এতটাই শক্তিশালী যে তাদের উপেক্ষা করে যথাযথ চিকিৎসা নেয়া রোগীদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে চিকিৎসার আশায় দলাল চক্রের খপ্পরে তাদের পড়তে হচ্ছে। বহির্বিভাগের টিকেট কাটা, বেড পাওয়া থেকে শুরু করে টেস্ট পর্যন্ত সব ক্ষোভ দালাল চক্রের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। তাদের দ্বারস্থ হলে সুচিকিৎসা মেলে, না হলে অবহেলার শিকার হতে হয়। দালালদের অর্থ না দিলে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা পাওয়া এক প্রকার দুর্লভ হয়ে উঠেছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে প্রায় সহস্রাধিক দালাল সক্রিয়। তারা গ্রামাঞ্চল থেকে আসা সহজ-সরল রোগীদের টার্গেট করে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এই অপকর্মে সহায়তা করছে হাসপাতালের স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র ও হাসপাতালের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী। দালাল চক্রের মাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের একটি প্রভাবশালী চক্র বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে রোগীদের তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে চিকিৎসার নামে আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত করছে। চিকিৎসা সেবাকে তারা লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম হাসপাতালগুলোকে দালালমুক্ত করার নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। কোনোভাবেই যেন হাসপাতালগুলোকে দালাল চক্রমুক্ত করা যাচ্ছে না।
বলা হয়ে থাকে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সবচেয়ে ভাল এবং উন্নত চিকিৎসা পাওয়া যায় এবং চিকিৎসা সেবার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। দায়িত্বশীল চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করে, তবে একজন রোগী সুচিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারে। তাকে অধিক অর্থ ব্যয় করে বেসরকারি হাসপাতাল বা দেশের বাইরে যেতে হয় না। এমন চিকিৎসা সুবিধা থাকা সত্তে¡ও শুধুমাত্র অব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসকদের যথাযথ দায়িত্ব পালন না করা ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে যে কেউ গেলেই এ চিত্র দেখতে পাবে। মনে হবে, দালাল চক্র হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে। তাদের ছাড়া যেন চিকিৎসা পাওয়া দুষ্কর। সরকার চিকিৎসা খাতকে উন্নত করার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালালেও একশ্রেণীর চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর উদাসীনতায়, তা হোঁচট খাচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে বহিরাগত অবাঞ্ছিত লোকজন এবং দালাল চক্র। এতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে যথাযথ চিকিৎসা কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি হাসপাতালগুলোর বদনাম ঘোচানো যাচ্ছে না। অথচ সবচেয়ে কম খরচে এসব হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা দেখেছি, হাসপাতালের চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় অনেক বিরল রোগে আক্রান্ত রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছে। আলোচিত বৃক্ষমানবের দুঃসাধ্য অপারেশন এবং সফল চিকিৎসা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই হয়েছে। এমন আরও অনেক দুরারোগ্য চিকিৎসা সফলভাবে সম্পন্ন করার নজির সরকারি হাসপাতালগুলো স্থাপন করেছে। অথচ এসব সাফল্য মøান হয়ে যাচ্ছে, দালাল চক্র ও হাসপাতালের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর অপকর্মের কারণে। রোগীদের স্বল্প খরচে উন্নত মানের চিকিৎসা পাওয়া থেকে তারা বঞ্চিত করছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচের শতকরা ৯৫ ভাগ বহন করে সরকার। আউট ডোরে চিকিৎসা নিতে খরচ হয় ১০ টাকা এবং ভর্তি হতে লাগে ১৫ টাকা। হাসপাতালের ৭০ শতাংশ বেড বিনামূল্যে এবং ৩০ শতাংশ নামমাত্র ভাড়ায় পাওয়া যায়। এছাড়া ডায়াগনোসিস খরচ বাবদ সামান্য ফি দিতে হয়। ভর্তির পর থাকা-খাওয়ার সব ব্যয় সরকার বহন করে। সরকারি হাসপাতালে এমন সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও সাধারণ রোগীরা কেবল দালাল চক্র ও অসাধু চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে যথাযথ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের কারণে মানুষের মধ্যে সরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে বিরূপ ধারণা জন্ম নিচ্ছে এবং তা বছরের পর বছর ধরে চলছে। ফলে অনেক রোগী সহায় সম্বল বিক্রি করে রোগীর চিকিৎসার জন্য হয় ব্যয়বহুল বেসরকারি হাসপাতালমুখী হচ্ছে, নচেৎ পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাচ্ছে। এতে একদিকে রোগীর স্বজনরা যেমন নিঃস্ব হচ্ছে, তেমনি বিপুল অংকের অর্থ বিদেশ চলে যাচ্ছে। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বদনাম হচ্ছে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার।
আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে যে দালাল চক্র এবং তার দোসররা কলুষিত করছে, তাদের যে কোনো উপায়ে নির্মূল করতে হবে। তাদের নেপথ্যে যত শক্তিশালী ব্যক্তিবর্গ থাকুক না কেন, তাদের প্রতিহত করতে হবে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে একটি ক্ষুদ্র অংশ ছিনিমিনি খেলবে, তা হতে পারে না। সব সরকারি হাসপাতালে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত একজন রোগী যাতে উৎপাতহীন ও নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসা সেবা পায়, এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশের বাইরে থেকেও যাতে রোগী এসে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে পারে, এ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। হাসপাতালকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অবৈধ বাণিজ্যিক চক্র গড়ে উঠতে না পারে, এ ব্যাপারে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিনিয়ত হাসপাতালগুলোতে মনিটরিংয়ের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোনো ধরনের অনিয়ম ও অবহেলা পরিলক্ষিত হলে দায়ী ব্যক্তিদের আইনানুগ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।