Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিউটি পার্লারে অভিযান প্রসঙ্গে

| প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের কূটনৈতিক জোনে কয়েকটি বিউটি পার্লারে কথিত অভিযানের নামে সম্ভ্রান্ত ও অভিজাত নারীদের হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার গুলশান ২-এর ৬৫ নম্বর রোডে অবস্থিত ৫-৬টি বিউটি পার্লারে কথিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের নামে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা হঠাৎ জোরপূর্বক ঢুকে পড়লে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই অভিজাত এসব বিউটি পার্লারের বিনিয়োগ এবং কাস্টমার উভয়েই উচ্চশিক্ষিত, উচ্চবিত্তের দেশি-বিদেশি নারীরা যুক্ত থাকেন। বিউটি পার্লারের মত স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে যে সব নিয়ম-কানুন ও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, আলোচ্য ক্ষেত্রে তার কিছুই পরিলক্ষিত হয়নি। মহিলা পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াই কথিত অভিযানের নামে কয়েক ঘণ্টার তল্লাশি চালিয়ে বেআইনী কোন কিছু উদঘাটন করতে না পারলেও বিউটি পার্লারে আগত নারী ক্লায়েন্ট, কর্মী ও কর্মকর্তারা অশ্লীল ও অভব্য আচরণের শিকার হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গেছে, গুলশানে কথিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং গুলশান থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কিছুই জানেন না।
বিউটি পার্লারগুলো সিটি কর্পোরেশন থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে। কারো বিরুদ্ধে কোন রকম অভিযোগ থাকলে আগে নোটিশ পাঠানো হয় এবং নিয়ম মেনে অভিযান পরিচালনা করা হয়। মঙ্গলবারের কথিত অভিযানে এসব কোনটিই ঘটেনি। সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষও এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করার বিষয়টি অস্বীকার করায় সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে কারা এই অভিযান পরিচালনা করল? বিশেষত, কূটনৈতিক জোনে এ ধরনের রহস্যজনক ও অনাকাক্সিক্ষত অভিযানের ঘটনা কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং ভুক্তভোগীরা বলেছেন, হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী ঘটনার পর নানা ধরনের নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও উচ্ছেদ অভিযানের কারণে এমনিতেই গুলশান-বনানী এলাকায় সব ধরনের ব্যবসায়-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকা- স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষত, রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় ধস নামার পাশাপাশি ব্যস্ত নাগরিক জীবনে অভিজাত নারী মহলের সৌন্দর্য ও রূপচর্চার অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে বিউটি পার্লারের মত পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলোও কোনমতে টিকে আছে। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে গুলশান এলাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের পর রাস্তার মোড়ে মোড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ নিরাপত্তামূলক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে সিটি কর্র্পোরেশন এবং পুলিশ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিউটি পার্লারে অভিযানের নামে তা-বের ঘটনায় গুলশান এলাকার নিরাপত্তা ও নজরদারি ব্যবস্থায় বড় ধরনের দুর্বলতা প্রকাশিত হল।
সংসদে বক্তৃতা করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ছদ্মবেশী ভুয়া পুলিশ সদস্যরা নানা অপরাধ করছে। বিভিন্ন ধরনের অপরাধের দায়ে গত ৫ বছরে ৫০৪ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অপরাধী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে গৃহীত বিভাগীয় শাস্তি পুলিশের অপরাধ দমনে তেমন কোন কার্যকর ভূমিকা রাখছেনা বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অক্ষমতা বা দুর্বলতা যা’ই থাক, শহরের অভিজাত ও কূটনৈতিক পাড়ার বিউটি পার্লারে কথিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের নামে বেনামি বা পোশাকধারীদের তৎপরতা খুবই উদ্বেগের বিষয়। শহরের শত শত স্পটে প্রতিদিন মাদক কেনাবেচা, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- সংঘটিত হচ্ছে। সে সব স্থানে গোয়েন্দা তৎপরতা বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনার খবর খুব কদাচিৎ ঘটলেও গুলশান এলাকায় সম্ভ্রান্ত ও বিদেশি নারীদের গন্তব্যস্থল হিসেবে পরিগণিত বিউটি পার্লারে কোন নারী পুলিশ ছাড়াই ত্রাস সৃষ্টিকারী বেপরোয়া অভিযান কারা কি কারণে সংঘটিত করল তা’ খুঁজে বের করতে হবে। বিশেষত, সিটি কর্পোরেশন এবং পুলিশ প্রশাসন এ ধরনের অভিযান পরিচালনার বিষয়টিকে অস্বীকার করার পর গুলশান এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সংশয় ও আস্থাহীনতা বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নামে সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও নারীদের মানহানি, অসৌজন্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বাস্তবতা দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে যেমন নতুনভাবে প্রশ্ন উঠবে, তেমনি এসব ঘটনা দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ে চলমান নেতিবাচক প্রবণতা ও সংকটকে আরো বাড়িয়ে তুলবে। মঙ্গলবার গুলশানের বিউটি পার্লারে কারা কেন অভিযান পরিচালনা করেছে সামগ্রিক নিরাপত্তার স্বার্থেই তা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন