পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দীর্ঘদিন ধরেই দেশে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ ও গুম-খুনের ঘটনা বেড়ে চলেছে। বিশেষত, রাজধানী ঢাকায় ক্রমবর্ধমান গুম-অপহরণের মত ঘটনা ঠেকাতে ডিএমপি’র পক্ষ থেকে একটি বিশেষ স্কোয়াড গঠন করা হয়েছিল আরো প্রায় ৩ বছর আগে। ডিএমপি’র এই উদ্যোগ জনমনে কিছুটা আশার সঞ্চার করলেও সেই স্কোয়াডের তৎপরতা বা কৃতিত্ব তেমন দৃশ্যমান হয়নি। এমনকি অপরাধের মাত্রাও কমেনি। বরং আগের চেয়ে বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুসারে, রাজধানীতে গড়ে প্রতি ৩দিনে একজন মানুষ অপহরণের শিকার হচ্ছেন। অপহৃত হওয়ার পর কোন কোন ক্ষেত্রে মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্তি পাওয়ার নজির থাকলেও ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে মুখ খুলতে চায় না। ঢাকার আশপাশে সাভার-আশুলিয়ার বেড়িবাঁধসহ কয়েকটি স্পটে প্রায়শ যে সব মানুষের গুলিবিদ্ধ, গলাকাটা বা হাত-পা বাঁধা বেওয়ারিশ লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়, পরবর্তীতে তাদের অনেকেই অপহরণের শিকার হওয়ার তথ্য জানা যায়। বিশেষত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ উত্থাপনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তা’ অস্বীকার করার ঘটনা বিস্তর। এ ধরনের ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো মামলা করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে এবং সহযোগিতা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর কর্মকর্তার অনীহা প্রকাশেরও অভিযোগ রয়েছে।
গুম-অপহরণ বন্ধে পুলিশের কথিত বিশেষ স্কোয়াডের সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ হলেও সাম্প্রতিক সময়ে চাঞ্চল্যকর অপরাধের তদন্তে এলিট ফোর্স র্যাবের সাফল্য জনমনে কিছুটা আশার সঞ্চার করেছে। গত ৭ জানুয়ারী কালিয়াকৈর উপজেলার নীট প্লাস গার্মেন্ট ফ্যাক্টরীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি করে সাড়ে ৩ কোটি টাকা এবং ২৫ হাজার ইউএস ডলার নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পরের দিন কোম্পানীর পক্ষ থেকে কালিয়াকৈর থানায় মামলা করেন কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মামলার ছায়া তদন্ত করে অপরাধীদের শনাক্ত করে দেশের বিভিন্ন স্থানে একযোগে অভিযান চালিয়ে ডাকাতচক্রের ৬ সদস্যকে ধরতে সক্ষম হয়েছে র্যাব। তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র, নগদ প্রায় দেড়কোটি টাকা, ডলার এবং তাদের ক্রয় করা ট্রাক ও গার্মেন্ট ফ্যাক্টরীর সরঞ্জামও আটক করেছে র্যাব। গত সোমবার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ডাকাত দলের কয়েকজন সদস্য ভুয়া নাম, পরিচয় ও আইডি কার্ড ব্যবহার করে সিকিউরিটি কোম্পানীতে চাকুরী নিয়ে উক্ত গার্মেন্ট ফ্যাক্টরীতে ডিউটি করার নামে ডাকাতির জন্য সুবিধাজনক সময়ের অপেক্ষা করছিল। এই চক্রের সদস্যরা ইতিপূর্বে ২০১৫ সালে বাড্ডার সমশের গার্মেন্ট ফ্যাক্টরীতে ডাকাতি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুণ্ঠন করেছিল। অর্থাৎ একেকটি ডাকাতদল, ছিনতাই-অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা বার বার একই ধরনের অপরাধ করে চলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অল্পদিনের মধ্যেই এদেরকে শায়েস্তা করা অসম্ভব নয়। র্যাবের এই অভিযান তা আবারো প্রমাণ করল।
জঙ্গিবাদ দমন এবং জননিরাপত্তার স্বার্থে বর্তমান সরকার নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছে। মোবাইল ফোনের কোটি কোটি সিম নিবন্ধন, স্মার্ট আইডি কার্ড প্রকল্পসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু কিছু উদ্যোগে জনমনে নেতিবাচক প্রভাবও দেখা গেছে। তবে নিরাপত্তা ও অপরাধ দমনের স্বার্থে জনগণ এসব ব্যবস্থা মেনে নিতে বাধ্য হলেও বাস্তবে তার ইতিবাচক ফলাফল এখনো দেখা যাচ্ছে না। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য কার্যকর উদ্যোগও পরিলক্ষিত হয়নি। যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্য ভয়ঙ্কর সব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বছরে এমন হাজার হাজার অপরাধী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি হলেও অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন না হওয়ার মূলে রয়েছে গুরু পাপে লঘুদ-। নারায়ণগঞ্জের আদালত এলাকা থেকে সাতজনকে অপহরণের পর খুনের মামলায় অপরাধী র্যাব সদস্যদের সর্বোচ্চ শাস্তি হলেও এখনো শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই প্রতি ৩ দিনে একজন অপহরণের শিকার হচ্ছে। খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে এ ধরনের অনেক অপরাধ সংঘটিত হলেও পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এই চক্রটিকে কেন শনাক্ত করতে পারছে না জনমনে তা নানা ধরনের সন্দেহের উদ্রেক করছে। এসব নিরাপত্তাহীনতার কারণে ব্যবসায়-বাণিজ্য ও শিল্প বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে। এ কথা সত্য যে, পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে প্রতিটি বাড়ি বা কলকারখানায় পাহারা বসানো সম্ভব নয়। তবে অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীদের ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব। পুলিশের মধ্যে যেমন অপরাধী সদস্য রয়েছে, তেমনি বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানীর সদস্য বা গার্ডদের মধ্যেও ডাকাতদল ও অপরাধীচক্রের সদস্যরা ঘাপটি মেরে থাকছে। তারা ভুয়া আইডি কার্ড ও নাম পরিচয় ব্যবহার করছে। অতএব, সিকিউরিটি কোম্পানীগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ এসব কোম্পানীর কর্মকা-ের উপর নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।